ইসরায়েলজুড়ে গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট, আটক ৩৮

গাজার যুদ্ধ বন্ধ ও হামাসের সঙ্গে অবিলম্বে চুক্তি করে আটক থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ ও সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। পাশাপাশি, নেতানিয়াহুর 'গাজা দখল' পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ জানায় ইসরায়েলিরা।
আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মূলত আটক জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের বেদনা ও ক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গত ১০ আগস্ট সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় কয়েকটি সংগঠন।
দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশি, হর্ন ও ড্রাম বাজিয়ে, ইসরায়েলের পতাকা ও আটক জিম্মিদের ছবি উঁচিয়ে লাখো ইসরায়েলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আজকের ধর্মঘট ও কর্মবিরতিতে অংশ নেন।

বিক্ষোভকারীরা জেরুজালেম ও তেল আবিবের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী মূল সড়কসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়ক অবস্থান নেয়। এতে ওইসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রোববারের ধর্মঘটকে সামনে রেখে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন ঘোষণা দেয়, তাদের কোনো কর্মী এতে যোগ দিতে চাইলে তারা বাধা দেবে না। অন্য অনেক দেশে সাপ্তাহিক ছুটি হলেও ইসরায়েলে রোববার কর্মদিবস হিসেবে বিবেচিত। এদিন অনেক প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন অংশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু ছিল। গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর এই ধর্মঘটের কোনো প্রভাব পড়েনি।
আজ সন্ধ্যায় তেল আবিবে বড় একটি বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সময় দুপুর ২টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা) দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে ৩৮ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। সড়ক অবরুদ্ধ রাখার সময় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভকারীদের আটক করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে সাময়িকভাবে দেশজুড়ে বিক্ষোভ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ সময় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পুরো শহরে আকাশ হামলার সতর্কতাসূচক সাইরেন বেজে ওঠে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি লক্ষ্যে আঘাত হানার আগেই ইসরায়েলি আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। এই ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।

যেসব কারণে ধর্মঘটের আয়োজন
গাজার যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তির পাশাপাশি, এই সাধারণ ধর্মঘটের অপর কারণ ছিল ইসরায়েলি নেতার সাম্প্রতিক সময়ের 'গাজা দখল' পরিকল্পনার প্রতি প্রতিবাদ জানানো।
নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার 'গাজা সিটির' দখল নিয়ে কার্যত পুরো গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। ইতোমধ্যে গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ জায়গা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আছে।
গাজা দখলে নেওয়া, সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নেওয়া (ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে দক্ষিণ সুদানের নাম) এবং হামাসকে পুরোপুরি নির্মূলের জন্য বর্ধিত আকারে সামরিক অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা ইসরায়েলে নিন্দা কুড়িয়েছে।
এমন কি, দেশটির সেনা প্রধানও এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, এতে বাকি ৩০ জন জীবিত জিম্মি ও সেনা সদস্যদের জীবন বিপন্ন হবে।
তা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু তার পরিকল্পনায় অনড়।
আজ রোববার নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, 'যারা আজকের দিনে হামাসকে পরাজিত না করেই যুদ্ধ বন্ধের দাবি তুলেছেন, তারা হামাসের অবস্থানকে আরও শক্ত করছেন এবং আমাদের জিম্মিদের মুক্তির উদ্যোগকে আরও পিছিয়ে দিচ্ছেন। একইসঙ্গে তারা নিশ্চিত করছেন, (২০২৩ সালের) ৭ অক্টোবরের আতঙ্কের আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে এবং হবে।'
জুলাইতে দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী দাবির জেরে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যায়। তার ফলশ্রুতিতেই গাজা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান নেতানিয়াহু।

নিজ দেশের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মহলেও নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা নিন্দা কুড়িয়েছে। দেশটির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও এর বিরুদ্ধাচারণ করছে।
আজ রোববার হামাস এই পরিকল্পনাকে 'অপরাধমূলক' বলে আখ্যা দেয়। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনটি দাবি করে, এই উদ্যোগে গাজা থেকে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।
দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে ৬১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে রোববার ২৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ তেল আবিবের এক বিক্ষোভে মিছিলে অংশ নেন এবং বিক্ষোভকারীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্সে বলেন, আজ যারা ঘর থেকে বের হয়ে এসে এসব দাবির স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে "ইসরায়েলি ঐক্যের" বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছেন, তারাই এই দেশকে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন।
Comments