চিকুনগুনিয়া যেভাবে ছড়ায়, উপসর্গ, করণীয়

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত রোগ। মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়ায়। ১৯৫২ সালে তানজানিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সর্বপ্রথম এই রোগ ছড়ানোর কথা জানা যায়। সেখানকার কিমাকোন্ডি ভাষা থেকে চিকুনগুনিয়া নামটি এসেছে। স্থানীয়ভাবে এর অর্থ হলো 'মোচড়ানো'। রোগীর শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় এই রোগের এমন নাম হয়েছে।

উপসর্গ

জীবাণুবাহী মশা কামড়ানোর চার থেকে সাত দিনের মধ্যে দেহে চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ দেখা যায়। এটি হলে সাধারণত হঠাৎ করে তীব্র জ্বর (১০৪° ফারেনহাইট) হয়। সেই সঙ্গে শরীরের অস্থি সন্ধিতেও ব্যথা অনুভূত হয়। চিকুনগুনিয়ার আরও যেসব লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে, মাংস পেশি ও মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি ও চামড়ায় ফুসকুড়ি। অস্থি সন্ধির ব্যথা খুব তীব্র হতে পারে যা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

অধিকাংশ চিকুনগুনিয়া রোগীই পুরোপুরি সেরে উঠেন। তবে অস্থি সন্ধিতে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার খবর পাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে চোখ, হৃদপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইন্টেসটাইনাল সমস্যার ঘটনাও ঘটে। চিকুনগুনিয়া জটিল আকার ধারণ করার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। তবে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বিরল পরিস্থিতিতে এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

সাধারণত দুই থেকে তিন দিনেই রোগী সুস্থ হতে শুরু করে। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস থাকে। এ সময়ের মধ্যে রোগীকে মশা কামড়ালে সেটিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ও অন্য মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়।

ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার উপসর্গে মিল লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে যেসব এলাকায় সচরাচর ডেঙ্গু হানা দেয় সেখানে চিকুনগুনিয়াকে ডেঙ্গু বলে ভুল হতে পারে। রক্তের সিরাম পরীক্ষা করে চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। জীবনে একবার এই রোগ হলে পরবর্তীতে আর হয় না।

যেভাবে চিকুনগুনিয়া ছড়ায়

চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসবাহী মেয়ে মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে এই রোগটি ছড়ায়। সাধারণত দুই জাতের এডিস মশা চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস বহন করে। ডেঙ্গু জ্বরের জন্যও এডিস মশাকে দায়ী করা হয়।

রোগ নির্ণয়

চিকুনগুনিয়া নির্ণয়ের বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। রক্তের সিরামে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম অ্যান্টি-চিকুনগুনিয়া অ্যান্টিবডির উপস্থিতিই চিকুনগুনিয়ার প্রমাণ।

চিকিৎসা

চিকুনগুনিয়ার কোন সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। সাধারণত উপসর্গ দেখে ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাণিজ্যিকভাবে চিকুনগুনিয়ার কোন প্রতিষেধক টিকা পাওয়া যায় না।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে এর বাহক মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। জমে থাকা পানিতে মশা বংশ বিস্তার করে। তাই খোলা পাত্রে যেন পানি না জমে থাকে সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়লে ঘরে মশানাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

এডিস মশা সাধারণত দিনে কামড়ায়। তাই দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরা উচিত। দিনের বেলা ঘুমালেও মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশার কয়েল বা ভ্যাপোরাইজার এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

Comments

The Daily Star  | English
monetary policy

Can monetary policy rescue the economy?

The question remains whether this policy can rescue the economy from the doldrums and place it firmly on the path of vibrancy.

8h ago