লালমনিরহাট

একদিনও ব্যবহার হয়নি ভারতের দেওয়া ‘লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স’, নষ্ট হচ্ছে অযত্নে

প্রায় দুই বছর আগে অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালে আনা হলেও তা কখনো ব্যবহার করা হয়নি। অ্যাম্বুলেন্সটির ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ার অভিযোগও আছে।
ভারতের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্স
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ভারতের দেওয়া উপহারের ‘লাইফ সাপোর্ট’ অ্যাম্বুলেন্স। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে ভারতের দেওয়া উপহারের 'লাইফ সাপোর্ট' অ্যাম্বুলেন্স।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অ্যাম্বুলেন্সটি একদিনের জন্যেও ব্যবহার করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।

প্রায় দুই বছর আগে অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালে আনা হলেও তা কখনো ব্যবহার করা হয়নি। অ্যাম্বুলেন্সটির ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ার অভিযোগও আছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, চালক সংকটের কারণে অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার কারা যায়নি।

হাসপাতাল সূত্র জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২১ সালের ২৬ ও ২৭ মার্চ দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। সে সময় স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন ও তৎকালীন করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি ১০৯টি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫ দফায় সবগুলো অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে আনা হয়।

এরপর ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন ভারতের নিযুক্ত সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাট্টি।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে সরকারের দেওয়া দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তিন বছর আগে দুজন অ্যাম্বুলেন্সচালকও ছিলেন। একজন অবসরে গেলে অপর চালক সুশীল চন্দ্র সেটি চালাচ্ছিলেন। গত বছর থেকে সুশীল অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালের কুক আলমগীর হোসেনের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকায় তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছেন।

হাসপাতালের কুক আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছি।'

তিনি জানান, তবে ভারতের উপহার দেওয়া 'লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সটি' কোনোদিনই ব্যবহৃত হয়নি। এটি হাসপাতালে আনার পর থেকেই অযত্নে পড়ে আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অ্যাম্বুলেন্সটি অব্যবহৃত ও অযত্নে পড়ে আছে। এর ভেতরের কিছু যন্ত্রপাতি চুরি হয়েছে। হাসপাতালের কয়েকজন অসাধু কর্মচারী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ভারতের দেওয়া উপহার 'লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স' জনগণের কোনো উপকারে আসেনি। দেশের অন্যন্য হাসপাতাল ও পৌরসভায় ভারতের দেওয়া উপহারের অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার হচ্ছে ঠিকঠাক মতো।'

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রমজান আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অ্যাম্বুলেন্স চালকের সংকট দীর্ঘদিন থেকে। অ্যাম্বুলেন্সচালক নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফায় পত্র দেওয়া হলেও আজও কোনো সুরাহা হয়নি। একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সচালক সুশীল চন্দ্র অসুস্থ হওয়ায় কুক আলমগীর হোসেনকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানো হচ্ছে।'

'ভারতের দেওয়া উপহার অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রহণ করেছিলাম, কারণ ভেবেছিলাম অ্যাম্বুলেন্সচালকও পাব। চালকের অভাবে এটি কোনোদিনই ব্যবহার করা হয়নি।'

এ ছাড়া তিনি বলেন, 'অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। তবুও বিষয়টি খতিয়ে দেখব।'

Comments