যে কারণে ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ
বাংলাদেশে ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
চলতি বছরে শুধু ডিসেম্বরে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ২৭১ জন এবং মারা গেছেন ১৮ জন।
২০২১ সালে শুধু ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ২০৭ জন এবং মারা যান ৭ জন।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে ২৩১ জন আক্রান্ত হলেও কেউ মারা যাননি।
২০১৯ সালে দেশে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে সে বছর শুধু ডিসেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ২৪৭ জন এবং কেউ মারা যাননি।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, সঠিক সময়ে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় এবং তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে এ বছর ডিসেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি।
কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এডিস মশা বেঁচে থাকার জন্য যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা প্রয়োজন, তা এখনো অনুকূলে। এখনো শীত তেমন না পড়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আছে। তবে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবে।'
আগামী বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, 'শীতের কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার পর সিটি করপোরেশন যদি কাজ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আগামী বছর ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সিটি করপোরেশনের যেসব কাজ করা দরকার, তা তেমনভাবে না করায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অক্টোবরে বৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া তাপমাত্রা অনুকূলে থাকায় এডিস মশার ঘনত্ব রয়ে গেছে, মশা তেমনভাবে কমেনি। শীত অনেক দেরিতে আসছে। এসব কারণে ডিসেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি।'
তিনি বলেন, 'রাজধানীতে অনেক নির্মাণ কাজ হচ্ছে। এসব জায়গায় পানি জমে থাকে। সিটি করপোরেশনগুলো লোক দেখানো কিছু কাজ করে। তারা যে ক্রাশ কর্মসূচী চালায়, এগুলো তেমন কার্যকর না। কারণ এগুলো ধারাবাহিকভাবে করা হয় না। ডেঙ্গুর যে হটস্পট তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ওই সব এলাকা চিহ্নিত করতে পারলে মশা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকতো। সংক্রমণ বন্ধ করতে পারলে প্রকোপ এত বেশি হতো না।'
ডেঙ্গু আমাদের দেশে সারা বছর স্থায়ী হতে পারে জানিয়ে খলিলুর রহমান বলেন, 'যখন সংক্রমণের হারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়, গণমাধ্যমে লেখালেখি বেশি হয়, তখন সিটি করপোরেশনের তৎপরতা দেখা যায়। তার আগে তারা তেমন কাজ করে না। সারা বছর কাজ না করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না।'
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের উপদেষ্টা কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এডিস মশার আচরণগত পরিবর্তন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আচরণগত পরিবর্তনের কারণে এডিস মশা যেকোনো পানিতে ডিম পাড়তে পারে। আমাদের দেশের তাপমাত্রায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এখন ডিসেম্বরের শেষ দিকে এসেও আমরা দেখছি তাপমাত্রা তেমন একটা কমেনি এবং এই তাপমাত্রা মশার প্রজননের জন্য উপযোগী। যার ফলে ডিসেম্বর মাসেও রোগী বেশি।'
'আমরা মাঠ পর্যায় গিয়ে মশার বংশবিস্তারের কয়েকটি কারণ পেয়েছি। তা হলো, অনেকে বাড়ির গ্যারেজে গাড়ি ধোয়ার পর সেই পানি নিচু জায়গায় জমে থাকে। সেখানে মশার বংশবিস্তার হয়। রাজধানীতে অনেক নির্মাণ কাজ চলছে, তাছাড়া দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণ প্রকল্প চলছে। এসব জায়গায় সাধারণত কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এসব জায়গায় মশার প্রজনন হচ্ছে। এসব কারণেই মূলত ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েই গেছে। তবে শীত বাড়তে থাকলে প্রকোপ কমবে,' কবিরুল বাশার যোগ করেন।
Comments