ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার 'জবাবে’ রিয়াদে আরব নেতাদের বৈঠক

১৫ মাসের যুদ্ধে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা। ছবি: এএফপি
১৫ মাসের যুদ্ধে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা। ছবি: এএফপি

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে একঘরে করে রাখা হয়েছিল সৌদি আরবকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক কূটনীতিক অঙ্গনে বড় আকারে ফিরে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের এই তেলসমৃদ্ধ দেশ। এই ধারায় আজ আরব নেতাদের জরুরি বৈঠকের আয়োজকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেশ।

আজ শুক্রবার এই বৈঠকের বিষয়টি জানিয়েছে এএফপি।

ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর এক বিস্ময়কর ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানান, গাজার দখল নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে প্রায় ২৪ লাখ ফিলিস্তিনিদের জর্ডান-মিশরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও জানান তিনি। গাজাকে 'মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা' হিসেবে গড়ে তোলার এই প্রস্তাবে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে।

পরবর্তীতে উল্লেখিত দুই দেশের পাশাপাশি বেশিরভাগ আরব দেশ এ বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে।

আজকের বৈঠকে ট্রাম্পের প্রস্তাবের 'পাল্টা জবাব' দেওয়া নিয়ে আলোচনা হবে।

একতাবদ্ধ আরব

যুদ্ধবিরতি চলাকালীন উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির সামনে কাপড় শুকাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিরতি চলাকালীন উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির সামনে কাপড় শুকাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। ছবি: এএফপি

ট্রাম্পের পরিকল্পনা আরব দেশগুলোকে একতাবদ্ধ করলেও চলমান যুদ্ধ শেষে গাজার শাসনভার কে বা কারা নেবেন এবং গাজা পুনর্নির্মাণের অর্থায়ন কী ভাবে হবে, সে বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে।

সৌদি পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ উমর করিম এই সম্মেলনকে গত কয়েক দশকের মধ্যে বৃহত্তর আরব বিশ্ব ও ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে 'অর্থবহ' ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।

সৌদি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সূত্র এএফপিকে জানান, আরব নেতারা 'ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার পাল্টা জবাব দিতে এ অঞ্চলের পুনর্নির্মাণ' নিয়ে আলোচনা করবেন।

ইসরায়েল-হামাসের প্রায় দেড় বছরেরও যুদ্ধের পর গাজা উপত্যকা বড় আকারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব মতে, গাজার পুনর্নির্মাণে ৫৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হবে।

মিশরের পরিকল্পনা

ট্রাম্প ও জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি: এএফপি
ট্রাম্প ও জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি: এএফপি

১১ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়াশিংটনে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ জানান, সামনে আগানোর জন্য মিশর একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে।

সৌদি সূত্র জানান, আজকের বৈঠকে 'মিশরের পরিকল্পনার একটি সংস্করণ' নিয়ে আলোচনা হবে।

সৌদি প্রেস এজেন্সি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করে, রিয়াদের এই সম্মেলনে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের ছয় সদস্য রাষ্ট্র, মিশর ও জর্ডান অংশ নিচ্ছে।

আগামী ৪ মার্চ মিশরে বৃহত্তর পরিসরে আরব লীগের সম্মেলন আয়োজন হবে। ওই সম্মেলনের আলোচনাসূচিতে আজকের 'অনানুষ্ঠানিক, বন্ধুত্বপূর্ণ' বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো যুক্ত করা হবে।

তিন ধাপে গাজার পুনর্নির্মাণ

উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ধ্বংসস্তুপের মাঝে তাঁবু খাটিয়ে বাস করছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ধ্বংসস্তুপের মাঝে তাঁবু খাটিয়ে বাস করছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

গাজার পুনর্নির্মাণ এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে, কারণ ওই অঞ্চল দখলের কারণ হিসেবে এই পুনর্নির্মাণের যুক্তিই দিয়েছেন ট্রাম্প।

মিশর এখনো তাদের উদ্যোগের বিস্তারিত জানায়নি। তবে সাবেক মিশরীয় কূটনীতিবিদ মোহামেদ হেগাজি বলেন, 'তিনটি কারিগরি ধাপে, তিন থেকে পাঁচ বছরে পুনর্নির্মাণ শেষ হবে।' 

তিনি বলেন, প্রথম ধাপের ছয় মাসে মূলত ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার ও প্রাথমিক 'ঘুরে দাঁড়ানোর' দিকে নজর দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় ধাপের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। ওই ধাপে মূলত বড় আকারে পুনর্নির্মাণ শুরু হবে এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থার দিকে নজর দেওয়া হবে।

হেগাজি জানান, তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে নগর পরিকল্পনা, আবাসন পুনর্নির্মাণ, সব জরুরি সেবা চালু করা এবং 'দুই রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে একটি রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ' করা হবে।

এ বিষয়গুলো জানেন এমন এক আরব কূটনীতিবিদ এএফপিকে বলেন, 'এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্থায়ন।'

এই পরিকল্পনায় পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার প্রশাসন প্রক্রিয়ার ওপরও আলোকপাত করা হবে। ২০০৭ সাল থেকে হামাসের দখলে থাকলেও সংশ্লিষ্টরা চাইছেন যুদ্ধের পর একটি নিরপেক্ষ ও অন্য কোনো দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন একটি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা

তিনি বলেন, 'শাসকদের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। তারা রাজনৈতিক ও আইনি দিক দিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকবেন।'

'আগামী দিনগুলোতে রাজনীতির মঞ্চ থেকে সরে দাঁড়াবে হামাস', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
enforced disappearance in Bangladesh

Enforced disappearance: Anti-terror law abused most to frame victims

The fallen Sheikh Hasina government abused the Anti-Terrorism Act, 2009 the most to prosecute victims of enforced disappearance, found the commission investigating enforced disappearances.

8h ago