দুমকী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

৯ জনের মধ্যে ডাক্তার আছেন ২ জন, পড়ে আছে এক্সরে মেশিন

২০০৪ সালের ১৬ জুন ৩১ শয্যা নিয়ে দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু হয়। ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসা সেবার পরিধি।
দুমকী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র অনুসারে—একজন সার্জন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ, তিনজন মেডিকেল অফিসার ও দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়টি চিকিৎসক পদের মধ্যে সাত পদে কেউ নেই। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জটিল রোগে শহরমুখী হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।

হাসপাতাল সূত্র অনুসারে—একজন সার্জন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ, তিনজন মেডিকেল অফিসার ও দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য।

দুমকী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দাপ্তরিক কাজেও ব্যস্ত থাকেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। বাকি সাতটি পদ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খালি। মাঝেমধ্যে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও নিয়োগপ্রাপ্তরা এখানে আসেন না।

হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। তখন এই হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসক ও সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হবে।

দুমকী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
রোগীর চাপ সামলাতে আংগারিয়া, মুরাদিয়া ও লেবুখালী ইউনিয়ন থেকে প্রেষণে তিন মেডিকেল কর্মকর্তাকে দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়েছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

বর্তমানে হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে বা ইনডোরে সেবা কার্যক্রম চলমান আছে। তবে চিকিৎসক সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রোগীর চাপ সামলাতে আংগারিয়া, মুরাদিয়া ও লেবুখালী ইউনিয়ন থেকে প্রেষণে তিন মেডিকেল কর্মকর্তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।

হাসপাতালের রেজিস্টার বলছে, গত দুই মাসে এই হাসপাতালে ২৮টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এ ছাড়া, বহির্বিভাগে সাত হাজার ২২ জন, জরুরি বিভাগে ৬৮৮ জন ও আন্তঃবিভাগে ৩২৭ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।

২০০৪ সালের ১৬ জুন ৩১ শয্যা নিয়ে দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু হয়। ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসা সেবার পরিধি।

১ এপ্রিল হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে দেখা যায়—বকুল লতা (৬০) তার ১১ বছর বয়সী নাতি ইয়াসিনের শয্যার পাশে বসে আছেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সকালে ইয়াসিন মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে এসে স্যালাইন পেয়েছেন, তবে ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।

পেট ব্যথার কারণে দুদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আনোয়ার (৪০)। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু ওষুধ কিনতে হয়েছে।'

একই কথা জানান ময়তন বিবি (৬৫)। বাইরে থেকে এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করাতে তার এক হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে ময়তন বিবির পেটে ব্যথা। তার শরীর ফুলে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হলেও এখনো তা চালু হয়নি।

দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর শহীদুল হাসান শাহীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আধুনিক এক্স-রে মেশিন পেয়েছি, তবে টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্স-রে শুরু করা যাচ্ছে না।'

'রক্তের সব পরীক্ষা এখানে করানো সম্ভব হয় না,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'হাসপাতালে ওষুধ আছে। যে ওষুধগুলো নেই, সেগুলো বাইরে থেকে কিনতে বলা হয়।'

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এসএম কবির হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের চিকিৎসক সংকট আছে। চিকিৎসকের জন্য বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আশা করছি, শিগগির কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।'

Comments