ট্রাম্পের বাণিজ্য কৌশল: আগে হুমকি, পরে আলোচনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মেক্সিকো, কানাডা ও চীন থেকে আমদানি হয়ে আসা পণ্যের ওপর বড় আকারে শুল্ক আরোপ করবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর শুরুতেই এ ধরনের বাণিজ্য কৌশল হাতে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। 

সোমবার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশালে বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে বড় আকারে শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

মূলত অবৈধ মাদক ব্যবসা ও অবৈধ অভিবাসী সমস্যার জবাবে তিনি এই পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

আগে হুমকি, তারপর আলোচনা

২০১৮ সালে জি৭ সম্মেলনে ট্রাম্প ও কানাডার প্রেসিডেন্ট ট্রুডো। ফাইল ছবি: রয়টার্স
২০১৮ সালে জি৭ সম্মেলনে ট্রাম্প ও কানাডার প্রেসিডেন্ট ট্রুডো। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা উইলিয়াম রেইনশ বলেন, এটা ট্রাম্পের চিরাচরিত কৌশল, 'আগে হুমকি, তারপর আলোচনা'।

'আমি নিশ্চিত, চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করা হবে। আইনি ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোর বিবেচনায় এটা বাস্তবায়ন করা সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর হবে', যোগ করেন তিনি। 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, 'কানাডা ও মেক্সিকোর ক্ষেত্রে নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি হবে। যা এমনিতেও ২০২৬ সালে হওয়ার কথা ছিল।'

ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে বলেন, '২০ জানুয়ারি (ক্ষমতা গ্রহণের পর) আমি অনেকগুলো নির্বাহী আদেশ জারি করব, যার একটি হবে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আসা সব ধরনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব নথিতে আমি সাক্ষর করব।'

পাশাপাশি, তিনি ওই দুই দেশের সীমান্তকে 'উন্মুক্ত' ও 'হাস্যকর' বলেও উল্লেখ করেন।

অপর এক পোস্টে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে বর্তমানে প্রযোজ্য সকল শুল্কের সঙ্গে বাড়তি আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান। 

এ ক্ষেত্রে কারণ হিসাবে চীন থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল মাদক প্রবেশ ঠেকাতে বেইজিংয়ের ব্যর্থতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প।

ট্রাম্পের অর্থনৈতিক কৌশল

বোস্টনে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ছবি: রয়টার্স
বোস্টনে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের অর্থনৈতিক কৌশলের মূলে রয়েছে কর ও শুল্ক আরোপ। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি শত্রু-মিত্র, উভয়ের বিরুদ্ধেই এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। 

প্রথম মেয়াদেও তিনি চীন, মেক্সিকো, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী বাণিজ্য কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।

সে সময় চীনের হাজারো কোটি ডলার মূল্যমানের আমদানি পণ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেন ট্রাম্প।  

সে সময় তিনি অন্যায্য বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, মেধাস্বত্ব  চুরি ও দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

চীনও পাল্টা জবাবে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে। এতে মার্কিন খামারিরা বড় আকারে ক্ষতির শিকার হন।

জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির কারণে শুল্ক

চীনের প্রেসিডেন্ট শি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
চীনের প্রেসিডেন্ট শি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফেনটানিল সংকট ও অবৈধ অভিবাসনের সমস্যা উল্লেখ করে ট্রাম্প 'জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির' কথা বলে এ ধরনের শুল্ক আরোপের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া ন্যায্য বাণিজ্যের নীতিগুলো প্রযোজ্য হয় না।

তবে বেশিরভাগ দেশ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এ ধরনের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা। নিয়মিত বা দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য নীতিমালায় এসব বিষয়ের উল্লেখ বা প্রয়োগ খুব একটা দেখা যায় না।

একই কায়দায় ২০১৮ সালে ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকির কারণ দেখিয়ে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সে সময় ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত দেশ কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আওতায় পড়ে।

এই ঘটনার জেরে বাণিজ্য অংশীদাররা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল। 

মার্কিন অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব 

হাওয়ার্ড লুটনিককে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
হাওয়ার্ড লুটনিককে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

অনেক অর্থনীতিবিদ হুশিয়ারি দিয়েছেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে।

তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন, দরকষাকষির টেবিলে শুল্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এর যথোপযুক্ত ব্যবহারে বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারবে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি, বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে গেলে মার্কিন উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোও উপকৃত হবে।

বিদেশ থেকে আমদানির বদলে স্থানীয় পণ্যের দিকে ঝুঁকবে মার্কিনীরা; এমনটাই আশা করছেন ট্রাম্প। 

এ সব নীতিমালার বাস্তবায়নে ট্রাম্প চীন বিশেষজ্ঞ হাওয়ার্ড লুটনিককে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন।

চিনবিরোধী হিসেবে পরিচিত লুটনিক বেইজিংইয়ের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বে ৬০ শতাংশ এবং বাকি সব দেশের পণ্য আমদানিতে অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পক্ষে কথা বলেছেন। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

3h ago