জাতির উদ্দেশে ভাষণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যা বললেন ইমরান খান

শনিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৮টার দিকে ভাষণ দেন ইমরান খান। ছবি: পিটিআইয়ের ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত ভিডিও থেকে নেওয়া

জামিনে মুক্তির পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কঠোর সমালোচনা করেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

তার গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছেন তিনি। রাজনীতিতে সেনা বাহিনী হস্তক্ষেপ করছে অভিযোগ তুলে সেনাপ্রধানকে রাজনৈতিক দল গঠনের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমালোচনা করতে গিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গেও কথা বলেন ইমরান খান।

ইমরান খান তার ভাষণে বলেন, 'আমি আজ আবারও আপনাদেরকে পূর্ব পাকিস্তানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমার জীবদ্দশায় আমি পূর্ব পাকিস্তান দেখেছি। ১৯৭১ সালের মার্চে আমি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম পূর্ব পাকিস্তানে, সেখানকার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিরুদ্ধে। আমাদের যে জাহাজটি ফিরে এসেছিল (পশ্চিম পাকিস্তানে) সেটি ছিল শেষ জাহাজ। আমার এখনো মনে আছে তাদের কী পরিমাণ ঘৃণা ছিল পাকিস্তানের প্রতি। এখানে তো আমাদের এসব জানাই ছিল না।

'এখন যেভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তখনো সেভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। পার্থক্য হচ্ছে এখন সোশ্যাল মিডিয়া আছে। এখন তো সোশ্যাল মিডিয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ তারা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের গণমাধ্যমই শুধু রাখতে চায়, নিজেদের পছন্দের কথাটাই মানুষকে শোনাতে চায়। সেজন্য সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে… পূর্ব পাকিস্তানেও এটাই হয়েছিল। আমাদের এখানে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া, আমরা তো কোনো খবরই জানতাম না আসলে কী হচ্ছে,' বলেন তিনি।

ইমরান খান আরও বলেন, 'আমি তো ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম পড়তে। সেখানে আমি জানতে পারলাম যে আসলে কী হচ্ছে। আজ আমাদের বোঝা উচিত যে পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের ওপরে যে এত বড় অত্যাচার হয়েছে। ওদের যে পার্টি নির্বাচনে জিতেছিল যাকে তারা প্রধানমন্ত্রী বানাতে চেয়েছিল, বানানো উচিত ছিল। তার বিরুদ্ধে মিলিটারি অ্যাকশন নিয়ে নিল! দেশের বিভাজন উস্কে দিল। ৯০ হাজার সৈন্য আমাদের কয়েদী হয়ে গেল, আত্মসমর্পন করল। কী পরিমাণ ক্ষতি হলো আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না।'

'(কারণ) বন্ধ কামরায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কয়েকজন মিলে বসে পড়েন সিদ্ধান্ত নিতে, যারা জানেই না বাকি পৃথিবী কীভাবে চলে। বন্ধ কামরায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। এসব সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতি হলো কি না সেটাও তারা কাউকে জানতে দেয় না।'

তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনী দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি তাদের বলেছিলাম আমাকে ওয়ারেন্ট দেখাতে। আমি তাদের সঙ্গে যেতে প্রস্তুত ছিলাম। আমরা সেখানে শান্তভাবে বসে ছিলাম, কিন্তু তারা জানালার কাঁচ ভেঙে এমনভাবে আক্রমণ করেছে যেন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সেখানে বসে আছে। সেনাবাহিনী সেখানে যা করেছে… রেঞ্জাররা সেনাবাহিনীরই অংশ, কাউকে গ্রেপ্তার করা তো পুলিশের কাজ। রেঞ্জাররা সেখানে কী করছিল?'

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাকে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, 'আমি জানি আমাকে গত বছর হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই পরিকল্পনায় শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত জড়িত সবার নাম আমি জানি। আমি জানি সবুজ বাতি কে দিয়েছে, তাদেরকে সবুজ বাতি কে দিয়েছে সেটিও আমি জানি। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল দুই বেসামরিক ব্যক্তি-শেহবাজ শরিফ (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী) ও রানা সানাউল্লাহর (পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)।'

গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে দাবি করে ইমরান খান প্রশ্ন করেন, 'আমাকে গ্রেপ্তারের পরপরই কেন মিডিয়ার ওপর কড়াকড়ি করা হলো? সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হলো?'

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামা আসা সমর্থক, বিশেষ করে নারী সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা 'নির্লজ্জের মতো' দমন- নিপীড়ন করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস এর পরিচালকের নাম নিয়ে ইমরান খান বলেন, 'আপনার লজ্জা হওয়া উচিত। আপনি রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছেন। আপনি কেন নিজের রাজনৈতিক দল গঠন করছেন না? আমি এখন ভীষণ ক্ষুব্ধ, নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করছি। কারণ আপনি না জেনে আমার বিষয়ে কথা বলেছেন।'

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

10h ago