কেন ভ্যাটিকানে সমাহিত হচ্ছেন না পোপ ফ্রান্সিস

২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর রোমের সান্তা মারিয়া মাজ্জোরে প্রার্থনা করতে যান পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: ভ্যাটিকান নিউজ

গত ১০০ বছরে প্রথম পোপ হিসেবে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত হচ্ছেন পোপ ফ্রান্সিস।

সাধারণত ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার নিচে পোপদের দাফন করা হয়। কিন্তু পূর্ব ইচ্ছা অনুযায়ী, ভ্যাটিকান থেকে কয়েক মাইল দূরে রোমের সান্তা মারিয়া মাজ্জোরে (সেন্ট মেরি মেজর হিসেবেও পরিচিত) সমাহিত হবেন পোপ ফ্রান্সিস। 

ফ্রান্সিস তার উইলে লিখে গেছেন, 'সমাধি মাটির নিচে হবে; কোনো অলঙ্করণ ছাড়া বেশ সাধারণভাবে। সমাধিস্তম্ভে কেবল একটি লেখাই থাকবে—ফ্রান্সিসকাস।'  

ভ্যাটিকান জানিয়েছে, পোপের দাফনের খরচ একজন দানশীল ব্যক্তি বহন করবেন।

শনিবার সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ সমাধিস্থলে নিয়ে যাওয়া হবে। 

পোপের সমাধিটি বেশ সাধারণ হওয়ার কথা থাকলেও এর ওপরে থাকা ব্যাসিলিকাটি (বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন গির্জা) বেশ ঐশ্বর্যমণ্ডিত। পোপের মৃত্যুর পর এই ব্যাসিলিকার মতো রাজকীয় গির্জায় দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে।

প্রাচীন রোমের সাতটি পাহাড়ের একটি—এস্কুইলাইনের চূড়ায় এই ব্যাসিলিকার অবস্থান। রোমের চার পোপীয় ব্যাসিলিকার একটি এটি। এই গির্জার ২৪৬ ফুট লম্বা বেল টাওয়ারটির চূড়া রোমের সর্বোচ্চ বিন্দু।

কথিত আছে, চতুর্থ শতাব্দীতে তৎকালীন পোপ লিবারিয়াস ও স্থানীয় এক ধনকুবেরের স্বপ্নে এসে মাদার মেরি তার সম্মানে একটি গির্জা নির্মাণ করতে বলেন। মেরি আরও বলেন, গির্জা নির্মাণের স্থানটি অলৌকিকভাবে তাদের কাছে ধরা দেবে। এরপর ৩৫৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের মধ্যে এস্কুইলাইনের চূড়ায় তুষারপাত হয়। পোপ ও সেই ধনকুবের ধরে নেন, এখানেই গির্জাটি বানাতে হবে। এই ঘটনার স্মরণে এখনো সেন্ট মেরি মেজরে প্রতিবছর ৫ আগস্ট 'মিরাকল অব দ্য স্নো' উদযাপিত হয়।

বর্তমান গির্জাটি নির্মাণের আদেশ দেন পোপ তৃতীয় সিক্সটাস ৪৩১ সালে। এর মোজাইকগুলো সে সময়কার। তবে ভেতরে প্রাচীন রোমান আমলের কলাম আছে, যেগুলো অন্যান্য ভবন থেকে আনা হয়েছে। তবে ব্যাসিলিকাটির বাহ্যিক কাঠামো নির্মিত হয়েছে আঠারো শতকে।

জানা যায়, পোপ ফ্রান্সিসের কাছে সান্তা মারিয়া মাজ্জোরে বেশ আপন জায়গা ছিল। প্রায় রোববারই তিনি সেখানে গিয়ে মাদার মেরিকে সম্মান জানাতেন।

প্রতিটি বিদেশ সফরের আগে ও পরে, এমনকি হাসপাতাল থেকে ফেরার পরেও তিনি এই গির্জায় এসে প্রার্থনা করতেন। এই গির্জার মাদার মেরির প্রতিকৃতিকে যীশুমাতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকৃতি হিসেবে দেখা হয়। তার সামনে গিয়ে যাত্রাপথের ও সার্বিক সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করতেন পোপ।

২০১৩ সালে পোপের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম দিনটি এই গির্জাতেই কাটিয়েছেন ফ্রান্সিস। গত মাসে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও তিনি সরাসরি মাদার মেরির প্রতিকৃতির সামনে এসে ফুল অর্পণ করেন, এরপর ভ্যাটিকানে নিজ বাসভবনে যান।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ফ্রান্সিস প্রথম জানান, তিনি এখানে সমাহিত হতে চান।

তবে এখানে সমাহিত হতে যাওয়া প্রথম পোপ ফ্রান্সিস না। এর আগে, আরও সাতজন পোপ এই ব্যাসিলিকায় সমাহিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সর্বশেষ জন ছিলেন নবম ক্লেমেন্ট, ১৬৬৯ সালে। ভ্যাটিকানের বাইরে সর্বশেষ শায়িত পোপ হচ্ছে ত্রয়োদশ লিও। ১৯০৩ সালে তার মৃত্যুর পর সব পোপই সমাহিত হয়েছেন ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায়।

পোপ ফ্রান্সিস তার জীবদ্দশাতেও বেশ কিছু ঐতিহ্য ভেঙেছেন। তিনি ভ্যাটিকানে পোপের বাসভবন অ্যাপস্টলিক প্রাসাদে থাকেননি কখনো। থেকেছেন ভ্যাটিকানের অতিথি ভবন সান্তা মার্তার একটি সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টে।

বিলাসিতা বাদ দিয়ে চলার জন্য পরিচিত ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসের কার্ডিনাল দায়িত্ব পালনের সময়য় চালকসহ গাড়ি বরাদ্দ থাকলেও তিনি নিয়মিত সাবওয়ে ট্রেনে চলাচল করেছেন। ভ্যাটিকানে আসার পরও তিনি একটি সাধারণ ফোর্ড ফোকাস গাড়িতে যাতায়াত করতেন।

পোপের মৃত্যুর পরদিনই সান্তা মারিয়া মাজ্জোরে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ভিড় দেখা যায়। শত শত শোকাহত মানুষ, উপাসক ও দর্শনার্থীর দেখা মেলে এই গির্জায়। 

ব্রাজিল থেকে ইস্টার উপলক্ষে রোমে আসা ভিক্টোরিয়া ফেরেইরা জানান, তিনি কয়েকদিন আগেই প্রথম এসেছেন এই ব্যাসিলিকায়। কিন্তু পোপের মৃত্যুর পর তার সেখানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল একেবারে আলাদা। 

'মনটা ভীষণ খারাপ ছিল,' বলেন তিনি।

৩৩ বছর বয়সী ফেরেইরা আরও বলেন, একজন ক্যাথলিক হিসেবে তার প্রত্যাশা, পোপ ফ্রান্সিসের দেখানো পথেই এই গির্জাকে পরিচালিত করবেন আগামী পোপ।

Comments

The Daily Star  | English

Rohingya influx: 8 years on, repatriation still elusive

Since the repatriation deal was signed with Myanmar in November 2017, Bangladesh tried but failed to send Rohingyas back.

8h ago