ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ইসরায়েলি হামলার পর মধ্য ইরানে নাটানজ পারমাণবিক স্থাপনার স্যাটেলাইটে তোলা ছবি। ১৪ জুন, ২০২৫। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'অত্যন্ত সফল হামলা' চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি বলেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান ফোরদো এখন আর নেই।

আজ রোববার সকালে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের বেধে দেওয়া নির্ধারিত সময়সীমা দুই সপ্তাহের আগে ও কয়েকদিনের আলোচনার পর ট্রাম্প ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করলেন। এতে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা আরও তীব্র হবে।

টেলিফোনে রয়টার্সকে ট্রাম্প বলেন, 'আজ রাতে আমাদের জন্য ছিল চমৎকার একটি সাফল্য। তাদের এখনই শান্তিতে আসতে হবে, না হলে আবার হামলা হবে।'

এর আগে নিজের ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে তিনি জানান, সব মার্কিন বিমান নিরাপদে ফিরে আসছে। 'আমাদের মহান আমেরিকান যোদ্ধাদের' অভিনন্দন।

ট্রাম্প বলেন, মার্কিন বাহিনী ইরানের তিনটি প্রধান পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে: নাতাঞ্জ, ইস্পাহান ও ফোরদো। ফক্স নিউজকে তিনি জানান, ফোরদোতে ছয়টি 'বানকার-বাস্টার' বোমা ফেলা হয়েছে এবং অন্য স্থাপনায় ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

মার্কিন বিমান বাহিনীর বি-২ বোমারু বিমান। রয়টার্স ফাইল ফটো

একজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামলায় বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহৃত হয়েছে। এসব বিমানে বড় ধ্বংসক্ষম বোমা বহনের ক্ষমতা রয়েছে, যা মাটির নিচে থাকা ফোরদোর মতো ঘাঁটি ধ্বংসে কার্যকর।

ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, 'ফোরদোর মূল স্থাপনায় বোমা মারা হয়েছে। ফোরদো আর নেই। ইরানকে এখনই এই যুদ্ধ বন্ধে রাজি হতে হবে।'

ইরানের তাসনিম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, 'শত্রুর বিমান হামলায়' ফোরদোর আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার 'কান' এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হামলার বিষয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয় করেছিল।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, হামলার পর ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও ইরান আকাশপথে সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে উভয় দেশেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ইসরায়েল বলেছে, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই তারা হামলা চালাচ্ছে। তবে ইরান বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।

দুই দেশের এই যুদ্ধি বন্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ডেমোক্র্যাট ও কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা বলছেন, ইরানে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে ট্রাম্পের আগে কংগ্রেসের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল।

রিপাবলিকান সিনেটর রজার উইকার এই অভিযানের প্রশংসা করলেও সতর্ক করে বলেছেন, 'এখন আমাদের সামনে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত অপেক্ষা করছে।'

আরেক সিনেটর জিম রিশ বলেন, 'এই যুদ্ধ ইসরায়েলের, আমাদের নয়।' তিনি স্পষ্ট করেন, 'আমেরিকান সেনা ইরানের মাটিতে নামবে না।'

কেন্টাকির রিপাবলিকান প্রতিনিধি থমাস ম্যাসি বলেন, 'এটা সংবিধানবিরোধী।'

ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন বলেন, 'আমেরিকান জনগণ এই যুদ্ধে প্রবেশের বিপক্ষে' এবং ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ভয়ানক ভুল বলে মন্তব্য করেন।

ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা নূর নিউজ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ইরানে ৪৩০ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইরানে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইরান থেকে মোট ৪৫০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৭২ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Comments

The Daily Star  | English
Domestic violence killing women in Bangladesh

Domestic violence in Bangladesh: When numbers speak of the silence

When we are informed that 133 women have been killed by their husbands in seven months, it is no longer just a number.

8h ago