জেলেনস্কির পোশাকই কি কাল হলো?

বৈঠকে নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডায় জড়ান ট্রাম্প-জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি
বৈঠকে নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডায় জড়ান ট্রাম্প-জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে দুর্লভ খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তির বিষয়ে আলোচনায় বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিন্তু অল্প সময়েই সেই আলোচনা রূপ নেয় তুমুল বাগবিতণ্ডায়। ভেস্তে যায় চুক্তি ও আলোচনা। বৈঠকের পর থেকেই এই নজিরবিহীন ঘটনার মূল কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কেউ কেউ বলছেন, জেলেনস্কির পোশাকেই চটেছেন ট্রাম্প। এমনটাই দাবি করা হয়েছে কিছু গণমাধ্যমের  প্রতিবেদনে।

যে কারণে স্যুট পরেন না জেলেনস্কি

জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসের সামনে গাড়ি থেকে নেমে আসার পর ট্রাম্প তাকে স্বাগত জানান। ছবি: এএফপি
জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসের সামনে গাড়ি থেকে নেমে আসার পর ট্রাম্প তাকে স্বাগত জানান। ছবি: এএফপি

গত শুক্রবার জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসের সামনে গাড়ি থেকে নেমে আসার পর ট্রাম্পের প্রথম মন্তব্য ছিল ইউক্রেন নেতার পোশাক নিয়ে।

জেলেনস্কিকে স্বাগত জানানোর সময় ট্রাম্প বলেন, 'আজ আপনি তো বেশ সেজেগুজে (ওয়েল ড্রেসড) এসেছেন।'

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই স্যুট-টাই ও ফুল হাতা শার্ট পরে বৈঠকে যাওয়া বাদ দিয়েছেন জেলেনস্কি।

গত তিন বছরে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, মার্কিন কংগ্রেসের সব সদস্যের সামনে দেওয়া বিবৃতিসহ কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকেই জেলেনস্কিকে এ ধরনের 'আনুষ্ঠানিক' পোশাক পরতে দেখা যায়নি।

ইউক্রেনের নেতা জানান, তিনি রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে লড়তে থাকা সেনাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সামরিক পোশাক পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে জেলেনস্কির এই মনোভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা করে আসছে। ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য-সহায়তার সমালোচনাকারী ডানপন্থিরা এ বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।

শুক্রবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও জেলেনস্কির ওই 'আলোচিত' বৈঠকে বিষয়টি পুরো বিশ্ববাসীর সামনে চলে আসে।

পোশাক বিতর্কের শুরু যেভাবে

 ট্রাম্প, ভ্যান্স ও জেলেনস্কিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ওভাল অফিসে বৈঠক করছেন। ছবি: এএফপি
ট্রাম্প, ভ্যান্স ও জেলেনস্কিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ওভাল অফিসে বৈঠক করছেন। ছবি: এএফপি

বৈঠকের আগে জেলেনস্কিকে এক মার্কিন সাংবাদিক তার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করেন। সেখান থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত হয় বলে কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ওই সাংবাদিক অভিযোগ করে বলেন যে স্যুট না পরে জেলেনস্কি এই মাহেন্দ্রক্ষণকে অপমান করেছেন। সাংবাদিকের এই মন্তব্যে নিমিষেই কক্ষের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ গুরুগম্ভীর হয়ে পড়ে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেখানে উপস্থিত থাকা গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।

অল্প সময় পর, সম্মান ও কৃতজ্ঞতার মতো প্রসঙ্গ তুলে এক নজিরবিহীন বিতর্কের সূত্রপাত ঘটানো হয়। লাইভ টিভিতে তুমুল বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জেলেনস্কি। সারাবিশ্বের মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখেন সেই বিরল দৃশ্য।

আপনি স্যুট পরেন না কেন?

কনজারভেটিভ কেবল নেটওয়ার্ক রিয়েল আমেরিকাস ভয়েস নামের সংবাদমাধ্যমের প্রধান হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি ব্রায়ান গ্লেন এই প্রশ্নটি জেলেনস্কির দিকে ছুঁড়ে দেন।

'আপনি স্যুট পরেন না কেন? আপনার কি স্যুট নাই?'

তার ভাষ্য, 'অনেক আমেরিকান মনে করেন (এ ধরনের পোশাক পরে) আপনি এই অফিসকে (হোয়াইট হাউস) অসম্মান করছেন। তারা এটা পছন্দ করেন না।'

রুশ আগ্রাসনের আগে এভাবে স্যুট-টাই পরেই জনসম্মুখে আসতেন জেলেনস্কি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
রুশ আগ্রাসনের আগে এভাবে স্যুট-টাই পরেই জনসম্মুখে আসতেন জেলেনস্কি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

এই প্রশ্নের আগ পর্যন্ত জেলেনস্কি বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সুরে, কূটনৈতিক ভব্যতা মেনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই প্রশ্নের পর তাকে ক্লান্ত-বিরক্ত দেখায়।

'যুদ্ধ শেষ হলে স্যুট পরব,' বলেন জেলেনস্কি।

এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই সাংবাদিকের প্রতি একটি তির্যক মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, 'হয়তো আপনার মতো পোশাক পরব। হয়তো আরও ভালো কিছু। আমি জানি না। হয়তো আরও সস্তা কিছু পরব।'

তার এই বক্তব্যে কক্ষে উপস্থিত ব্যক্তিদের কয়েকজন হেসে উঠেন।

বিশ্লেষকদের মতে, গ্লেনের ওই প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের সার্বিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। জেডি ভ্যান্স ও অন্যান্যরা মনে করেন, ইউক্রেনের নেতা তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পেয়ে আসলেও এ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা ও সম্মান জানাচ্ছেন না।

গ্লেনের প্রশ্নের পর অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প আবারও পোশাকের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

জেলেনস্কির দিকে আঙুল দেখিয়ে ট্রাম্প বলেন, 'আপনার পোশাক পছন্দ করি। আমি মনে করি, তিনি সুন্দর পোশাক পরেছেন।'

তবে এটা ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, বৈঠকের আগে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জেলেনস্কিকে স্যুট পরার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি সেই অনুরোধ না মানায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তবে আরও ২০ মিনিট প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন দুই নেতা। এরপর জেডি ভ্যান্স প্রশ্নোত্তরে বাধা দিলে ওই নজিরবিহীন বাদানুবাদ শুরু হয়।

বৈঠকের অকাল অবসানে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাচ্ছেন জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি
বৈঠকের অকাল অবসানে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাচ্ছেন জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

ভ্যান্স বারবার 'সম্মান' (ইংরেজিতে রেসপেক্ট) শব্দটি বলতে থাকেন। এ সময় তিনি জেলেনস্কিকে 'মি. প্রেসিডেন্ট' বলে অভিহিত করেন। কিন্তু প্রতিবার জবাব দেওয়ার সময় ভ্যান্সকে ভাইস প্রেসিডেন্ট না বলে 'জেডি' বলে অভিহিত করেন জেলেনস্কি।

ভ্যান্স আরও বলেন, 'আমার মতে, ওভাল অফিসে এসে এ বিষয়টি আমেরিকান গণমাধ্যমের সামনে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে আপনি অসম্মানজনক আচরণ করেছেন।'

ভ্যান্সের এই মন্তব্যের আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার আগ্রাসন ও পরবর্তীতে ওই অঞ্চল দখল করে নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন জেলেনস্কি।

এরপর থেকেই আলোচনায় অবনতি হতে থাকে। পরবর্তীতে স্যুটবিহীন জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং দুই মিত্রের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়।

Comments

The Daily Star  | English
Touhid Hossain Rohingya statement

Rohingya repatriation unlikely amid Myanmar’s civil war: foreign adviser

He highlights the 2017 mass exodus—prompted by brutal military crackdowns was the third major wave of Rohingyas fleeing Myanmar

1h ago