অবশেষে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন শুরু করছে সরকার

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রায় তিন মাস পর সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার।

প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু স্বল্প মেয়াদি, অর্থাৎ তিন মাসের একটি কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়ন শুরুর পরিকল্পনা করেছে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব শাখা ও সংস্থাকে নিজস্ব পরিকল্পনা প্রস্তুত করে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান আগামী ৬ আগস্ট অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। সেখানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিবদের পাশাপাশি এর আওতাধীন সব সংস্থার প্রধানরা অংশ নেবেন।

গত ৫ মে জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বাধীন ১২ সদস্যের কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও জনবান্ধব করতে ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়।

এতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত এবং সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে প্রদানের সুপারিশ করা হয়।

স্বাস্থ্যখাতের নীতি ও কৌশল নির্ধারণ এবং তদারকির জন্য একটি স্বাধীন ও স্থায়ী বাংলাদেশ স্থাস্থ্য কমিশন গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কমিশন জানায়, প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে এবং এটি একটি শক্তিশালী আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা উচিত।

এই প্রতিবেদন এমন সময়ে এসেছে যখন স্বাস্থ্যখাত অর্থায়নের ঘাটতি, স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট, (স্বাস্থ্যসেবা নিতে) অতিরিক্ত ব্যক্তিগত ব্যয়, সেবায় অসম প্রবেশাধিকার এবং দুর্বল শাসন ব্যবস্থাসহ নানা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব সমস্যার কারণে অনেক মানুষ মানসম্পন্ন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত এবং অনেকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন।

প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর ওপর কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি জানান, এগুলো স্বাস্থ্যখাতের সমস্যাগুলোর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

যদিও, এখন পর্যন্ত কোনো আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়নি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য সম্প্রতি হতাশা প্রকাশ করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুরো সংস্কার প্রক্রিয়ায় মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা। তাহলে আমাদের মতো অন্য কমিশন গঠনের দরকার কী ছিল?'

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে প্রথম বৈঠক আগামী ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এর বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।'

গত ২৯ জুলাই সব সংস্থার প্রধানদের পাঠানো চিঠিতে স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা, সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ এবং প্রতিটি শাখা, বিভাগ বা সংস্থার কার্যক্রম খতিয়ে দেখে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

'প্রাথমিক পর্যায়ে একটি স্বল্প মেয়াদি (তিন মাসের) কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন শুরুর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত,' উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

এছাড়া, সংশ্লিষ্ট শাখা, বিভাগ বা সংস্থাকে অভ্যন্তরীণ বৈঠক করে তাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি এবং ৬ আগস্ট অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আলোচনার জন্য প্রেজেন্টেশন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান বলেন, 'আমরা প্রতিবেদনটি নিয়ে কাজ করছি। আমরা সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোর মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছি।'

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আশা করছি, ৫ আগস্টের মধ্যে বুঝে উঠতে পারবো কোন কোন অংশ কত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।'

তিনি জানান, ৬ আগস্ট বৈঠকের পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সাইদুর বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা শাখাগুলোর কাছ থেকে তিন মাসের একটি পরিকল্পনা চেয়েছেন, আর দীর্ঘমেয়াদি বিষয়গুলো পরবর্তীতে বিবেচনা করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

6h ago