কারাগার থেকে যে বার্তা দিলেন কেজরিওয়াল

কারা হেফাজতে থেকেও মুখ্যমন্ত্রীয় দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন কেজরিওয়াল। আজ তিনি প্রথম নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।
দিল্লির মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছবি: স্টেটসম্যান
দিল্লির মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছবি: স্টেটসম্যান

বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে আবগারি নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে দেশটির সরকারি সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

ইডির কারা হেফাজতে থেকেও মুখ্যমন্ত্রীয় দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন কেজরিওয়াল। আজ তিনি প্রথম নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

আম আদমি পার্টির আইনপ্রণেতা অতিশি সিং সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'অরবিন্দ কেজরিওয়াল আমাকে একটি চিঠি ও নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। চিঠিটি পড়ার সময় আমার চোখে পানি চলে আসে। আমি ভাবলাম, এই মানুষটা কারাগারে থেকেও দিল্লির বাসিন্দাদের পানি ও পয়:নিষ্কাশন সমস্যা নিয়ে ভাবছেন। শুধু অরবিন্দ কেজরিওয়ালই এটা করতে পারেন কারণ তিনি দিল্লির দুই কোটি মানুষকে পরিবারের সদস্য ভাবেন।'

'আমি বিজেপিকে বলতে চাই, আপনারা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে তাকে কারাগারে পাঠাতে পারবেন, কিন্তু আপনারা দিল্লির মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধকে কারাবন্দী করতে পারবেন না', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, কেজরিওয়াল কারাবন্দী থাকলে 'কোনো কাজ থেমে থাকবে না।'

চিঠি পড়ে শোনান অতিশি।

কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করায় নয়াদিল্লিতে আম আদমি পার্টির সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করায় নয়াদিল্লিতে আম আদমি পার্টির সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

কেজরিওয়াল চিঠিতে বলেন, 'আমি জানতে পেরেছি দিল্লির কিছু জায়গায় পানির সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমি এতে উদ্বিগ্ন। আমি কারাগারে থাকলেও কেউ কোনো দুর্ভোগ পোহাবে না। গ্রীষ্মকাল চলে এসেছে। নিশ্চিত করুন, যেসব এলাকায় পানি সংকট রয়েছে, সেখানে যেন যথেষ্ট পরিমাণ ট্যাংকার থাকে। মূখ্যসচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিন যাতে মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়। মানুষকে তাদের সমস্যার তাৎক্ষণিক ও সুষ্ঠু সমাধান দিতে হবে। প্রয়োজনে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছ থেকে সাহায্য তিনি। তিনি নিশ্চিতভাবেই আপনাকে সাহায্য করবে।'

অতিশি বলেন, 'কারাবন্দী থেকেও আজ শুধু দিল্লির মানুষের কথাই ভেবেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।'

কেজরিওয়ালের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন দিল্লির একটি আদালত। আবগারি নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি দুর্নীতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার রিমান্ডে পাঠালেন আদালত। আদেশ অনুযায়ী, আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত কেজরিওয়াল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেফাজতে থাকবেন।

আম আদমি পার্টি নিশ্চিত করেছে, কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হলেও মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। এ বিষয়টিতে বাধা মতো কোনো আইন নেই, তবে কারাগারের নীতিমালায় কারণে বিষয়টি তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দিল্লির তিহার কারাগারের সাবেক আইন কর্মকর্তা সুনিল গুপ্ত এনডিটিভিকে জানান, বন্দিরা কারাগারে থেকে সপ্তাহে শুধু দুইটি বৈঠকে অংশ নিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, 'কারাগারে বসে সরকার চালানো সোজা কথা নয়। কারাগারের নির্দেশিকা আমাদেরকে বলছে, আপনি সপ্তাহে দুইবার আপনার পরিবার, বন্ধু-পরিজন বা সংশ্লিষ্টজনের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এ ধরনের বিধিনিষেধ মাথায় রেখে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে না।'

তবে কেজরিওয়ালকে যদি গৃহবন্দি করে রাখা হয়, তাহলে তিনি সহজে তার এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর বিনয় কুমার সাক্সেনার অনুমোদন লাগবে।

দিল্লির মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ফাইল ছবি: রয়টার্স
দিল্লির মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সুনিল গুপ্ত বলেন, 'প্রশাসন চাইলে যেকোনো ভবনকেই কারাগার হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে।'

তবে কেন্দ্র মনোনীত লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কার্যালয়ের সঙ্গে এএপি সরকারের সম্পর্ক বিচারে এমন অনুমোদন আসার সম্ভাবনে তেমন নেই।

কেজরিওয়াল পদত্যাগ না করে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার পরিণাম কি হতে পারে, তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যেহেতু তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, কেন্দ্র সরকার তাকে সাময়িক বরখাস্ত বা পদ থেকে অপসারণ করতে পারে। যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আবগারি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চতুর্থ শীর্ষ নেতা হলেন কেজরিওয়াল। এর আগে আম আদমি পার্টির নেতা মনীষ সিসোদিয়া, সঞ্জয় সিং ও ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেতা কে কাভিথাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Ban on plastic bags a boon for eco-friendly sacks

Availability of raw materials now a challenge

19m ago