ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব রোধে এখনও প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি

অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে আবারো প্রাণঘাতী পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা

এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা রেকর্ড ছাড়ালেও কর্তৃপক্ষ এ থেকে কার্যত কোনো শিক্ষা নেয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বছর বর্ষা মৌসুমে মশাবাহিত রোগের আরেকটি প্রাণঘাতী প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকারি সংস্থাগুলো এখনও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি।

এ বছর যা ঘটেছে তা বিবেচনা করে তারা বলছেন, শুরু থেকেই যথাযথ পরিকল্পনা ও কার্যকর নজরদারি না থাকলে ২০২৪ সালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

কীটতত্ত্ববিদ জি এম সাইফুর রহমানের মতে, কার্যকর নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কর্তৃপক্ষ কিনছে বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি বলেন, 'তারা সম্ভবত একই পুরোনো পদ্ধতি অনুসরণ করবে যা কার্যকর নয়।'

গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এ বছর ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী তাদের মধ্যে ১ হাজার ৬৯২ জন মারা গেছেন।

সাইফুর রহমান বলেন, এই তথ্য প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত করে না। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্য নথিবদ্ধ হয়নি।
কোনো ঘটনা কেবল তখনই রেকর্ড করা হয় যখন কোনো ব্যক্তি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তথ্য পাঠানো ১৩৮টি হাসপাতালের একটিতে চিকিৎসা নেন। দেশের বাকি প্রায় ১৬ হাজার হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠায় না।

সাইফুর রহমান আরও বলেন, ডেঙ্গু অনেক দেশে একটি রিপোর্টযোগ্য রোগ, যার অর্থ প্রত্যেক রোগীর ডেটা রেকর্ড করা হয়।

কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর এ চৌধুরী বলেন, রোগীর সঠিক সংখ্যা, তাদের অবস্থান এবং সেরোটাইপ বা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্যের অনুপস্থিতিতে ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি কার্যকর হবে না।

'তথ্য ছাড়া মশা নিধন এবং ক্লাস্টারে লার্ভা নির্মূল করা সম্ভব নয়,' যোগ করেন তিনি।

সরকারের উচিত জানুয়ারি থেকেই নজরদারি শুরু করা। তিনি বলেন, 'তারা যদি এই মৌসুমে এটি শুরু করে তাহলে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি কমাতে পারবে।'

তিনি আল্ট্রা-লো ভলিউম মেশিনের মতো ডিভাইস ব্যবহার করার পরামর্শ দেন যা মিস্টের মতো বাতাসে কীটনাশক স্প্রে করে।

তিনি আরও বলেন, ব্যবস্থাপনা দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত না হলে শুধুমাত্র আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।

মশার প্রজননক্ষেত্রের সংখ্যা কমাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যোগ করেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার সুপারিশ করেন যে, সরকার এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের উপায় এবং কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে তার রূপরেখা দিয়ে একটি জাতীয় পরিকল্পনা তৈরি করে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচিত সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তিনি যোগ করেন।

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী মুহম্মদ তাজুল ইসলামও আবারো ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন।

তিনি বলেন, 'জানুয়ারিতে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করবো। কিন্তু সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে এ সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সবাইকে, বিশেষ করে বাসিন্দাদের এগিয়ে আসতে হবে।

এডিসের প্রজননক্ষেত্র প্রধানত বাসা-বাড়ি, ছাদ এবং প্রাঙ্গণে হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ প্রধানত বাড়ির বাইরে মশাবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে, কিন্তু মশা সাধারণত ঘরের ভেতরেই থাকে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সারা বছর এডিস মশার ঘনত্ব সম্পর্কে জরিপ চালাতে সিটি করপোরেশন কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ১০ জন কীটতত্ত্ববিদ চেয়েছিল।

'তবে জাতীয় নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয়ের কারণে ফেব্রুয়ারির আগে কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে কাজ শুরু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না,' বলেন তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, 'করপোরেশন সচেতনতামূলক প্রচারণার ওপর জোর দিচ্ছে এবং আগামী বছরের পরিকল্পনা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।'

Comments