কোন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ এর স্বপ্ন দেখছেন নেতানিয়াহু?

একজন নতুন পাঠকের কাছে 'বৃহত্তর ইসরায়েল'র ধারণা কেমন হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি জানালো—বৃহত্তর ইসরায়েল'র ব্যাখ্যা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন হয়। জেমিনাই'র কাছ থেকেও আসলো কাছাকাছি জবাব। তবে কিছু বাড়তি তথ্য নিয়ে। বলা হলো—ইসরায়েল রাষ্ট্রের বর্তমান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানাকে আরও বিস্তৃত করার চিন্তাভাবনাই হলো 'বৃহত্তর ইসরায়েল'।
গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল আইটুয়েন্টিফোর নিউজকে বলেন, তিনি ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ হিব্রু বাইবেলে উল্লেখ করা 'প্রতিশ্রুত ভূখণ্ড'র ভাবনার সঙ্গে 'সংযোগ' খুব বেশি অনুভব করছেন।
উপস্থাপক সেই সময় 'বৃহত্তর ইসরায়েল'র মানচিত্রও নেতানিয়াহুর হাতে তুলে দেন। তবে সেই মানচিত্রটি টেলিভিশনের পর্দায় দেখানো হয়নি।
পরদিন, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল শিরোনাম করে, 'নেতানিয়াহু বৃহত্তর ইসরায়েল ভাবনার সঙ্গে সংযোগ অনুভব করার কথা বলায় ক্ষিপ্ত আরব দেশগুলো'।
প্রতিবেদনে বলা হয়—'বৃহত্তর ইসরায়েল' বলতে বোঝায় বাইবেল ও ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় বিস্তৃত সীমানার ইসরায়েল রাষ্ট্রের কথা। সেই হিসাবে বর্তমানের জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, মিশর, ইরাক ও সৌদি আরবের কিছু অংশ নিয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনকে বোঝানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পূর্ব জেরুসালেম, গাজা ও সিনাই উপত্যকা এবং গোলান মালভূমি প্রতিবেশী আরব দেশগুলো হাত থেকে দখলে নেওয়া পর 'বৃহত্তর ইসরায়েল' ভাবনাটি জনপ্রিয়তা পায়।
নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিসহ ইসরায়েলের উগ্র-জাতীয়তাবাদী দলগুলো এসব অঞ্চলকে ইসরায়েলের অংশ করে নেওয়ার পক্ষে। যদিও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগুলোকে ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চল হিসেবে দেখে।
সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও আরব দেশগুলোর সংগঠন আরব লিগ নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্যের কঠোর নিন্দার করেছে। এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
গত ১৩ আগস্ট সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই'র প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু নিজেকে 'ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশনের' সঙ্গে 'যুক্ত' বলে জানিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়—গত বছর ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচ বলেছিলেন, শুধু ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড নিয়ে ইসরায়েল ধীরে ধীরে বিস্তৃত হতে চলেছে তা নয়—জর্ডান, লেবানন, মিশর, সিরিয়া, ইরাক ও সৌদি আরবের অংশ নিয়েও ইসরায়েলকে বড় হতে হবে।
২০২৩ সালে প্যারিসে লিকুদ পার্টির এক কর্মীর স্মরণসভাতেও তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
'নীল থেকে ফোরাত'
'বৃহত্তর ইসরায়েল'র মানচিত্র কেমন হতে পারে তা জানতে অন্তর্জালে খোঁজ নেওয়ার পর দেখা গেল প্রস্তাবিত অঞ্চলটি মিশরের নীলনদ থেকে ইরাকের ফোরাত (ইউফ্রেতিস) নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।

২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু 'নতুন মধ্যপ্রাচ্য'র মানচিত্র তুলে ধরেন। সেই মানচিত্রে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই।
বিশ্ব সংস্থার ৭৮তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি জানান, তার নতুন মধ্যপ্রাচ্য ধারণা থেকে ফিলিস্তিনিরা সুবিধা পাবে। তবে সেই প্রক্রিয়ায় তাদের কোনো মত থাকবে না।
২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি টাইমস অব ইসরায়েলের 'গ্রেটার ইসরায়েল—ফ্রম দ্য ইউফ্রেতিস টু দ্য নাইল' নিবন্ধের শুরুতে বাইবেলের (জেনেসিস ১৫:১৮) বরাত দিয়ে বলা হয়, 'আব্রাহামকে প্রভু বলছেন তোমার উত্তরসূরীদের আমি এই ভূমি দিলাম—এই ভূমি মিশরের নদী (নীলনদ) থেকে শুরু করে মহানদী ইউফ্রেতিস (ফোরাত) পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।'
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের জনগণ ও সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিদের কাছে 'বৃহত্তর ইসরায়েল' বলতে বোঝায় দখল করা পশ্চিম তীরের ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এতে আরও বলা হয়, কারো কাছে 'বৃহত্তর ইসরায়েল' বলতে হিব্রু বাইবেলে উল্লেখ করা নীলনদ থেকে ফোরাত পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডকে বোঝায়। কেউ কেউ আবার কিং ডেভিড, কিং সলোমোন অথবা কিং হেরোডের শাসনামলের ইসরায়েলকে বোঝেন। বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রের তুলনায় তা অনেক বড়।
এখন প্রশ্ন—কোন 'বৃহত্তর ইসরায়েল'র স্বপ্ন দেখছেন নেতানিয়াহু?
Comments