বাইডেনের সময়ে ‘অচ্ছুৎ’ সৌদির ট্রাম্পের আমলে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যস্থতায় ফিরে আসা

কোলাজ ছবিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, সৌদি যুবরাজ বিন সালমান ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
কোলাজ ছবিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, সৌদি যুবরাজ বিন সালমান ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে কার্যত অচ্ছুৎ হয়ে পড়া সৌদি আরব ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতির খেলায় সগৌরবে ফিরে এসেছে।

আজ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বৈঠকে আয়োজক-মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের পাশাপাশি শুক্রবার গাজা নিয়ে আরব নেতাদের সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে রিয়াদ। 

আজ মঙ্গলবার এএফপির প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

সৌদিতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বৈঠক ও আরব সম্মেলন

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে রিয়াদে এসে পৌঁছান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে রিয়াদে এসে পৌঁছান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ছবি: এএফপি

আজকেই সৌদি আরবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দুই দেশের সম্পর্ক পুন:স্থাপন ও ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের চুক্তি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হবে।

একইসঙ্গে দুই দেশের কর্মকর্তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আসন্ন বৈঠকের জন্যেও প্রস্তুতি নেবেন।

সৌদি সরকারের উপদেষ্টা আলি শিহাবি বলেন, 'এটা সৌদির জন্য বড় অর্জন। দুই পরাশক্তি তাদের মধ্যে বিদ্যমান মতভেদ দূর করতে রিয়াদে এসেছে।'

'এটা খুবই মর্যাদাপূর্ণ বিষয় এবং এতে সৌদির অসামরিক প্রভাবের প্রকাশ ঘটেছে', এএফপিকে জানান তিনি।

ওই বৈঠকের পর শুক্রবার রিয়াদে আরব নেতাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে ট্রাম্পের গাজা দখল করার বা কিনে নেওয়ার এবং সেখান থেকে অন্তত ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বিতাড়ন করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।

উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের (জিসিসি) ছয় দেশের নেতাদের পাশাপাশি এই সম্মেলনে মিশর ও জর্ডানের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত থাকবেন। ট্রাম্প তার প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের ওই দুই দেশে পাঠানোর কথা বলেছেন। 

'একঘরে' সৌদি আরবের দৃশ্যপটে ফেরা

প্রয়াত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
প্রয়াত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র হলেও গাজার যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নেতৃত্ব দেয় কাতার।

বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য তথা আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্গনে সৌদির ফিরে আসা খুব একটা সহজ ছিল না।

২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর থেকেই কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্রাত্য হয়ে পড়ে সৌদি আরব। 

কায়রোভিত্তিক আল-আহরাম সেন্টার ফর পলিটিকাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের কর্মকর্তা রাবহা সেইফ আল্লাম বলেন, 'ইউক্রেন সংকট নিয়ে পশ্চিম ও রাশিয়ার মধ্যে যে মতপার্থক্য ও সংঘাত রয়েছে, সেটারই সুযোগ নিয়েছে সৌদি আরব, বিশেষত, তেলের ব্যাপারে। এই ভূমিকা পালন করে এমন কি রিয়াদ পশ্চিম বা রাশিয়া, কোনো মিত্রকেই হারায়নি।'

'এসব কিছুই খাশোগির ঘটনার পর একা হয়ে পড়া সৌদি আরবকে আবারও দৃশ্যপটে ফিরে আসতে সহায়তা করেছে', যোগ করেন তিনি।

নিরপেক্ষ রিয়াদ 'সবার বন্ধু'

বিন সালমানের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক। ফাইল ছবি: রয়টার্স
বিন সালমানের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে বিবেচিত হলেও ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ থেকেছে সৌদি আরব। 

পাশাপাশি, জ্বালানি নীতির আওতায় রাশিয়ার সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে রিয়াদ।

অপরদিকে, ইউক্রেনেও মানবিক ত্রাণ হিসেবে হাজারো লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে তেল-সমৃদ্ধ দেশটি।

২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর বেশ কয়েকবার সৌদি সফর করেন ইউক্রেনের জেলেনস্কি। ২০২৩ সালের মে মাসে আরব লিগের সম্মেলনে যোগ দিতে এসে দেশটির কার্যত শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।

সৌদি আরবের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

ট্রাম্প-পুতিন। ফাইল ছবি: এএফপি
ট্রাম্প-পুতিন। ফাইল ছবি: এএফপি

প্রায় তিন বছর ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই হয়নি। যার ফলে, সৌদির এই বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

সৌদি পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ উমর করিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার এই বৈঠক 'সৌদি আরবের জন্য খুবই উল্লেখযোগ্য, কারণ এতে কূটনীতির অঙ্গনে দেশটির মর্যাদা বেড়েছে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে রিয়াদ।'

'এই বৈঠক এটাই ইঙ্গিত করছে যে সৌদি নেতৃবৃন্দ, বিশেষত, বিন সালমান ট্রাম্প ও পুতিন, উভয়ের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, সৌদি যুবরাজ রিয়াদের 'কূটনীতিক কার্যক্রম' থেকে অনেক কিছু অর্জন করতে পারেন। এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে একজন 'গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' হিসেবেও তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পথেই রয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

1h ago