শিশু ওয়ার্ডে এক শয্যায় তিন রোগী

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড, করিডোর, বারান্দাসহ সব জায়গায় রোগী ভর্তি
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় একই বেডে একাধিক রোগী রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: স্টার

তীব্র তাপদাহে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে একই শয্যায় একাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাপদাহে এমনিতেই রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই তার ওপর শয্যা সংকট রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড, করিডোর, বারান্দাসহ সব জায়গায় রোগী ভর্তি। গতকাল শনিবার হাসপাতালটিতে ৫৮৯ জন রোগী ভর্তি ছিল। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। অধিকাংশ শয্যায় তিন জন করে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গত ১ সপ্তাহে নতুন করে শতাধিক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়াও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২৩৫ জন।

গতকাল ২৪ ঘণ্টায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২০ জন এবং ডায়রিয়ায় ভর্তি হয়েছে ৪০ জন।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি শিশুকে একই শয্যায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত পাঁচ দিন ধরে এ অবস্থা চলছে বলে জানান রোগীর পরিবার।

শিশু জান্নাতির মা রাশিদা বেগম জানান, আমার মেয়ে কয়েকদিন ধরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তাকে দু'দিন ধরে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেড পাইনি। আরও দুই শিশু রোগীর সঙ্গে একই বেডে থাকতে হচ্ছে।

এদিকে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এ  হাসপাতালটির বারান্দাসহ ওয়ার্ডের ২৩ বেডের বিপরীতে বিভিন্ন ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭০ জন রোগী। শয্যা সংকটের কারণে এ ওয়ার্ডেও চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রোগী ও স্বজনেরা।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. অহিদুজ্জামান শামীম বলেন, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পরিবেশ একেবারেই খারাপ। প্রতি শয্যায় তিন জন করে রোগী, ৪৮টি বেডের বিপরীতে আজ (শনিবার) ১৪০ জনের বেশি রোগী ভর্তি আছে। এ অবস্থায় শিশুরাও ভালোভাবে থাকতে পারে না আর তাদের মায়েরাও বসতে পারে না শয্যায়। এ অবস্থায়  চিকিৎসা সেবা দিয়ে রোগী কিংবা তাদের স্বজনদের সন্তুষ্ট করার সুযোগ নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সেবা দেয়ার জন্য কিন্তু পরিবেশ অনুকূলে নেই। শিশু ওয়ার্ডের মধ্যে গরম গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে, মাঝে মাঝে বিদুৎ যায় তখন অবস্থা আরও খারাপ হয়। 

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে জেলার ৭টি উপজেলা ও পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯১৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন এবং জেলায় গত একমাসে এ সংখ্যা ৩ হাজার ২১৮ জন।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন জানান, এ বছর প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে ডায়রিয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ ৪৭ জন আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়। আমাদের খাবার স্যালাইনসহ পুশিং স্যালাইনের কোনো ঘাটতি নেই। শুধুমাত্র বেডের সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে রোগীদের রাখতে হচ্ছে।

Comments