যে কারণে হোয়াইট হাউসে ঢুকতে পারলেন না এপির সাংবাদিক

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ঘনিষ্ঠ মিত্র মাস্ক। ছবি:
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ঘনিষ্ঠ মিত্র মাস্ক। ছবি:

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি)  সাংবাদিককে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের একটি অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে দেওয়া হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশ মেনে সংস্থাটি তাদের সব লেখায় মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে 'গালফ অব আমেরিকা' না করাতেই এই বিপত্তি।

আজ বুধবার এপির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ওই ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম প্রকাশ করেনি এপি। তিনি মঙ্গলবার বিকেলে যথারীতি হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং জানানো হয়, তিনি হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরবর্তীতে, সন্ধ্যার সময় হোয়াইট হাউসের কূটনীতিক কক্ষে অপর এক অনুষ্ঠানেও এপির অপর এক সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা অস্বাভাবিক ও নজিরবিহীন।

গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এপিকে হুশিয়ার দেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ মেনে মেক্সিকো উপসাগরের নাম এখন থেকে গালফ অব মেক্সিকোর বদলে গালফ অব আমেরিকা লিখতে হবে।

এপির সম্পাদকীয় নীতি অনুসারে এখনো গালফ অব মেক্সিকোই লেখা হচ্ছে এবং এ ভাবে বার্তা সংস্থাটিকে অন্য কিছু লিখতে বাধ্য করা 'সাংবিধানিক অধিকারের' লঙ্ঘন হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী সম্পাদক জুলি পেইস ট্রাম্প প্রশাসনের এই উদ্যোগকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন। 

২০১৭ সালে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার নেন এপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী সম্পাদক জুলি পেইস। তখন তিনি হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা ছিলেন। ফাইল ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার নেন এপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী সম্পাদক জুলি পেইস। তখন তিনি হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা ছিলেন। ফাইল ছবি: এপির সৌজন্যে

এক বিবৃতিতে জুলি বলেন, 'এটা খুবই উদ্বেগজনক যে ট্রাম্প প্রশাসন এপিকে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য শাস্তি দিচ্ছে।'

'এপি তাদের প্রতিবেদনে কী লিখেছে, সেটার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ওভাল অফিসে প্রবেশে বিধিনিষেধ দেওয়া শুধু স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের উদ্যোগই নয়, একইসঙ্গে এটি (মার্কিন সংবিধানের) প্রথম সংশোধনীরও লঙ্ঘন' , যোগ করেন তিনি। 

ট্রাম্প প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে এসব উদ্যোগের বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি। অন্য কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন কী না, সেটাও জানা যায়নি।

গণমাধ্যমের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈরিতার বিষয়টি নতুন নয়। আবাসন ব্যবসায়ী থাকাকালীন সময় থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবেও একাধিকবার সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি তিক্ততায় জড়িয়েছেন।

২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার আগেই ট্রাম্প গালফ অব মেক্সিকোর নাম বদলানোর কথা জানান। ইতোমধ্যে তিনি এ বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই দিয়েছেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্যরা বিষয়টি হালকা দৃষ্টিতেই দেখছেন।

বিশেষজ্ঞদের মত, কাগজেকলমে নাম বদলালেও মানুষ এই উপসাগরকে মেক্সিকো উপসাগর নামেই অভিহিত করবে। 

প্রায় ৪০০ বছর আগে এই উপসাগরের নামকরণ হয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্তে হলেও মেক্সিকোর তীরেও এর উল্লেখযোগ্য অংশ পড়েছে।

ট্রাম্পের শপথের তিন দিন পর এপি জানিয়েছিল, তারা গালফ অব মেক্সিকো নামটিই ব্যবহার করবে থাকবে। এপি এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেয়, বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যম হিসেবে তারা কোনো জায়গার নাম ও ভৌগলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সর্বজনবিদিত ও বেশিরভাগ মানুষ সহজে চিনতে ও বুঝতে পারে, এমন ভাষা ব্যবহার অব্যাহত রাখবে।

গুগল ম্যাপে বদলেছে গালফ অব মেক্সিকোর নাম। ছবি: এএফপি
গুগল ম্যাপে বদলেছে গালফ অব মেক্সিকোর নাম। ছবি: এএফপি

এপি স্টাইল বা স্টাইলবুকে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এটি এমন একটি নীতিমালা, যা সারা বিশ্বে হাজারো সাংবাদিক ও অন্যান্য লেখকরা অনুসরণ করে থাকেন।

পেন আমেরিকার জার্নালিজম অ্যান্ড মিসইনফরমেশান প্রোগ্রামের পরিচালক টিম রিচার্ডসন বলেন, এপির সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে। এই সংশোধনী মতে, সরকার সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন হোয়াইট হাউসের এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়ে এই বিধিনিষেধ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।

এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ইউজিন ড্যানিয়েলস বলেন, 'সংবাদমাধ্যমে কীভাবে সংবাদ লেখা হবে, সেটা হোয়াইট হাউজ বলে দিতে পারে না। কোনো সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকের সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলে সেই সংবাদমাধ্যমকে শাস্তি দেওয়ারও কোনো এখতিয়ার নেই হোয়াইট হাউসের'

ইতোমধ্যে গুগল ম্যাপ ও অ্যাপল ম্যাপে শুধু মার্কিন ইউজারদের জন্য মেক্সিকো উপসাগরের নাম 'গালফ অব আমেরিকা' করা হয়েছে।

মজার বিষয় হল, মেক্সিকোর ইউজাররা শুধু গালফ অব মেক্সিকো দেখছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের বাকি সব দেশের মানুষ দুইটি নামই দেখতে পাচ্ছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Wait for justice: 21 years and counting

The final judgment in the cases is now pending with the Appellate Division as trial proceedings have been completed at the lower court and HC Division

11h ago