বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২৪: এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার

আজ ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' এর কারণে প্রতি বছর ১.৩ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন এবং ২.২ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়। 

হেপাটাইটিস লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। 

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ৫.৫ শতাংশ এর মানুষ হেপাটাইটিস-বি এবং ০.৬ শতাংশ এর হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত।

এই বিষয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা' এবং 'ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স' এর আহ্বানে বিশ্বব্যাপী ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। 

ভাইরাল হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য 'ইট'স টাইম টু অ্যাক্ট', অর্থাৎ 'এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার'। 

এ বিষয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী এ তথ্য জানান।

হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত মা থেকে নবজাতকের সংক্রমণই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান কারণ। জন্মের সময় সংক্রমিত হেপাটাইটিস-বি এর ক্ষেত্রে শিশু বয়সের প্রায় ৯৫ ভাগ এর ক্রনিক হেপাটাইটিস হয়। 

এজন্য নবজাতককে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাক্সিন ও প্রয়োজনে হেপাটাইটিস-বি ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিতে হবে। পরবর্তীতে আরও দুই ডোজ ভ্যাকসিন ১-২ মাসে এবং ৬ মাসে দিতে হবে।

বাংলাদেশে, বিশেষ করে গ্রামীণ জনসাধারণের হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' সম্পর্কে ধারনা অনেক কম, যদিও মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগের ও অধিক মানুষ গ্রামে বাস করে।

তাছাড়া সচেতনতা, প্রতিরোধ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ও অপ্রতুল। 

এছাড়া ভাইরাল হেপাটাইটিস সম্পর্কে নানা রকম ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। 

হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' চিকিৎসাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহর-কেন্দ্রিক। অনেক সময় প্রয়োজনে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসা সেবা নাগালের বাইরেই থেকে যায়। 

ভাইরাল হেপাটাইটিস প্রতিরোধের উপায়

হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' রক্ত, রক্তের উপাদান এবং বডি ফ্লুইডস (বীর্য, অশ্রু, মুখের লালা ইত্যাদি) এর মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি-

ক) রক্ত পরিসঞ্চালনের পূর্বে হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসের জন্য নিশ্চিত নিরীক্ষা অবশ্যকরণীয়

 খ) সিরিঞ্জ ও সূচের একাধিক ব্যবহার অবশ্য-বর্জনীয়

 গ) নিজস্ব দাঁতের ব্রাশ, রেজার, কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে 

ঘ) চুল কাটার পরে এবং শেভ করার সময় একই ব্লেড বার বার ব্যবহার না করা

 ঙ) নিরাপদ যৌন চর্চা

চ) হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন ক্রমেই রক্ত বা অঙ্গদানকারী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না।

জ) নাক-কান ছিদ্র করার সময় একই সূচ বার বার ব্যবহার না করা

ঘ) সবধরনের সার্জারী এবং দাঁতের চিকিৎসায় জীবাণুমুক্ত যন্ত্র ব্যবহার নিশ্চিত করা

যদিও বাংলাদেশে হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' চিকিৎসার সবধরণের মুখে খাওয়া এবং ইনজেকশন বিদ্যমান, এই ঔষধ আরো সহজলভ্য করা উচিৎ।

হেপাটাইটিস-বি এর চিকিৎসায় দীর্ঘমেয়াদী হলেও হেপাটাইটিস-সি এর মুখে খাওয়ার ঔষধও (ডিএএএস) প্রায় ৯৫ ভাগ কার্যকরী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূলের (ইলিমিনেশন) পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এটিকে বেগবান করতে হলে ভ্যাক্সিনেশন, হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মা থেকে সন্তানের সংক্রমণ প্রতিরোধ, নিরাপদ ইনজেকশন, রক্ত সঞ্চালন ও সার্জিক্যাল সেফটি, ক্ষতির মাত্রা কমানো এবং আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবার উদ্যোগ জোরদার করা এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ৯০ ভাগ প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে, ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূলে আর্থিক বিনিয়োগ জরুরি, যা আমাদের এসডিজি ৩ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সহায়ক হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি এটাই হোক বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

4h ago