ইরানে এখনই শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা কতটুকু?

ইসরায়েল-ইরান চলমান যুদ্ধের আজ মঙ্গলবার পঞ্চম দিন হলেও চতুর্থ দিন থেকেই আলোচনায় তেহরানে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পতনের সম্ভাবনা কতটুকু।
ইসরায়েলের একের পর এক আঘাতে নিহত হচ্ছেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।
আজ সিএনএন'র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—গত শুক্রবার শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলার পর এখন ইরানে শাসক পরিবর্তনের আওয়াজ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
মার্কিন কংগ্রেস থেকে শুরু করে ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও ইসলামী শাসকবিরোধী প্রবাসী ইরানিদের ভেতর এই আওয়াজ জোরালো হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাদের যুক্তি—ইসরায়েলি হামলায় ইরান এখন বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখনই সময় দেশের ভেতরে বিশৃঙ্খলা ও জনরোষ তৈরি করে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এই শাসন ব্যবস্থার শীর্ষে আছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
গত রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে বলেন, ইসরায়েলি হামলায় 'নিশ্চিতভাবে' ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। কেননা, ইরানের সরকার এখন 'খুবই দুর্বল'। তার দাবি, ইরানের '৮০ শতাংশ' মানুষ দেশটির ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলে দেবে।
তিনি ইরানিদের 'সাহসী' ও 'আশীর্বাদপুষ্ট' জাতি হিসেবে প্রশংসা করে আরও বলেন, 'জেগে উঠার এখনই সময়। এই সিদ্ধান্ত ইরানিদের নিতে হবে।'
কিন্তু, বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, নেতানিয়াহু ইরানিদের মনভাব বুঝতে ভুল করেছেন। এমনকি, ইরানে হামলা ইসরায়েলে জন্য বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে।
ইরানে হামলা চালানোয় সে দেশের জনমত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা। যেহেতু তারা হামলা থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের ছুটছেন তাই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতপার্থক্য তাদের কাছে নগণ্য হয়ে উঠতে পারে।
'হোয়াট ইরানিয়ান ওয়ান্টস' বইয়ের লেখক ও নিউইয়র্কে থাকা ইরান-বিশেষজ্ঞ আরাশ আজিজি সিএনএনকে বলেন, 'ইরানিরা যারা স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন তাদের মূল্যবোধের সঙ্গে নেতানিয়াহুর মতো মানুষগুলোর মূল্যবোধ মিলবে না।'
ইরানিরা এখন ইসরায়েলি বোমা বর্ষণের শিকার। অধিকাংশ ইরানি মনে করেন নেতানিয়াহু অথবা ইরান সরকার কেউই ইরানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করতে পারবে না।
এই মুহূর্তে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সম্ভাবনা কম
গত কয়েকদিনে যারা সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের কেউই নেতানিয়াহুর 'ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলনের' ডাকে সাড়া দিতে রাজি নন।
ইরানের এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএনএনকে বলেন, অনেকে মনে করেন যে এই সংঘাতের মাধ্যমে ইরানে হয়ত সরকার পরিবর্তনের সুযোগ আসতে পারে। কিন্তু, ইরানিরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই তৈরি করতে চায়।
আবার অনেকে মনে করেন, ইরানে সরকার পরিবর্তনের জন্য ইসরায়েলের চলমান হামলা উপযুক্ত নয়। গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তন করা উচিত।
আরেকজন সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে তেহরান থেকে সিএনএনকে বলেন, ইরানের কেউই মনে করছেন না যে সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। যখন তাদের শহরে বোমা পড়ছে তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনের সম্ভাবনা খুবই কম।
'ইরানের জনগণ তাদের শাসকদের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে সংগ্রাম করছে। তারা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য লড়ছে। কিন্তু, আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানিরা নিজেদের ও প্রিয়জনদের রক্ষায় ব্যস্ত। এখন সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার বাস্তবতা নেই।'
'বোমা পড়ায় এখন রাজপথগুলো যেকোনো সময়ের তুলনায় শান্ত' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তার মতে, জনবিক্ষোভের মাধ্যমে পতন ঘটানোর মতো দুর্বল এখনো সরকার হয়নি। যুদ্ধের মধ্যে যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমন করার আশঙ্কা আছে। বরং এখন যে কাউকে ইসরায়েলের 'চর' হিসেবে ধরার লাগামহীন ক্ষমতা সরকার পেয়েছে।
অনেকে মনে করেন, জাতীয় সংকটের সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর ওপর যতই অসন্তুষ্ঠ হন না কেন ইরানিরা তাদের দেশে আগ্রাসন সমর্থন করে না।
আজ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলেছেন তার পরিণতি ইরাকের সাবেক একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে।
Comments