স্বাস্থ্য

শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর গুঁড়ো দুধের প্রচারণা বন্ধের আহ্বান 

গুঁড়ো দুধ শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি নবজাতকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না এবং শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। 
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ‘মায়ের দুধের উপকারিতা ও গুঁড়ো দুধের অপকারিতা’ শীর্ষক অবহিতকরণ সভা। ছবি: স্টার

গুঁড়ো দুধ শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি নবজাতকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না এবং শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। 

এসব কারণে গুঁড়ো দুধের প্রচারণা বন্ধে আইন করা হয়েছে। অথচ এই আইনের তোয়াক্কা না করে দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরাও গুঁড়ো দুধের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে মায়েদের প্রভাবিত করছেন। এ কারণে গুঁড়ো দুধের ব্যবহার কমছে না। বরং দিন দিন বাড়ছে। 

শিশুদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে অবশ্যই গুঁড়ো দুধ থেকে দূরে রাখতে হবে এবং আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে এর প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে এর কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে বলে জানিয়েছেন বক্তারা।   

আজ বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে 'মায়ের দুধের উপকারিতা ও গুঁড়ো দুধের অপকারিতা' শীর্ষক এক অবহিতকরণ সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ তোতা, পুলিশ পরিদর্শক কোহিনুর হোসেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. আকিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় 'মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন-২০১৩ ও এর বিধিমালা-২০১৭' এবং মায়ের দুধের উপকারিতা ও গুঁড়ো দুধের অপকারিতার ওপর ব্যাপক আলোচনা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. আকিকুল ইসলাম তার মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, গুঁড়ো দুধ ও প্রক্রিয়াজাত শিশুখাদ্য সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত নয়, কারণ এতে 'এন্টারোব্যাকটর সাকাজ্যাকি' এবং 'সাল-মোনেলা' নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মাতৃদুগ্ধের বিকল্প ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে ২০১৩ সালে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প অধ্যাদেশ বিলুপ্ত করে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আইনটির প্রয়োগ খুবই কম।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, 'মায়ের দুধ শিশুর সম্পূর্ণ ও সুষম খাদ্য। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে নবজাতকের মৃত্যঝুঁকি হ্রাস পায়। মায়ের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি সাশ্রয়ী। এ ছাড়া, শিশু মায়ের দুধ পান করলে ওই শিশুর মায়ের ব্রেস্ট ও যৌন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকবে। এ কারণে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। গুঁড়ো দুধ পরিহার করে নবজাতক শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। একইসঙ্গে গুঁড়ো দুধের প্রচার-প্রচারণা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।'

তবে শিশুর জীবন রক্ষা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে একান্তভাবে অপরিহার্য বিবেচিত হলে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ৬১ নং আইনের অধীনে নিবন্ধিত ও রেজিস্ট্রারভুক্ত কোনো মেডিকেল চিকিৎসক উপযুক্ত প্রমাণাদির ভিত্তিতে কেবল মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্যের কোনো ব্যবস্থাপত্র প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী বলেন, 'আইন অনুযায়ী মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত, এজন্য সরঞ্জামাদির আমদানি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় বা বিতরণের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন মুদ্রণ, প্রদর্শন, প্রচার বা প্রকাশ বা এ জাতীয় কাজে কেউ নিজেকে নিয়োজিত না করার কথা বলা হয়েছে। তারপরও অবাধে প্রদর্শিত হচ্ছে বেশিরভাগ ফার্মেসি, মুদি দোকান ও অভিজাত চেইনশপগুলোতে। তবে এসব ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা নেই। তাই সব স্তরের মানুষের মাঝে এসব তথ্য ছড়িয়ে দিতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে আমরাও এ ব্যাপারে আইনের প্রয়োগ করব।'

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টিসেবা (এনএনএস) আয়োজিত এই অবহিতকরণ সভায় অংশগ্রহণ করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।

 

Comments