একদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ, অন্যদিকে পানিবাহিত রোগ ও ভাইরাল জ্বর

ডেঙ্গু মোকাবিলায় জন সচেতনতায় লিফলেট বিলি করছেন একজন স্বেচ্ছাসেবক। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রিং রোড এলাকা থেকে তোলা ছবি: ছবি: প্রবীর দাশ

ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলায় দেশের স্বাস্থ্যসেবা যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন অন্যান্য ভাইরাল জ্বর ও পানিবাহিত রোগ পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।

বাইরে থেকে পানি ও তরল খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, এগুলো কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, অ্যামেবিয়াসিস, হেপাটাইটিস এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের মতো পানিবাহিত রোগের উৎস হতে পারে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশিদ-উন-নবী বলেন, তাদের আউটডোর রোগীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই জ্বর নিয়ে আসছেন, যাদের বেশিরভাগই ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন কিছুটা কমলেও অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের রোগী বেশি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশের ডেঙ্গু ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা এবং পানিবাহিত রোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগী ডেঙ্গু ছাড়াও এবং নিউমোনিয়া, টাইফয়েড বা মূত্রনালীর সংক্রমণের মতো অন্যান্য রোগে আক্রান্ত।

এই রোগীরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার, বলেন তিনি।

ডেঙ্গু রোগী এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ না হলে কোইনফেকশন (একাধিক সংক্রমন) সন্দেহ করা হয়। সেক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে যোগ করেন নাজমুল আহসান।

এদিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরীতে অন্তত ৯ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এ নিয়ে ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৫ জন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ২৪ জনে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক শারমিন ইসলাম বীথি বলেন, প্রতিদিন আসা রোগীদের ৭০ শতাংশ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও টাইফয়েডের রোগীও রয়েছে।

তবে শারীরিক জটিলতা না থাকলে হাসপাতালে সাধারণত টাইফয়েড রোগী ভর্তি করা হয় না।

এম আর খান শিশু হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন এক বছর বয়সী ডেঙ্গু রোগী আব্দুর রহমানের বাবা মনির হোসেন জানান, তার ছেলে প্রথমে ডেঙ্গু ভাইরাসে এবং পরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।

এম আর খান হাসপাতালের একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে আসাদের মধ্যে তারা মাসে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন টাইফয়েড রোগী পান।

ডা. নাজমুল আরও বলেন, রোগীদের, বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের, বমি বমি ভাব, কাশি বা গলাব্যথার সাথে ১০৩-১০৫ ডিগ্রি জ্বর থাকে।

নাজমুল বলেন, যাদের সর্দি, কাশি বা গলা ব্যথা নেই কিন্তু শরীরে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখ ও পিঠে ব্যথাসহ জ্বর ও বমি বমি ভাব রয়েছে তাদের ডেঙ্গু রোগী হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আলাদা। প্রত্যেক শিশুর যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা বা জ্বর আছে তাদের এনএসআই পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে। শিশুদের ডেঙ্গু শনাক্ত করার জন্য বমি বমি ভাব, গলা ব্যথা বা নাক দিয়ে পানি পড়া বাধ্যতামূলক নয়।

নাজমুল বলেন, যেহেতু মানুষজনকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, তাই অনেকে বাইরে থেকে আখের রসের মতো জুস খাচ্ছেন যা তাদের পানিবাহিত রোগে সংক্রমিত করছে।

তাই বাইরে থেকে এ ধরনের খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Tariffs, weak confidence heighten risks for Islamic banks

The global ratings agency said weak solvency of the banks, compounded by poor governance, is eroding depositor confidence, and this, in turn, will limit their growth.

9h ago