সিলেটে বেড়াতে যাচ্ছেন, সাতকরা কিনতে ভুলবেন না
এবারের ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে সিলেট বেড়াতে যাচ্ছেন? তাহলে ফেরার পথে কেনাকাটার তালিকায় সিলেটের বিখ্যাত সাতকরা যোগ করতে ভুলবেন না।
এই অনন্য টক ও সুগন্ধি লেবু জাতীয় ফলটি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী রসনা বিলাসের একটি অন্যতম উপাদান।
অন্যান্য লেবু জাতীয় ফলের মতো সাতকরা কাঁচা খাওয়া যায় না। তবে গরু বা খাসির মাংস, বোয়াল মাছ কিংবা ডাল রান্না করা হয় সাতকরা দিয়ে।
তবে জানা দরকার যে কেন এই অনন্য ফলটির স্বাদ আস্বাদন করতে হবে কিংবা কীভাবে সাতকরা রান্না করা হয়।
সাতকরা কী?
সাতকরা একটি গোলাকৃতির কমলা লেবুর মতো দেখতে লেবু জাতীয় ফল যা বৃহত্তর সিলেট এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলের স্থানীয়।
সাতকরার বৈজ্ঞানিক নাম 'Citrus macroptera Montrouz var annamensis Tanaka' এবং ফলটির আকৃতি প্রায় ৬-১০ সেমি।
সাতকরা গাছ উচ্চতায় ২-৩ মিটার হয় এবং প্রস্থ ২-৪ মিটার। ফলের রং প্রথমে সবুজ এবং পেকে সবুজাভ হলুদ হয়।
সাতকরার প্রাকৃতিক ফলন সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে। কিন্তু ব্যাপক চাহিদার কারণে সারাবছরই হিমাগারে সংরক্ষণ করে এটি বাজারে বিক্রি করা হয়।
সাতকরা ফলের পুরু খোসাই একমাত্র অংশ যা ভোজ্য এবং খাওয়ার আগে ভেতরের শাঁস ও বীজ অবশ্যই ফেলে দিতে হয়।
কোথা থেকে কিনবেন এবং দাম কেমন?
সাতকরা বেশিরভাগই বিক্রি হয় সিলেট শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে এবং কিছু জনপ্রিয় পর্যটন স্পটের দোকানপাটে।
অন্যান্য এলাকার তুলনায় নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা তুলনামূলক ভালো মানের সাতকরা বিক্রি করেন।
যেহেতু এই ঈদ-উল-ফিতর সাতকরার মৌসুম নয়, তাই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের তুলনায় এখন দাম কিছুটা বেশি।
বর্তমানে ভালো মানের সাতকরা প্রতি পিস ৫০-১০০ টাকা দরে কিনতে পারবেন। তবে দাম মূলত নির্ভর করে সাতকরার মান, আর তার থেকেও বেশি আপনার দর কষাকষির ক্ষমতার ওপর।
যেভাবে চিনবেন ভালো সাতকরা
সাতকরা যদি ভালো মানের না হয়, তাহলে রান্না করে স্বাদ পাওয়া যায় না। আর তাই সিলেটের প্রবীণ গৃহিনী ফজিলাতুন্নেসা চৌধুরী কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
তার মতে, সাতকরা কেনার সময় হলুদ-সবুজ রঙের ও মসৃণ ত্বক দেখে কিনতে হবে। কেনার সময় একটার পর একটা সাতকরা হাতে নিয়ে একটার সঙ্গে আরেকটার ওজনের তারতম্য বিবেচনা করে সবচেয়ে ভারীগুলো কিনতে হবে। ভারী সাতকরার খোসা মোটা হবে এবং ভারী খোসা রান্নার জন্য সেরা।
এছাড়াও যতটা সম্ভব কালো বা বাদামী দাগহীন, কিংবা যতটা সম্ভব কম দাগযুক্ত সাতকরা পাওয়া যায়, সেগুলো কেনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
যেভাবে রান্না করবেন?
সাতকরা রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে ত্বকের কালো বা বাদামী দাগ থাকলে তা পাতলা করে চেঁছে তুলে ফেলার পরামর্শ ফজিলাতুন্নেছার।
তারপর সাতকরা টুকরো করে ভেতরের রসসহ আঁশ ও বিচি কেটে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, সাতকরার শুধু খোসাটাই খাওয়া হয়।
সাতকরা মূলত মাংস, মাছ, ডাল হিসেবে রান্না করা হয় এবং এটি আচার করেও খাওয়া যায়। চার রকমের রান্নায় সহায়ক হিসেবে ফজিলাতুন্নেসা কয়েকটি রেসিপিও দিয়েছেন।
সাতকরা দিয়ে গরু বা খাসির মাংস: সাধারণত গরু বা খাসির মাংসের ভুনা যেভাবে রান্না হয়, সেভাবেই মেরিনেট করে রান্না শুরু করত হবে। মাংস কষানোর সময় অর্ধেকটা সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে আগে থেকে টুকরো করে রান্না সাতকরা দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ও ঢাকনা লাগিয়ে মাংস পুরোপুরি সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না চালিয়ে যেতে হবে।
সাতকরা দিয়ে বোয়াল মাছ: প্রথমে মাছ হালকা ভেজে তুলে রাখুন। পেঁয়াজ-রসুন ও অন্যান্য মসলা দিয়ে যেভাবে বোয়াল মাছ ভুনার জন্য গ্রেভি তৈরি করা হয়, সেখানে গ্রেভি তৈরি করে তাতে সাতকরার টুকরো দিয়ে দিন। কষিয়ে প্রায় সিদ্ধ হয়ে এলে ভাজা মাছ দিন এবং সামান্য কষিয়ে পরিমিত পানি দিয়ে ঢেকে দিন। কিছুক্ষণ পর সাতকরা পুরোপুরি রান্না হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।
সাতকরার ডাল: মসুর ডাল রান্নার সাধারণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন এবং রান্নার শুরুতে ডালের সঙ্গে সাতকরা দিয়ে দিন। ডাল ও সাতকরা সিদ্ধ হয়ে এলে সাতকরা আলাদা করে তুলে ফেলুন। তারপর পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ ও পাঁচফোড়ন দিয়ে বাগাড় দিয়ে আবারও তুলে রাখা সাতকরার টুকরোগুলো দিয়ে দিন।
সাতকরার আচার: একটি পাত্রে সরিষার তেল গরম কর তাতে আস্ত রসুন ও কাটা আদা দিন। রসুন ও আদা সিদ্ধ হয়ে এলে সাতকরার টুকরো দিয়ে পরিমাণমতো লবণ ছড়িয়ে দিনে ও কষাতে থাকুন। সাতকরা তেলে ভাজা ভাজা হয়ে সিদ্ধ হয়ে এলে সামান্য সাদা ভিনেগার দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নামিয়ে ফেলুন। ঠাণ্ডা হলে কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
Comments