ন্যাটো সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ, বাইডেনের ‘অগ্নিপরীক্ষা’

হোয়াইট হাউস থেকে বের হয়ে আসছেন জো বাইডেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউস থেকে বের হয়ে আসছেন জো বাইডেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

আজ থেকে ওয়াশিংটনে শুরু হতে যাচ্ছে ন্যাটো সম্মেলন। বিশ্লেষকদের মতে, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই সম্মেলন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য এক 'অগ্নিপরীক্ষা'। 

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

এই সম্মেলনে নেতাদের মূল লক্ষ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখার কৌশল খুঁজে পাওয়া। তবে এই সম্মেলনের আয়োজক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একে দেখছেন আরও চার বছর প্রেসিডেন্ট পদে থাকার যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ হিসেবে।

ন্যাটো নিয়ে তেমন উচ্ছ্বসিত নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে কী হতে পারে, সেটা ন্যাটোর এই সম্মেলনে অন্যতম আলোচনার বিষয়।

পাশাপাশি, জো বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারণাকে নবজীবন দিতে এই সম্মেলনকে কাজে লাগাতে চাইছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ২৭ জুন ট্রাম্পের সঙ্গে সিএনএনে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন বাইডেন। যা তার প্রচারণায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে 'বুড়ো' বাইডেনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

বাইডেন বলেছেন তিনি সামরিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর ৭৫তম বার্ষিকীতে আয়োজিত এই সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সক্ষমতা ও দক্ষতার প্রমাণ রাখবেন।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর তিনিই দ্রুততম সময়ে ন্যাটোর মিত্রদের সমন্বিত করে কিয়েভের সমর্থনে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করেন। তিনি এ বিষয়টিকে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও আরও চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকার যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

সোমবার এমএসএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, 'আমাদের মিত্ররা মার্কিন নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে।'

'আমি ছাড়া আর কে এটা করতে পারতো? আমি ন্যাটোর সম্প্রসারণ করেছি। আমি ন্যাটোকে স্থায়িত্ব দিয়েছি। আমি নিশ্চিত করেছি যেন এমন একটি জোট টিকে থাকে, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একাত্ম হয়ে চীন-রাশিয়াসহ বিশ্বের যেকোনো শক্তির মোকাবিলা করতে পারে। আমরা প্রকৃত উন্নয়নের পথেই আছি', যোগ করেন বাইডেন। 

বাইডেন এ মুহূর্তে সম্ভাব্য ভোটার, ডেমোক্র্যাট নেতৃবৃন্দ ও দাতাদের কাছে নিজেকে প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেওয়া বক্তব্যে, ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এবং গত কয়েকদিন বন্ধুভাবাপন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিজের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন।

ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

তবে তার দীর্ঘদিনের মিত্ররাও বাইডেনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ছয় ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা প্রকাশ্যে বাইডেনকে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যান্য আইনপ্রণেতারাও অন্য কোনো যোগ্য প্রার্থীকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে বাইডেনকে অনুরোধ করেছেন। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ দাতাও বাইডেনকে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

আগামী কয়েকদিন হোয়াইট হাউস ন্যাটো সম্মেলনকে ঘিরে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দ্বিধান্বিত ডেমোক্র্যাট নেতা-কর্মীদের কাছে বাইডেনের সক্ষমতা প্রমাণের চেষ্টা করবে। এ সময় বাইডেন বেশ কয়েকটি আনুষ্ঠানিক ও অনির্ধারিত বৈঠকে অংশ নেবেন। পাশাপাশি কূটনীতিবিদদের সঙ্গে নৈশভোজ, সংবর্ধনা ও সম্মেলনের সমাপনী সংবাদ সম্মেলনেও দেখা যাবে বাইডেনকে।

নাম না প্রকাশের শর্তে প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বৃহত্তর পরিসরের বিষয়গুলো, যেমন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বা চীনের হুমকির বিষয়ে ভালো দখল রয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। তবে এসব সংঘাতের সমাধানে বিভিন্ন দেশ বা গোষ্ঠী সুনির্দিষ্টভাবে যেসব উদ্যোগ নিতে পারে, সে বিষয়ে বাইডেন তেমন একটা জানেন না। কখনো কখনো এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাকে দ্বিধান্বিত হতে দেখা যায়।

তবে কর্মকর্তারা জানান, সার্বিকভাবে বাইডেনের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের সময় এখনো আসেনি।

ন্যাটোর ৩২ সদস্যরাষ্ট্র ও আমন্ত্রিত দেশ ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের এই সম্মেলনই হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বর্তমান মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের শেষ সম্মেলন।

মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

বাইডেন ন্যাটোর প্রতি তার নিরবচ্ছিন্ন অঙ্গীকারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন এবং ভোটারদের জানান, ট্রাম্প জয়ী হলে ন্যাটো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

ট্রাম্প বেশ কয়েকবার ন্যাটো জোট ও জোটের সদস্যরাষ্ট্রদের সমালোচনা করেছেন।

ট্রাম্প দাবি করেন, ন্যাটোর রাষ্ট্ররা সম্মতি দিলেও বাস্তবে সব দেশ তাদের জিডিপির অন্তত দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করছে না।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেয়। বাইডেনের দাবি, তার কারণে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ হয়েছে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ইয়ান ব্রেজিনস্কি জানান, প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে দুর্বলতার পরিচয় দেওয়ার পর বাইডেনের সামনে এই সম্মেলনে তার বিষয়ে অভিমত বদলে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ।

Comments

The Daily Star  | English
gold price hike in Bangladesh

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

According to market data, gold now sells for $1,414 per bhori in Bangladesh, compared to $1,189 in India, $1,137 in Dubai

3h ago