ইরানকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমরসজ্জা

ছবি: রয়টার্স ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না।

ট্রাম্পের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ওই এলাকায় ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করেছে এবং ইরান ও ইউরোপীয় নেতৃত্বাধীন সংঘর্ষ প্রশমন প্রচেষ্টার ওপর চাপ তৈরি করেছে।

রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি ইসায়েলের বিমান হামলায় যুক্ত হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বহু মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে ইরানে হামলা চালানো হবে, ফলে এসব ঘাঁটিই ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে।

যেসব ঘাঁটি সম্ভাব্য ইরানি হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে, সেখান থেকে ইতোমধ্যে কিছু বিমান ও জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বুধবার রয়টার্সকে জানান দুজন মার্কিন কর্মকর্তা। 

ছবি: রয়টার্স

বৃহস্পতিবার কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস একটি সতর্কবার্তা জারি করে, অস্থায়ীভাবে তাদের কর্মীদের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ঘাঁটিটি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক স্থাপনা, যা দোহার বাইরে মরুভূমিতে অবস্থিত।

এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে এফ-১৬, এফ-২২ এবং এফ-৩৫-সহ আরও কিছু যুদ্ধবিমান মোতায়েন শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এই বাহিনী ড্রোন ও অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে নামিয়ে কর্মী ও স্থাপনাগুলোর সুরক্ষা দিতে পারবে।

ছবি: রয়টার্স

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক আরও কিছু মার্কিন সামরিক উপস্থিতি:

. ইউরোপে এই সপ্তাহের শুরুতে বহু ট্যাংকার বিমান পাঠানো হয়েছে।

. ইউএসএস নিমিৎজ বিমানবাহী রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পাঠানো হয়েছে, যা আগে থেকে মোতায়েনকৃত ইউএসএস কার্ল ভিনসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

. স্যাটেলাইট চিত্রে যুক্তরাজ্য-মার্কিন যৌথ সামরিক ঘাঁটি দিয়েগো গার্সিয়ায় বি-৫২ বোমারু বিমানসহ অন্যান্য যুদ্ধবিমান দেখা গেছে।

ছবি: রয়টার্স

ইরানে হামলায় ইসরায়েলের কেন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন?

ইরানের আকাশসীমায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থাকায় তারা বিস্তৃত বোমাবর্ষণ চালাতে পারছে, তবে দেশটির ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পেরে উঠবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা। তবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় স্থাপনাটির তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি এখনো দৃশ্যমান হয়নি।

রয়টার্স বলছে, পর্বতের নিচে মাটি খুঁড়ে বানানো ফোরদো স্থাপনায় ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বিশাল অংশ উৎপাদিত হয়, যা আরও পরিশোধন করে অস্ত্রে রূপান্তর করা সম্ভব।

এই স্থাপনার মূল অংশ প্রায় ৮০-১০০ মিটার গভীরে অবস্থিত, যেখানে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী 'বাঙ্কার বাস্টার বোমা'র মাধ্যমেই পৌঁছানো সম্ভব।

নাতাঞ্জ ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ফোরদোর চেয়েও গভীরে অবস্থিত। আইএইএ বলছে, ইসরায়েলের আগের হামলায় স্থাপনাটির বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্রপাতি (সেন্ট্রিফিউজ) কার্যত অকেজো হয়ে গেছে। তবে পুরো স্থাপনাটি ধ্বংস করার ক্ষমতা ইসরায়েলের একার পক্ষে সম্ভব নয়। 

ছবি: রয়টার্স

যদি ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ফোরদোর মতো স্থাপনায় হামলা চালাবে, তবে তিনি ইউএস এয়ার ফোর্সের বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করতে পারেন।

এই বোমারু বিমান তার স্টেলথ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই বিশাল ওজনের গোলাবারুদ বহনে সক্ষম, যার মধ্যে দুটি জিবিইউ-৫৭এ/বি এমওপি (ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স পেনিট্রেটর) বা ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের নির্ভুলভাবে পরিচালিত 'বাঙ্কার বাস্টার বোমা' বহন করতে পারে।

এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রচলিত বোমা, যা শক্তিশালী ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ধ্বংসের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এটি ২০ দশমিক ৫ ফুট লম্বা, জিপিএস-নির্ভর টার্গেটিং ব্যবস্থার সাহায্যে নির্দিষ্ট ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় নিখুঁত হামলা করতে সক্ষম। শক্ত কংক্রিট ভেদ করে এটি ৬০ মিটার (২০০ ফুট) পর্যন্ত ঢুকে যেতে পারে, যা বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থাপনাগুলো ধ্বংসে কার্যকর।

ছবি: রয়টার্স

ফোরদো স্থাপনাটি যদি ১০০ মিটার গভীরে হয়ে থাকে, তবে এমন একাধিক বোমা এক জায়গায় বারবার ফেললে তা ধ্বংস হতে পারে।

২০১২ সালের কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থাপনাটিতে সরাসরি পৌঁছানো না গেলেও সেন্ট্রিফিউজগুলো ধ্বংস বা অকার্যকর করা যেতে পারে।

তবে প্রশ্ন হলো, সেন্ট্রিফিউজগুলো ঝাঁকুনির প্রভাব এবং বিস্ফোরণ থেকে ঠিক কীভাবে সুরক্ষিত আছে।

কেননা এমন শক্তিশালী বোমা দিয়েও ভূগর্ভস্থ এই স্থাপনা সফলভাবে ধ্বংস করার নিশ্চয়তা পুরোপুরি নেই।

কিংস কলেজ লন্ডনের সিকিউরিটি স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভারী বাঙ্কার বাস্টার বোমাও ইরানের সবচেয়ে গভীর স্থাপনাগুলোর ক্ষতি করতে ব্যর্থ হতে পারে। ট্রাম্প যদি এই হামলায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেনও—এমন পরিস্থিতিতে স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে কমান্ডো ধাঁচের বিশেষ বাহিনীকে মাটির নিচে অভিযান চালাতে হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh eyes stake in $7 trillion global halal economy: Ashik Chowdhury

Industry people join Bangladesh-Malaysia Chamber-organised seminar to explore Bangladesh’s potential

1h ago