সাংবাদিক ‘বহিষ্কার’ নীতিতে আরও তিক্ত হচ্ছে চীন-ভারত সম্পর্ক

অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে ভারত হয়ত চায় না তাদের দেশে চীনা সাংবাদিক থাকুক এবং চীনও চায় না সেখানে ভারতীয় কোনো সাংবাদিক থাকুক। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।
সাংবাদিক বহিষ্কার
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

পরমাণু শক্তিধর ২ প্রতিবেশী চীন ও ভারত নিজ নিজ দেশ থেকে একে অপরের সাংবাদিকদের ক্রমাগত 'বহিষ্কার' করায় আরও তিক্ত হয়ে উঠছে তাদের সম্পর্ক।

আজ বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে ভারত হয়ত চায় না তাদের দেশে চীনা সাংবাদিক থাকুক এবং চীনও চায় না সেখানে ভারতীয় কোনো সাংবাদিক থাকুক। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।

এতে আরও বলা হয়, গত শুক্রবার নয়াদিল্লি তার সাংবাদিকদের চীনে পেশাগত কাজ চালিয়ে যেতে 'সহযোগিতা'র আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয় নিয়ে ২ পক্ষই 'আলোচনা' চালিয়ে যাবে বলেও আশা করা হয়।

ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হয়ে চীনে কাজ করা ৪ সাংবাদিকের মধ্যে ৩ জনের পরিচয়পত্র গত এপ্রিল থেকে গ্রহণ করছে না বেইজিং।

গত সপ্তাহে চীন বলেছে, ভারতের 'অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের' কারণে সেখানে তাদের মাত্র একজন সাংবাদিক কাজ করছেন। এমনকি, তার ভিসা এখনো নবায়ন করা হয়নি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া ছাড়া চীনের কিছু করার নেই।'

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালই প্রথম সাম্প্রতিক সময়ে চীন-ভারতের সাংবাদিক 'বহিষ্কারের' সংবাদটি সামনে আনে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীন ও ভারতে জাতীয়তাবাদী মনোভাব ও ২ দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সাংবাদিক 'বহিষ্কারের' এই ঘটনা নতুন সংকট সৃষ্টি করছে বলেও সংবাদ প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

আরও বলা হয়, ভারতে চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ও চীনে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাংবাদিকের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার ঘটনা ২ দেশের সম্পর্ককে আরও নাজুক করে তুলছে।

যখন ২ দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কমানোর সুযোগ কম, তখন সাংবাদিক 'বহিষ্কারের' মাধ্যমে একে অপরের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি জানার সুযোগটিও কমে যাচ্ছে।

গত রোববার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা শিনহুয়ায় প্রকাশিত এর নয়াদিল্লি ব্যুরো প্রধান হু শিয়াওমিংয়ের লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে চীনের সাংবাদিকরা 'ভিসা জটিলতায়' ভুগছেন।

ভারত সরকারের এমন 'নিষ্ঠুর আচরণ' সেখানে কর্মরত চীনা সাংবাদিকদের ওপর চরম মানসিক চাপ তৈরি করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে নয়াদিল্লিতে ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করা হু আরও জানান, দীর্ঘদিন ভারতে থাকার 'অভিযোগে' গত মার্চ থেকে ভারত সরকার তার ভিসা নবায়ন প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

ভারতের ভিসানীতির কারণে শিনহুয়ার নয়াদিল্লি শাখায় মাত্র একজন সাংবাদিক কাজ করছেন বলেও তিনি জানান।

গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে তিনি বলেন, 'চীনসহ সব দেশের সাংবাদিকই ভারতে কোনো সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা ছাড়াই পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন।'

চীনে কোনো ভারতীয় সাংবাদিকের পরিচয়পত্র গ্রহণ না বিষয়টি নিশ্চিত না করে অরিন্দম জানান, সেখানে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে সমস্যায় পড়ছেন।

গত এপ্রিলে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বেইজিং সংবাদদাতা আনানথ কৃষনানের ভিসা 'আটকে' রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ তালিকায় ভারতের সরকারি সংবাদমাধ্যম 'প্রসার ভারতি'র সাংবাদিক আনশুমান মিশ্রও আছেন।

এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিনহুয়াসহ চীনের সংবাদমাধ্যমগুলোর সাংবাদিকদের সঙ্গে যে 'অন্যায়' আচরণ করা হয়েছে বেইজিং তার জবাব দিচ্ছে।

তিনি ২০২১ সালে চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিজিটিএনের এক সাংবাদিককে ভিসা থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে বের করে দেওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন।

ভিসা থাকা সত্ত্বেও চীনের কোনো সাংবাদিক ভারতে ঢুকতে পারছেন না—এমন ঘটনা আছে কি না তা নিয়ে বেইজিং কোনো মন্তব্য করেনি।

চীনের ভিসার জন্য অপেক্ষা করা পশ্চিমের সাংবাদিকদের একজন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ভারতীয় সাংবাদিকরা যে পরিস্থিতিতে পড়েছেন তা বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের ক্ষেত্রেও হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া ও সেন্সরশিপ বেড়ে যাওয়ায় ভারতও সমালোচনার মুখে পড়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে কর ফাঁকির অভিযোগে নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয় তল্লাশি করে ভারত সরকার। এর কয়েক সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি এক তথ্যচিত্রে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা তুলে ধরে। এরপর, তথ্যচিত্রটি প্রচারে বাধা দেয় ভারত সরকার।

Comments