খামেনির উত্থান যেভাবে

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি: রয়টার্স

খামেনিকে হত্যা করা হলে 'সংঘাত শেষ হবে' এবং 'পরমাণু যুদ্ধ' বন্ধ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খামেনিকে 'সহজ লক্ষবস্তু' হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান যুদ্ধে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু কয়েকদিন ধরেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করার আভাস দিয়ে আসছেন।

কিন্তু মৃত্যুর হুমকিতেও আপসহীন থাকার কথা জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

চলমান পরিস্থিতিতে খামেনি অঙ্গীকার করেছেন, তিনি ইসরায়েলি শাসকদের কোনো ছাড় দেবেন না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের প্রত্যয়ও জানিয়েছেন ইরানের এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

সামাজিকমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে খামেনি বলেন, 'আমাদেরকে অবশ্যই (ইসরায়েলের) সন্ত্রাসী ও জায়নবাদী শাসকদের কড়া জবাব দিতে হবে। আমরা জায়নবাদীদের কোনো ছাড় দেবো না।'

তবে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির অন্যতম প্রধান ব্যক্তি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ওপর সরাসরি হামলা হলে তা মধ্যপ্রাচ্যকে এক অনিশ্চিত ও অজানা সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

খামেনির উত্থান

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ পশ্চিমা পরাশক্তিদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে লড়াই করে টিকে রয়েছেন খামেনি। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন।

প্রায় চার দশক ধরে শক্ত হাতে ইরান শাসন করছেন খামেনি। এ সময়কালে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা পরাশক্তিদের বাঁধা সত্ত্বেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ আন্দোলন ও ভিন্নমত দমন করেছেন। 

ইরানের সরকার, বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখেছেন খামেনি। পাশাপাশি তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিপ্লবী গার্ড ও কুদস বাহিনী—যারা হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে।

ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন খামেনি। তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। সেই বিপ্লবেই পশ্চিমাপন্থি রাজতন্ত্র উৎখাত হয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮১ সালে খোমেনির বিরোধীরা খামেনিকে হত্যা চেষ্টা করলে তার ডান হাত অকেজো হয়ে যায়। খোমেনির মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হন খামেনি।

সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর তিনি ইরানকে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন এবং 'অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স' নামে পরিচিত একাধিক মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তোলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অবস্থান শক্ত করেন।

তিন দশকেরও বেশি সময় ইরানকে নেতৃত্ব দিলেও খামেনি তার শত্রুদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াননি।

তবে ইরানের এই মনোভাবে পরিবর্তন আসে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়।

এরপর গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ, হিজবুল্লাহর ওপর হামলা এবং গত সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলায় পরিস্থিতি বদলে যায়। শুরু হয় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ।

ট্রাম্প ইরানকে 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ'র আহ্বান জানালে প্রত্যুত্তরে খামেনি বলেছেন, 'যারা ইরান, এর জনগণ ও ইতিহাস সম্পর্কে জানেন তারা এমন ভাষায় হুমকি দেন না। কারণ, ইরানিরা আত্মসমর্পণ করার জাতি নয়।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Israel stands down alert after Iran missile launch

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

23h ago