অনির্বাচিত আমলাদের দেশ শাসনের দিন শেষ: ট্রাম্প

ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসে দেওয়া প্রথম বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, 'আমেরিকা ইজ ব্যাক (আমেরিকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে)'। পাশাপাশি তিনি দেশের আমলাদের প্রতিও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাদের দিন ঘনিয়ে এসেছে।

আজ বুধবার এএফপির প্রতিবেদনে এ বিষয়টি জানা গেছে।

ট্রাম্পের এই বক্তব্য ছিল কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দেওয়া দীর্ঘতম ভাষণ।

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার

ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, যার প্রতিফলন দেখা গেছে আজকের বক্তব্যে।

এ ক্ষেত্রে পপুলার ভোটে জয়ী প্রেসিডেন্টের পাশে রয়েছে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট।

ইলন মাস্ককে পাশে নিয়ে ট্রাম্প কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। ইতোমধ্যে হাজারো কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। বেশ কিছু সংস্থার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদেশে ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগও বন্ধ রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, 'অনির্বাচিত আমলাদের দেশ শাসনের দিন শেষ'।

ইলন মাস্কের প্রশংসা

কংগ্রেসের উদ্দেশে স্যালুট করছেন মাস্ক। ছবি: এএফপি
কংগ্রেসের উদ্দেশে স্যালুট করছেন মাস্ক। ছবি: এএফপি

ভাষণের পুরোটা সময় জুড়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্কের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইলন মাস্কের বিতর্কিত আগ্রাসনের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন মাত্র 'কাজ শুরু করেছে'।

এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ভাষণে ট্রাম্প বলেন, 'আমেরিকান স্বপ্নকে কেউ থামাতে পারবে না'।

এর আগে দীর্ঘতম বক্তব্যের রেকর্ড ছিল বিল ক্লিনটনের হাতে।

ট্রাম্পের প্রতিটি লাইনকে জোরালো করতালি দিয়ে সাধুবাদ জানান রিপাবলিকান দলের সদস্যরা। দুইবার ট্রাম্প ইলন মাস্কের কথা আলাদা করে উল্লেখ করলে মাস্ক দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের উদ্দেশে স্যালুট করেন।

ডেমোক্র্যাটদের প্রতিবাদের মাঝে অদম্য ট্রাম্প 

ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রায় পুরোটা সময় কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। 

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান অ্যাল গ্রিনকে ক্যাপিটল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি বারবার ট্রাম্পকে স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প নিয়ে বিরক্ত করছিলেন এবং তাকে লাঠি উঁচিয়ে শাসাচ্ছিলেন।

অন্যান্য ডেমোক্র্যাট সদস্যরা 'ভুয়া', 'মাস্ক চুরি করেন' ও 'এটা মিথ্যা কথা' লেখা ব্যানার উঁচিয়ে নীরবে প্রতিবাদ জানান।

এক পর্যায়ে অসংখ্য ডেমোক্র্যাট 'জানুয়ারি ছয়' বলে চিৎকার করে ওঠেন। ২০২১ সালের ওই দিনে ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটলে সহিংস হামলা চালিয়েছিল।

তবে ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পকে এসব উদ্যোগ টলাতে পারেনি। তিনি দ্বিগুণ উৎসাহে তার ছয় সপ্তাহের শাসনামলের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও অর্জন তুলে ধরেন তার বক্তব্যে।

তিনি অঙ্গীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং যেকোনো মূল্যে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে অনেক ডেমোক্র্যাট সদস্য ওয়াক আউট করেন।

অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উত্তরণ

ট্রাম্প দাবি করেন, তার পূর্বসূরি জো বাইডেন দেশকে 'অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের' মধ্যে রেখে গেছেন এবং তিনি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছেন।

তিনি কানাডা, চীন ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে আরোপ করা শুল্ক ও এর ফলে শুরু হওয়া শুল্ক যুদ্ধের পক্ষে যুক্তি দেন।

ট্রাম্প বলেন, 'দশকের পর দশকের পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ আমাদেরকে শোষণ করেছে।'

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধে মার্কিন রপ্তানিকারকরা বিশেষভাবে ক্ষতির শিকার হবে, বিশেষ, রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ খামারিরা।

তবে ট্রাম্প দাবি করেন, শুল্ক আরোপে 'সামান্য সমস্যা' হবে।

পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যা বললেন

বক্তব্য শেষে কংগ্রেস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
বক্তব্য শেষে কংগ্রেস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

গত শুক্রবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডায় জড়ানোর পর আজকের ভাষণে ইউক্রেন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, 'আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত ইউক্রেন।'

পাশাপাশি, আবারও তিনি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার এবং ডেনমার্কের কাছ থেকে 'যেভাবেই হোক না কেন', গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া

প্রথাগতভাবে, ট্রাম্পের বক্তব্যের পর পাল্টা বক্তব্য রাখার সুযোগ পায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।

এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের 'বন্যার মতো ভেসে আসা' প্রথাবিরুদ্ধ কার্যক্রম ও কৌশলের জবাব দিতে হিমশিম খেয়েছে গত নির্বাচনের পরাজিত দলটি, যার প্রতিফলন দেখা যায় পাল্টা বক্তব্যে।

সিনেটের এলিসা স্লটকিন মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের উদ্দেশে একটি 'ভদ্র' বক্তব্য রাখেন। তিনি উল্লেখ করেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে ট্রাম্প ও মাস্ক 'বেপরোয়া' আচরণ করছেন এবং বিদেশে 'আমেরিকান নেতৃত্বের' বিষয়টি তারা পুরোপুরি উপেক্ষা করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt secretly backing wrongdoers?

BNP acting chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of Lal Chand, alias Sohag, due to its silent support for such incidents of mob violence.

2h ago