যুদ্ধের অশুভ ছায়ায় এবারো বেথলেহেমে সীমিত আকারে বড়দিনের উৎসব

বেথলেহেমের নেটিভিটি চার্চের ড্রোন থেকে নেওয়া ছবি। ফাইল ছবি: এএফপি
বেথলেহেমের নেটিভিটি চার্চের ড্রোন থেকে নেওয়া ছবি। ফাইল ছবি: এএফপি

আজ বুধবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। কিন্তু যীশু খ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে বিবেচিত এই পবিত্র শহরেই নেই উৎসবের আমেজ। 

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে বড়দিনে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। 

বেথলেহেমের চিত্র

অতীতে বড়দিন উদযাপন করতে আসা লাখো পর্যটকের আগমনে মুখরিত শহরটিতে আজকের দিনে মাত্র কয়েক শ মানুষ জমায়েত হয়েছেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতের অশুভ ছায়া এই উৎসবে প্রতিফলিত হয়েছে এবং এক গুরুগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

সেইন্ট পিটার ব্যাসিলিকায় পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বাসীদের 'যুদ্ধ, মেশিনগানের গুলি ও স্কুল-হাসপাতালে ফেলা বোমায় হতাহত শিশুদের' কথা ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি 'নির্মম ইসরায়েলি হামলার' নিন্দা জানান। যথারীতি, তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি কূটনীতিকরা পোপের বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছেন।

এই ফিলিস্তিনি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ম্যাঞ্জার চত্বরের নেটিভিটি গির্জায় সকালের নীরবতা ভেঙে একদল স্কাউট পদযাত্রা শুরু করেন।

বেথলেহেমে স্কাউটদের পদযাত্রা। ছবি: এএফপি
বেথলেহেমে স্কাউটদের পদযাত্রা। ছবি: এএফপি

ধারণা করা হয়, এখানেই যীশুর জন্ম হয়েছিল। তার জন্মস্থানেই এই গির্জা নির্মাণ করা হয়েছিল।

এ সময় স্কাউটদের হাতে ছিল 'আমাদের শিশুরা হাসতে ও খেলতে চায়', 'আমরা জীবন চাই, মৃত্যু চাই না' লেখা ব্যানার।

প্রতি বছরই বেথলেহেমের এই চত্বরে বড়দিনের সময় একটি অতিকায় ক্রিসমাস ট্রি বসানো হোত। উৎসবের অংশ হিসেবে সেই গাছটিকে নানা রঙের আলোয় সজ্জিত করা হোত। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও এসব আয়োজন ছিল অনুপস্থিত।

বেথলেহেমের মেয়র অ্যান্টন সালমান এএফপিকে বলেন, 'এ বছর আমরা আমাদের উৎসব সীমিত রাখছি।'

এ বছর চিরাচরিত উৎসবগুলো অনেকাংশেই সীমিত আকারে পালন করা হবে।

তবে গির্জার সুবিখ্যাত মধ্যরাতের প্রার্থনাসহ অন্যান্য ধর্মীয় আয়োজন অব্যাহত থাকবে। মধ্যরাতের প্রার্থনার নেতৃত্ব দেবেন আর্চবিশপ পিয়েরবাতিস্তা পিৎসাবাল্লা।

বেথলেহেমে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে আর্চবিশপ জানান, মাত্রই গাজা থেকে ফিরেছেন তিনি।

'সেখানে সবকিছু ধ্বংস হয়েছে গেছে। দারিদ্র্য ও বিপর্যয় চারিদিকে', বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, 'তবে আমি জীবনের নিশানাও দেখেছি—তারা হাল ছেড়ে দেয়নি। আপনাদেরও উচিত হবে না হাল ছেড়ে দেওয়া। কোনো পরিস্থিতিতেই নয়।'

খ্রিস্টানদের পবিত্র ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হলেও এখানে তারা সংখ্যালঘু হিসেবেই বিবেচিত।

বেথলেহেমের মেয়র অ্যান্টন সালমান। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বেথলেহেমের মেয়র অ্যান্টন সালমান। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

মোট এক কোটি ৪০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ইসরায়েলে এক লাখ ৮৫ হাজার ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ৪৭ হাজার খ্রিস্টান ধর্ম পালন করেন।

উৎসব নয়, প্রার্থনার মাঝেই তারা এবারের বড়দিনের উৎসব কাটাতে আগ্রহী।

মেয়র সালমান বলেন, 'বড়দিন একটি আস্থার উৎসব। ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখে আমরা প্রার্থনা করব আর আমাদের সব দুর্দশার অবসান হোক, এই কামনা করব।'

গাজা ও সিরিয়ায় নেই উৎসবের আমেজ

ধ্বংস, মৃত্যু ও জীবনের প্রতি সার্বক্ষণিক হুমকির মাঝেই গাজায় হাজারো খ্রিস্টান গির্জায় জমায়েত হয়ে যুদ্ধের অবসান চেয়ে প্রার্থনা করেছেন।

জর্জ আল-সায়েঘ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা সিটির দ্বাদশ শতাব্দীর গ্রিক অর্থোডক্স গির্জা 'চার্চ অব সেইন্ট পোরিফাইরিয়াসে' আশ্রয় নিয়ে আছেন। তিনি বলেন, 'এবারের বড়দিনে মৃত্যু ও ধ্বংসের দুর্গন্ধ ছাড়া আর কিছুই নেই।'

'কোনো আনন্দ, উৎসবের আমেজ, কিছুই নেই। আগামী বড়দিন পর্যন্ত আমরা কে কে বেঁচে থাকব, সেটাই জানি না', যোগ করেন তিনি।

সিরিয়ার দামেস্কে হাজারো মানুষ ক্রিসমাস ট্রি পুড়িয়ে ফেলার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে সড়কে নেমে এসেছেন।

সিরিয়ার হামা শহরের ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন। ছবি: এএফপি
সিরিয়ার হামা শহরের ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন। ছবি: এএফপি

দুই সপ্তাহ আগে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীরা সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর সম্প্রতি এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। 

জর্জেস নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'আমরা যদি আগের মতো খ্রিস্টধর্ম পালন করতে না পারি, তাহলে এই দেশে আর আমাদের কোনো অবস্থান থাকবে না।'

ইতোমধ্যে সিরিয়ার নতুন শাসকগোষ্ঠী সব ধর্মের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

তবে দেশটির খ্রিস্টানদের মধ্যে উদ্বেগ আশঙ্কা কমেনি। অনেকে ভাবছেন, ইসলামপন্থি শাসকের আমলে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা তেমন কোনো প্রাধান্য বা গুরুত্ব পাবেন না।

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates' remittance helps Bangladesh make turnaround: Yunus

It is the expatriates who help sustain the country, says the chief adviser

2h ago