প্রেসিডেন্ট হয়েই যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প

গভীর মনোযোগে নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
গভীর মনোযোগে নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পরই একাধিক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা, ক্যাপিটলে দাঙ্গার দায়ে অভিযুক্ত দেড় হাজার সমর্থকের মুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা থেকে সরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক গেব্রিয়েসাসের সঙ্গে মাখোঁ ও ট্রাম্প। ফাইল ছবি: এএফপি (২০১৭)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক গেব্রিয়েসাসের সঙ্গে মাখোঁ ও ট্রাম্প। ফাইল ছবি: এএফপি (২০১৭)

ট্রাম্প যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তা হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত।

এই আদেশে বলা হয়েছে, এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেবে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। কিছু সদস্য রাষ্ট্রের অন্যায্য রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে এই সংস্থায়। চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এখানে অনেক বেশি অর্থ দিচ্ছে।

ট্রাম্প বলেছেন, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের ছিঁড়ে খাচ্ছে। সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। কিন্তু আমি তা আর হতে দেব না।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবচেয়ে বড় আর্থিক সাহায্যকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারাই এই সংস্থার ১৮ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করত।

২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তা পরিবর্তন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আবার বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থায় যোগ দেয়।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসা

মেলানিয়ার সঙ্গে কমান্ডার ইন চিফ বলে ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মেলানিয়ার সঙ্গে কমান্ডার ইন চিফ বলে ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

শপথ নেয়ার পর ট্রাম্প যে সব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার সিদ্ধান্ত।

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল। তার থেকে সরে এলেন ট্রাম্প।

তবে চুক্তির নিয়ম অনুসারে বর্তমান কোনো সদস্য দেশ জাতিসংঘের কাছে আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠাবার পর এক বছরের মতো সময় লাগে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে।

ট্রাম্প এদিন জাতিসংঘকে আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্তে সই করেছেন।

এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদক। আমরা ড্রিলিংয়ের কাজ অনেকটাই বাড়াব।'

নির্বাহী আদেশ জারির পর তিনি বলেছেন, 'এখন আমরা ড্রিল করব। ড্রিল বেবি ড্রিল।'

ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা

নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে ঢুকে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেছিল ট্রাম্প সমর্থকরা। বাইডেনের আমলে তাদের বিচার শুরু হয়। বেশ কয়েকজন শাস্তি পয়।

ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারি করে বলেছেন, তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হলো। এদের প্রতি জাতীয় পর্যায়ে অন্যায় করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে। যারা জেলে আছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হবে।

সরকারি হিসাব, দেড় হাজারের বেশি মানুষকে ক্যাপিটল দাঙ্গার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা

নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণায় সই করেছেন। এর ফলে ট্রাম্প এই সীমান্তে সেনা পাঠাতে পারবেন।

ট্রাম্প বলেছেন, 'আইনি পথে অভিবাসীরা আসুক, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমাদের মানুষ দরকার। কিন্তু তাদের আইনি পথে আসতে হবে।'

আরেকটি নির্বাহী আদেশে মেক্সিকোর মাদক পাচারকারী সংগঠনগুলোকে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দেওয়া হয়েছে।

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেই মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান স্বীকৃত এই আইনে বদল করতে চাইছেন ট্রাম্প। এদিন ওভাল অফিসে বসে এই বিষয়েও একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার এভাবে বদল করা সম্ভব নয়। এই সিদ্ধান্ত আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে।

টিকটকে নিষেধাজ্ঞা এখনই নয়

নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

টিকটক নিয়ে আরেকটি আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। সেখানে বলা হয়েছে, টিকটক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত এখনই কার্যকর করা হবে না। প্রশাসনিক নির্দেশে বলা হয়েছে, টিকটক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ৭৫ দিন পিছিয়ে দেয়া হলো।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, 'টিকটক বন্ধ করা হবে নাকি বিক্রি করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমাকে একটু সময় দিন।'

টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোউ চিউ ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আরো নির্দেশে সই

ট্রাম্প জাতীয় পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সই করেছেন। আরেকটি নির্দেশে বলা হয়েছে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম নয়, সরকারি কর্মীদের সবাইকে অফিসে এসে কাজ করতে হবে।

এপি, এএফপি, রয়টার্স

Comments

The Daily Star  | English
rohingya-migration

Persecuted by Arakan Army, Rohingyas fleeing to Bangladesh

Amid escalating violence in Myanmar’s Rakhine State, Rohingyas are trespassing into Bangladesh every day, crossing the border allegedly to escape the brutality of Myanmar’s rebel group, the Arakan Army (AA).

1h ago