থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া উত্তেজনা, এখন পর্যন্ত যা যা ঘটল

প্রিয়াহ ভিহিয়ার প্রদেশে কম্বোডিয়া ও থাই সেনাদের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে সীমান্ত থেকে একটি কম্বোডিয়ান বিএম-২১ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার ফিরে আসছে। ২৪ জুলাই, ২০২৫। ছবি: এএফপি

উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে দুই প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে। ইতোমধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এজন্য দুই প্রতিবেশী ও দীর্ঘ দিনের বন্ধু একে অপরের দিকে অভিযোগ তুলেছে।

এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে কী কী ঘটেছে এক নজরে তা জেনে নিন।

কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ করেছে থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে থাকা সব সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। থাইল্যান্ডের একজন সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের ফানম ডং রাক হাসপাতালের ওপর কম্বোডিয়ার হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

তবে এই হামলার বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেনি বিবিসি।

ভারী অস্ত্র ব্যবহার ও আকাশপথে হামলার অভিযোগ কম্বোডিয়ার

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন, ভারী অস্ত্র ব্যবহার ও আকাশপথে হামলার অভিযোগ এনেছে।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য ছিল জোরপূর্বক কম্বোডিয়ার ভূখণ্ড দখল করা।

খেমার টাইমস পত্রিকার বরাতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় থাইল্যান্ডের কর্মকাণ্ডকে 'নিষ্ঠুর ও অবৈধ সামরিক আগ্রাসন' এবং 'জাতিসংঘ সনদ, আসিয়ান নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন' বলে আখ্যায়িত করেছে।

তারা আরও দাবি করে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাই যুদ্ধবিমান দুটি বোমা ফেলেছে, তবে ওই এলাকা কম্বোডিয়ার নিয়ন্ত্রণে আছে।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা বলেন, 'এই অবৈধ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড কেবল আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি নয়, বরং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার ভিত্তিকেও দুর্বল করে দিচ্ছে।'

মন্ত্রণালয় আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, 'কম্বোডিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের সেনাবাহিনী যেকোনো মূল্যে দিতে প্রস্তুত আছে।'

থাই সেনাবাহিনীর তোলা ও প্রকাশিত ছবিটিতে সুরিন প্রদেশের কাপ চোয়েং জেলায় রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখানো হয়েছে। ২৪ জুলাই, ২০২৫। ছবি: এএফপি

থাই নাগরিক নিহত

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্বোডিয়ার কামান হামলায় এক থাই নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'কম্বোডিয়ার একটি কামানের গোলা থাইল্যান্ডের একজন বেসামরিক নাগরিকের বাড়িতে আঘাত হানে। এতে একজন নিহত হন। পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু গুরুতর আহত হয় এবং আরও দুইজন আহত হন।'

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনো ছয়টি এলাকায় লড়াই চলছে বলে জানিয়েছেন থাই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা সুরাসান কংসিরি। তিনি জানান, তিনজন বেসামরিক নাগরিক গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদের একজন পাঁচ বছর বয়সী শিশু।

কম্বোডিয়ার দুই সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা

এফএফপি জানিয়েছে, বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার দুটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে থাই সেনাবাহিনী।

থাই সেনাবাহিনীর ডেপুটি মুখপাত্র রিচা সুকসুয়ানন জানান, 'উবোন রাচাথানি প্রদেশ থেকে ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান উড়িয়ে আনা হয় এবং সেগুলো কম্বোডিয়ার মাটিতে দুটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।'

দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে বলে এফএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়।

থাই নাগরিকদের কম্বোডিয়া ছাড়ার আহ্বান

বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে চলমান সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে থাই নাগরিকদের কম্বোডিয়ায় ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে থাইল্যান্ডের দূতাবাস।

বৃহস্পতিবার দূতাবাস তাদের ফেসবুক পোস্টে জানায়, 'যদি খুব জরুরি কারণ না থাকে, তাহলে থাই নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব কম্বোডিয়া ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।'

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, থাই সেনাবাহিনীর দাবি, বিতর্কিত সীমান্তে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত একদল কম্বোডিয়ান সেনার মুখোমুখি হওয়ার পর থাই সেনারা গুলি চালাতে বাধ্য হয়।

অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গোলাগুলির সূচনা করেছে থাইল্যান্ডই।

বিবিসি বলছে, হামলা পাল্টা হামলা শুরুর পর সীমান্তের থাইল্যান্ড অংশে বসবাসরত গ্রামবাসীদের ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশ এসেছে এমন এক সময়, যখন থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ান রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে এবং পনম পেন থেকে নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে এনেছে।

এই মুহূর্তে দুই দেশের কেউই পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে না।

এই সংঘাত প্রকট হয় গত মাসে, যখন কম্বোডিয়ান নেতা হুন সেন থাই প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন শিনাওয়াত্রার সঙ্গে একটি ফোনালাপ ফাঁস করে দেন। সেই ফোনালাপে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে কথোপকথন চলছিল। এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর পেতোংতার্নকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

হুন সেন কেন এই কাজ করলেন, তা কেউ জানে না। কিন্তু এতে দুই পরিবারের কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।

এরপর থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। তার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে।

ফলাফল হয়েছে দ্বিপাক্ষিক কথার যুদ্ধে উত্তেজনা, কয়েক বিলিয়ন ডলারের সীমান্ত বাণিজ্যের পতন এবং আরও বড় সেনা সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

Comments

The Daily Star  | English

Tk 707cr spent in 9yrs, dengue still ravages Dhaka

This year, DNCC proposed Tk 135 crore budget and DSCC Tk 46.50 crore for mosquito-control activities.

11h ago