যে কারণে আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক

আগামী শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠকে বসবেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের দিক-নির্দেশনা নির্ধারণ। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলছে, ওই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও আসন পেতে পারেন।
এত জায়গা থাকতে বরফে ঢাকা আলাস্কায় কেন বৈঠকের আয়োজন করলেন ট্রাম্প', সেটা জানতে সবাই আগ্রহী। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে।
আজ রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
কিয়েভের বিরুদ্ধে হামলা থামাতে গত শুক্রবার পর্যন্ত মস্কোকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধ না হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপেরও হুমকি দেন মার্কিন নেতা।
তবে শেষ পর্যন্ত ওই পথে পা না মাড়িয়ে সময়সীমা শেষ হওয়ার দিনেই ১৫ আগস্টের বৈঠকের ঘোষণা দেন রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প।
ইতোমধ্যে ট্রাম্পের উদ্যোগে রাশিয়া-ইউক্রেন তিন দফা বৈঠক করলেও শান্তির বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলেই চলে।
এই পরিস্থিতিতে সাবেক রুশ ভূখণ্ড আলাস্কায় দুই নেতার বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্তকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা আখ্যা দিয়েছেন।
যে কারণে আলাস্কা গুরুত্বপূর্ণ
শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে পোস্ট করে বলেন, তার সঙ্গে পুতিনের 'বহুল প্রত্যাশিত' বৈঠকটি ১৫ আগস্ট 'মহিমান্বিত অঙ্গরাজ্য আলাস্কায়' অনুষ্ঠিত হবে।
'পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে', যোগ করেন তিনি।
এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, 'খুবই জনপ্রিয় একটি জায়গায় বৈঠকের আয়োজন করা হবে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে।'
তবে আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের কথা স্পষ্ট করা হলেও ঠিক কোথায় ওই আরাধ্য বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে, তা জানা যায়নি।
মজার বিষয় হলো, ১৮৬৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র 'আলাস্কা' কিনে নিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে অঙ্গরাজ্যের স্বীকৃতি পায় আলাস্কা।
এ বিষয়গুলো ১৫ আগস্টের বৈঠককে ঐতিহাসিক গুরুত্ব দিয়েছে।
এ যুগে দুই দেশের মধ্যে ভূখণ্ড বেচাকেনার কথা কল্পনাতীত মনে হলেও সে আমলে বিষয়টির প্রচলন ছিল। পাশাপাশি, চলতি মেয়াদে ক্ষমতায় এসে গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও বেশ কয়েকবার বলেছেন ট্রাম্প। এমন কী, কানাডাকে মার্কিন অঙ্গরাজ্যও বানাতে চেয়েছিলেন তিনি তিনি।

আলাস্কার ইতিহাস মাথায় রেখে রুশ প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, বৈঠকের জন্য আলাস্কা 'খুবই যুক্তিপূর্ণ' অবস্থান। তিনি আরও জানান, আদতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রতিবেশী দেশ। দুই দেশের মধ্যে শুধু বেরিং প্রণালি বিভাজক হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, 'বৈঠকে অংশ নিতে আমাদের প্রতিনিধিদের শুধু উড়োজাহাজে করে বেরিং প্রণালি পার হলেই চলবে। দুই দেশের নেতাদের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতীক্ষিত সম্মেলনের আয়োজনের জন্য আলাস্কাকে নির্বাচন করা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ।'
২০২১ সালে সর্বশেষ মার্কিন কূটনীতিক কৌশলের কেন্দ্রে এসেছিল আলাস্কা। সে বছরের মার্চে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নতুন কূটনীতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা দপ্তরের সদস্যরা চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্কারেজ নামের শহরে বৈঠকটি আয়োজিত হয়েছিল।
তবে বৈঠকটি তিক্ততায় রূপ নেয়। চীনের প্রতিনিধিরা মার্কিনীদের 'উদ্ধত ও ভণ্ড' বলে আখ্যা দেয়।
যে কারণে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ক্ষমতায় এলে ২৪ ঘণ্টায় ওই যুদ্ধ বন্ধ করবেন বলে দাবি করেছিলেন। এমন কী, বাইডেনের জায়গায় তিনি থাকলে এই যুদ্ধ বাঁধতই না—এমন দাবিও করেন তিনি।
এ বিষয়ে অসংখ্য উদ্যোগ নিলেও এখনো সাফল্যের মুখ দেখেননি ট্রাম্প।
গত মাসে ট্রাম্প বিবিসিকে বলেন, তিনি পুতিনকে নিয়ে 'হতাশ'।
ক্রমে এই হতাশা বাড়তে থাকে। ৮ আগস্টের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের সময়সীমা বেধে দেন ট্রাম্প। তবে সময়সীমা শেষের দিন কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ১৫ আগস্টের বৈঠকের ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

এর আগে, বুধবার পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সফল বৈঠক হয়। তারপরই দুই নেতার বৈঠক আয়োজনের সবুজ সংকেত পায় ওয়াশিংটন ও মস্কোর পররাষ্ট্র দপ্তর।
Comments