ভূমিকম্পে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা

‘প্রবল দুলুনিতে মনে হচ্ছিল কোনো নৌকার ভেতর আছি’

ভূমিকম্পে মিয়ানমারের মান্দালয়ে ধসে যাওয়া একটি ভবনে উদ্ধারকাজের দৃশ্য | ছবি: এএফপি

২৮ মার্চ। সেহরি ও ফজরের নামাজ শেষে ঘুমাতে কিছুটা দেরি হয় মুরাদ হোসাইনের। দুপুরে ঘুমের ভেতর প্রবল দুলুনিতে তার মনে হয়, তিনি যেন কোনো নৌকার ভেতর আছেন।

ঘুম ভাঙলে মুরাদ দেখতে পান, তার টেবিল ফ্যানটা কেউ যেন বাম দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বিপদ টের পেয়ে মুহূর্তেই বিছানা ছেড়ে বারান্দায় যান তিনি।

বাংলাদেশের মুরাদ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের রাংসিট বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। ব্যাংককের রামকামহ্যাং এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের তিনতলায় থাকেন তিনি। আজ শনিবার দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি ভাগ করে নেন গতকালের ভূমিকম্পের ভয়াল অভিজ্ঞতা।

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার আট দেশে গতকাল শুক্রবার এই শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে আজ শনিবার দুপুরেই।

ব্যাংককে ধসে পড়া নির্মাণাধীন ভবনের সামনে উদ্ধারকারী দল এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মুরাদ হোসাইন | মূল ছবি: এএফপি

মিয়ানমার ছাড়াও প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মারা যান অন্তত ১০ জন। এতে রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন ৩০তলা একটি ভবন ধসে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন ৪৩ জন শ্রমিক।

ভূমিকম্পের সময় ব্যাংককে ধারণ করা একটি ভিডিওতে আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটি চোখে পড়ে। এ সময় কম্পনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, হোটেলের ছাদে সুইমিংপুল থেকে পানি উপচে পড়ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, স্থানীয় সময় শুক্রবার ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় শহর মান্দালয়ের কাছে ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।

এর প্রায় ১১ মিনিট পর পরবর্তী কম্পনে কেঁপে ওঠে থাইল্যান্ডসহ বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম।

মুরাদ বলেন, 'বারান্দায় বের হয়েই অনেক মানুষের চিৎকার কানে আসে। সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আতঙ্কিতদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। যে যা পেরেছেন, সঙ্গে নিয়ে বের হয়েছেন—কেউ প্রিয় পোষা বিড়াল, কেউবা প্রিয় কুকুর।'

পরে ভবন কর্তৃপক্ষ মুরাদদের দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টা পর্যন্ত নিরাপদ কোনো জায়গায় অবস্থানের কথা বলে। সে অনুসারে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক, দারোয়ানসহ সবাই একটি খোলা কার পার্কিংয়ের জায়গায় অবস্থান নেন।

সন্ধ্যায় ইফতারের জন্য বের হলে মুরাদ দেখতে পান, রাস্তায় অনেক যানজট। অনেক সড়ক বন্ধ। অ্যাম্বুলেন্সসহ উদ্ধারকারী যানবাহন যাতে ঠিকঠাক চলতে পারে সে কারণে অনেক রাস্তায় লোক চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

মুরাদ বলতে থাকেন, 'বাংলাদেশে থাকতেও কয়েকবার ভূমিকম্প টের পেয়েছি। কিন্তু এর কোনোটাই এতটা দীর্ঘ সময় ধরে ছিল না।'

Comments

The Daily Star  | English

Freedom fighter’s definition: Confusion, debate over ordinance

Liberation War adviser clarifies that Sheikh Mujib, Tajuddin, others in Mujibnagar govt are freedom fighters

13h ago