৩ বছরে ইউক্রেনকে ৬৬ বিলিয়ন ডলারের যেসব অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ডোভার বিমানঘাঁটি থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র-গোলাবারুদ পাঠানো হচ্ছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের ডোভার বিমানঘাঁটি থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র-গোলাবারুদ পাঠানো হচ্ছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৬৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে কিয়েভকে। এক সময় দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র হিসেবে বিবেচিত হলেও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওয়াশিংটন এ ধরনের সব সহায়তা বন্ধ করেছে।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আট লাখ তিন হাজার ৯৮০ কোটি ডলারের সহায়তায় ট্যাংক, হেলিকপ্টার, ড্রোন, মর্টারসহ আরও নানা অস্ত্র রয়েছে। এমন কি, নিজ দেশের অস্ত্রের পাশাপাশি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মিত ট্যাংক ও হেলিকপ্টারও পেয়েছেন ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কি।

তৎকালীন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সহায়তার অনুমোদন দেন। সে সময় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, তারা 'ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন জুগিয়ে যাবে'।

তবে ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত পালটে যায় দৃশ্যপট।

এ যাবত কিয়েভকে কি কি অস্ত্র দিয়েছে ওয়াশিংটন, তার একটি বিবরণ প্রকাশ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই প্রতিবেদনে তালিকার উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকাশ করা হলো।

আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা

হিমার্স মিসাইল সিস্টেম। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হিমার্স মিসাইল সিস্টেম। ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার আক্রমণ কৌশলের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল আকাশপথে বিমান হামলা। এ কারণে ওয়াশিংটন কিয়েভকে অত্যাধুনিক আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেয়, যার মধ্যে ছিল তিনটি প্যাট্রিয়ট সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ব্যাটারি। ইউরোপের মিত্ররাও একই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়েছে।

তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আছে ১২টি এনএএসএএম, হক সিস্টেম ও এর আনুষঙ্গিক গোলাবারুদ এবং তিন হাজারেরও বেশি বিমান বিধ্বংসী স্টিংগার মিসাইল।

এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপযোগিতা বাড়াতে ২১টি নজরদারি রাডার পাঠানো হয়। সঙ্গে ছিল ইউক্রেনের পুরনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পশ্চিমের লঞ্চার ও মিসাইলকে সমন্বিত করার উপকরণ ও সরঞ্জাম।

মিসাইল, মর্টার

এক ইউক্রেনীয় সেনা হাউইটজার কামান প্রস্তুত করছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
এক ইউক্রেনীয় সেনা হাউইটজার কামান প্রস্তুত করছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ওয়াশিংটন ২০০টিরও বেশি ১৫৫ মিলিমিটার হাউইটজার কামান ও ত্রিশ লাখ কামানের গোলা পাঠিয়েছে ইউক্রেনকে। পাশাপাশি আরও ৭২টি ১০৫ মিলিমিটার হাউইটজার ও ১০ লাখ রাউন্ড গোলা এবং কম পক্ষে সাত লাখ মর্টারও পেয়েছেন জেলেনস্কি।

গোলাবারুদসহ হালকা সাঁজোয়া যানে বসানো ৪০টি হিমার্স রকেট লঞ্চারও দেওয়া হয় কিয়েভকে।

যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে রাশিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বড় উপকরণ হয়ে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১০ হাজার ট্যাংক বিধ্বংসী জ্যাভেলিন মিসাইল।

সব মিলিয়ে ট্যাংক ও অন্যান্য সামরিক যান ধ্বংস করতে সক্ষম এমন এক লাখ ২০ হাজার অস্ত্র পেয়েছে কিয়েভ। পাশাপাশি ১০ হাজার টিওডব্লিউ ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইলও দেওয়া হয় তাদেরকে।

ছোট অস্ত্রের মধ্যে ৫০ কোটি রাউন্ড গুলি ও গ্রেনেড দেওয়া হয় ইউক্রেনীয় সেনাদের।

ট্যাংক, হেলিকপ্টার

২০২৩ এর জানুয়ারিতে আব্রামস ট্যাংক পায় ইউক্রেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
২০২৩ এর জানুয়ারিতে আব্রামস ট্যাংক পায় ইউক্রেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

পেন্টাগন সরাসরি ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দিতে অস্বীকার জানালেও বাইডেন প্রশাসন ২০টি সোভিয়েত নকশায় নির্মিত এমআই-১৭ সামরিক হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে ইউক্রেনকে। পাশাপাশি, বিভিন্ন মডেলের অসংখ্য ড্রোনও পেয়েছে কিয়েভ।

সময় নিয়ে হলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ওয়াশিংটন তাদের সবচেয়ে উন্নত ও অত্যাধুনিক মডেলের আব্রামস ট্যাংক দেয় কিয়েভকে। ৩১টি আব্রামস ট্যাংকের পাশাপাশি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মিত ৪৫টি টি-৭২বি ট্যাংকও পাঠানো হয় কিয়েভকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় আরও আছে ৩০০টি ব্র্যাডলি সাঁজোয়া যান, এক হাজার ৩০০ এপিসি, পাঁচ হাজারেরও বেশি হামভি সামরিক যান ও ৩০০টি সশস্ত্র অ্যাম্বুলেন্স। 

তিন বছরে ওয়াশিংটন ১০০টি টহল নৌকা, উপকূল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্লেমোর মাইন, স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা, নাইট ভিশন গগল ও এক লাখেরও বেশি বর্ম (বডি আর্মার) পাঠিয়েছে।

২০ জানুয়ারির পর

কাঁধে বহনযোগ্য ট্যাংক বিধ্বংসী জ্যাভেলিন মিসাইল। ফাইল ছবি: রয়টার্স
কাঁধে বহনযোগ্য ট্যাংক বিধ্বংসী জ্যাভেলিন মিসাইল। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ওপরের তালিকাটি ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হালনাগাদ করা। বাইডেন প্রশাসনের শেষ কয়েকটি কাজের মধ্যে একটি ছিল এই তালিকা তৈরি করা।

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে 'জরুরি গোলাবারুদ' সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে, যার অনুমোদন দিয়েছিল 'পূর্ববর্তী প্রশাসন'। এর মধ্যে ছিল ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র ও কামানের গোলা।

তবে আজ মঙ্গলবার থেকে সব ধরনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করেছে ওয়াশিংটন।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করেছেন যে তিনি শান্তি চান। আমাদের অংশীজনদেরও এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা আমাদের সহায়তা স্থগিত ও পর্যালোচনা করছি, যাতে এটি সমাধান তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।'

Comments

The Daily Star  | English
Touhid Hossain Rohingya statement

Rohingya repatriation unlikely amid Myanmar’s civil war: foreign adviser

He highlights the 2017 mass exodus—prompted by brutal military crackdowns was the third major wave of Rohingyas fleeing Myanmar

1h ago