গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আত্মীয়র মরদেহের সামনে মাতম করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আত্মীয়র মরদেহের সামনে মাতম করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।

আজ রোববার হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির বাস্তবায়ন হয়। চুক্তির প্রথম ধাপ চলাকালীন দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী ভাবে যুদ্ধের নিরসন, হামাসের হাতে বন্দী থাকা সব জিম্মির মুক্তি ও গাজা থেকে চিরতরে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কিন্তু প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ওই আলোচনায় কোনো আগ্রহ দেখায়নি ইসরায়েল। বরং হামাসকে প্রস্তাব দিয়েছে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে। স্বভাবতই, এতে রাজি হয়নি হামাস। ১ মার্চ প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষে চুক্তি বাড়ানোর চাপ দিতে থাকে ইসরায়েল। এই চাপের অংশ হিসেবে গাজায় সব ধরনের পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় আবারও বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল। 

এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় নিহত হন এক হাজার ২০০ মানুষ ও হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন ব্যক্তি। ওই হামলার পর গাজায় প্রতিশোধমূলক ও নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা আজও চলছে।

ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জিম্মি মুক্তি পেলেও এখনো গাজায় ৫৯ জন জিম্মি আটক আছেন। তাদের মধ্যে ২৪ জন সর্বশেষ সংঘাত শুরুর আগে জীবিত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বড় আকারে হামলা চালিয়েও হামাসকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল।

২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনটি।

জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির আওতায় ৩৩ জন জিম্মি মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি কারাগারে আটক হাজারো ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পান।

প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, তিন ধাপে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে ওই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে সংঘাতের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা ছিল। তবে শুরু থেকেই এই চুক্তিকে 'ভঙ্গুর' বলে এসেছেন বিশ্লেষকরা। এমন কী, খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দ্বিতীয় মেয়াদ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। 

চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ ভেস্তে গেলে মঙ্গলবার ১৮ মার্চ থেকে আবারও বড় আকারে হামলা শুরু করে গাজার ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করে ইসরায়েল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলা শুরুর পর থেকে মোট ৬৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক শিশুকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এএফপি
উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক শিশুকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এএফপি

রোববার দুপুর নাগাদ মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা ৪১। পাশাপাশি, নিহতের তালিকায় আরও ২৩৩ 'নিখোঁজ' ব্যক্তির নাম যোগ হয়। নিখোঁজ ঘোষিত ব্যক্তিদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা একটি কমিটি এই সংখ্যা হালনাগাদ করে।

যার ফলে, সব মিলিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা অর্ধ লক্ষ ছাড়িয়েছে। 

চিকিৎসাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহের হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, মোট নিহতের ১৭ হাজারই শিশু।

এ মুহূর্তে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ইসাম আল-দা'আলিস এবং হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র ও বিচারবিভাগের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া, আজ রোববার গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা সালাহ আল-বারদাউইল নিহত হয়েছেন। আজ ভোরে হামাসের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গাজা সিটি থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৫০ হাজারের চেয়ে আরও বেশি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়য় শুধু নথিবদ্ধ হতাহতের হিসাবে রেখেছে। এমন অসংখ্য নিহত ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয়েছে, যাদের নথিবদ্ধ করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তা ছাড়া অনেকে নিখোঁজ রয়েছে, তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আর অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।

অল্প সময়ে এত বেশি শিশু নিহত হওয়ায় একটি জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে, যা বর্তমান প্রজন্ম সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

Comments

The Daily Star  | English

CU students lock main entrance after peer 'assaulted by locals'

They began a sit-in after locking the gate, forcing teachers and students to enter the campus on foot

49m ago