ট্রাম্প-শুল্কের জেরে শার্টসহ যে ৫ পণ্যের দাম বাড়তে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে সই করার সময় ফুরিয়ে আসছে। দেশটির বাণিজ্য অংশীদাররা শেষ মুহূর্তের দরকষাকষিতে ব্যস্ত। যদি অংশীদাররা ১ আগস্টের সময়সীমার মধ্যে চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মার্কিন ভোক্তাদের জীবন বেশ দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। বেড়ে যেতে পারে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম।
আজ বুধবার এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, উচ্চ মাত্রার শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি পণ্যের আমদানিকারকদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার খরচ বেড়ে যাবে।
স্বভাবতই, এই বাড়তি খরচের বোঝা টানতে হবে দেশটির সাধারণ জনগণকেই।
এতে মার্কিনিরা সার্বিকভাবে কেনাকাটা কমিয়ে দিতে পারে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প-শুল্ক কফি বিন, ভাত, কোকোয়া, সীফুড অথবা ইলেকট্রনিক্সের দামে বাড়াতে পারে।
এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পণ্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হলো।
কফি
যুক্তরাষ্ট্রে কফির মোট চাহিদার ৯৯ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় বলে জানিয়েছে জাতীয় কফি সংস্থা। সংস্থাটি এএফপিকে জানিয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিক দৈনিক অন্তত এক কাপ কফি পান করে থাকে।
ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও ভিয়েতনাম থেকেই আসে বেশিরভাগ কফি।

৩০ শতাংশ কফির জোগান দেয় ব্রাজিল। তবে ১ আগস্ট থেকে ব্রাজিলের পণ্য আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
অপরদিকে, চুক্তি হলেও ভিয়েতনাম থেকে আসা পণ্যে বাড়তি ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
শার্ট
শার্ট ও সোয়েটারের মত গুরুত্বপূর্ণ পোশাকেরও দাম বাড়বে।
আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির অর্ধেকেরও বেশি এসেছে চীন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে।
উল্লেখিত তিন দেশই ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে বড় আকারের শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে।
চীনের পণ্য আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্কের ওপর বাড়তি ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। মোট আমদানির এক তৃতীয়াংশ আসে চীন থেকে।
১২ আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে দুই দেশের শুল্ক বাড়ছে না। তবে এর মধ্যে কোন চুক্তি না হলে চীন থেকে আসা পোশাকের ওপর আরও শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পোশাকের দামে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে ২০ ও ১১ শতাংশ আমদানি হয়।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। দরকষাকষি সফল না হলে ১ আগস্ট থেকে এই হারেই বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
সুগন্ধি চাল
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে বড় চাল আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি বছর দেশটি ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করে।
দেশটির মোট চাল আমদানির ৬০ শতাংশেরও বেশি সুগন্ধি জাতের এবং এগুলো মূলত থাইল্যান্ড থেকে আসা জেসমিন রাইস ও ভারত-পাকিস্তান থেকে আসা বাসমতি চাল।
শুক্রবার থেকে থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের পণ্যে যথাক্রমে ৩৬, ২৬ ও ২৯ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হতে পারে।
কোকোয়া
আইভরি কোস্ট ও ইকুয়েডর থেকে প্রতি বছর গড়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যমানের কোকোয়া বিন আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র।
আইভরি কোস্টের পণ্যে ২১ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

পাশাপাশি, বছরে ৫৭৬ মিলিয়ন ডলারের কোকোয়া বাটারও আমদানি করে ওয়াশিংটন। এই পণ্যের মূল সরবরাহকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। উভয় দেশের পণ্যে যথাক্রমে ১৯ ও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে যাচ্ছে।
ইলেকট্রনিক্স
সুনির্দিষ্ট দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপের পাশাপাশি তামা আমদানির ওপর সার্বজনীন ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক আরোপ হতে পারে।
কনসালটিং প্রতিষ্ঠান বিসিজি হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এতে আমদানিকৃত অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তামার দাম প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বেড়ে যেতে পারে, যা নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মাণ খাত ও ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
Comments