জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পদ কেন ঝুঁকিতে, কে আসতে পারেন পরবর্তীতে?

শিগিরু ইশিবা। ছবি: এএফপি

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগিরু ইশিবা একরকম খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছেন। এএফপির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এই কঠিন সময়ে কে নেতৃত্ব দিতে পারেন তার মরিচা ধরা দলকে।

জাপানের সমস্যা কোথায়?

জাপানে দ্রুত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, জাতীয় ঋণের পরিমাণ বিপুল, আর ভোক্তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তে থাকায় দেশটির অর্থনীতি মন্দার দ্বারপ্রান্তে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও জাপানি পণ্যে এখনও ১৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে টোকিও।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র হিসেবে জাপানকেও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো এবং তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।

শিগিরু ইশিবা কে?

৬৮ বছর বয়সী শিগিরু ইশিবা একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ। তিনি জাপানের খ্রিস্টান সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর একজন। নীতিগত খুঁটিনাটি বিষয়, যুদ্ধজাহাজের মডেল এবং সিগারেট তার পছন্দের জিনিস।

তাকে একজন নির্ভরযোগ্য রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা হয়। গত সেপ্টেম্বরে, পঞ্চমবারের চেষ্টায় তিনি ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ২০০০ সালের পর তিনিই নবম ব্যক্তি যিনি এই পদে আসীন হলেন। ইশিবা ক্ষমতায় এসে 'নতুন জাপান' গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তবে চালের দাম নিয়ে জনরোষ ও দলের তহবিল কেলেঙ্কারির কারণে তার জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কিছু মন্তব্য নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে।

রোববারের নির্বাচনের পর দীর্ঘ ছুটির সপ্তাহান্তে ইয়োমিউরি পত্রিকার করা এক জরিপে দেখা গেছে, তার মন্ত্রিসভার সমর্থন মাত্র ২২ শতাংশে নেমে এসেছে।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সাদাফুমি কাওয়াতো এএফপিকে বলেন, 'ইশিবা, যিনি এলডিপি সংস্কার করতে পারতেন বলে মনে করা হয়েছিল, ক্ষমতায় আসার পর তিনি কী করতে চেয়েছিলেন তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।'

এলডিপির অবস্থা কী?

১৯৫৫ সাল থেকে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশ শাসন করা এলডিপি—বিশ্বের সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক দলগুলোর একটি। দলটি এখন নিজেদের নতুন করে সাজানোর প্রয়োজনীয়তার মুখে পড়েছে।

রোববারের উচ্চ কক্ষের নির্বাচনের বিপর্যয়ের অর্থ হলো, ক্ষমতাসীন জোট এখন উভয় কক্ষেই সংখ্যালঘু। ১৯৪৫ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো জাপানি সরকার এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ল।

জনসমর্থন ছোট ছোট দলের দিকে ঝুঁকেছে, যার মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয়তাবাদী 'জাপান ফার্স্ট' সানসেইতো। যদিও খণ্ড-বিখণ্ড বিরোধী দল বিকল্প সরকার গঠন করতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচনী প্রচারে "বিদেশবিরোধী অস্বস্তিকর বক্তব্য" উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন মুডিজ অ্যানালিটিক্স-এর অর্থনীতিবিদ স্টেফান অ্যাংরিক।

তিনি বলেন, 'এমন একটি সরকার দরকার যার একটি সুদূরপ্রসারী এজেন্ডা আছে, অর্থনীতিকে কোন দিকে নিয়ে যাওয়া হবে সে সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে।'

ইশিবা কি পদত্যাগ করবেন?

বুধবার কিছু গণমাধ্যম ইশিবার মন্তব্যকে পদত্যাগ না করার ইঙ্গিত হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও, বিভিন্ন সূত্র বলছে পদত্যাগ এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

মাইনচি শিমবুন সংবাদপত্র জানিয়েছে ইশিবা আগস্টের শেষ নাগাদ তার পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। কিওডো নিউজ বলেছে যে তার বিদায় 'অনিবার্য'।

এলডিপির ইয়ুথ ব্যুরো একটি অনলাইন সভা করেছে যেখানে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী ইশিবার 'অবিলম্বে পদত্যাগ' জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন জানিয়েছেন ব্যুরো প্রধান ও পার্লামেন্ট সদস্য ইয়াসুতাকা নাকাসোনে।

কে হবেন উত্তরসূরি?

চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, ইওমিউরি পত্রিকা সেপ্টেম্বরে সম্ভাব্য নেতৃত্বের দৌড়ে অন্তত নয়জন উত্তরসূরীর কথা উল্লেখ করেছে।

তাদের মধ্যে একজন সানায়ে তাকাইচি —কট্টর জাতীয়তাবাদী এবং এক সময়ের হেভি মেটাল ড্রামার। যিনি গতবার ইশিবার কাছে হেরেছিলেন। নির্বাচিত হলে জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি।

অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করা তারো কোনো, সাবেক এলডিপি সেক্রেটারি জেনারেল তোশিমিতসু মোতেগি এবং চিফ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি।

তারা সবাই ষাটোর্ধ্ব

তবে তাদের মধ্যে তরুণ বিকল্প হতে পারেন ৪৪ বছর বয়সী শিনজিরো কোইজুমি। যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। যাকে সম্প্রতি চালের দাম কমানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

ইউবিএসের অর্থনীতিবিদ মাসামিচি আদাচি বলেন, (এই পরিস্থিতি) জাতীয় স্থবিরতা ও ক্ষমতার পতনের আবহ ভাঙার জন্য বড় সুযোগ হতে পারে, বিশেষ করে যদি নেতৃত্ব তরুণ প্রজন্মের হাতে আসে।'

তিনি বলেন, 'গত ৪০ বছরে যে ধরনের সংস্কার দেখা যায়নি, তা বাস্তবায়নের মতো বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন না এলে জাপানের পতন ঠেকানো সম্ভব নয়।'

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Why are we trying to make the election uncertain?

Those who are working to prevent the election should question themselves as to how the people will be empowered without one.

7h ago