শিশুরা কেন মিথ্যা বলে, কী করবেন জানুন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে

শিশু মিথ্যা বলে
ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের মুখের আধো আধো বোল শুনতে কার না ভালো লাগে। এমনকি তা যদি কাল্পনিক বা মনগড়া কোনো গল্পও হয়, শুনতে মন্দ লাগে না। কিন্তু বানিয়ে বানিয়ে কথা বলা কিংবা মিথ্যা বলা যদি তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, তা নিয়ে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট ও এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সিলিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আজহারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বুঝতে শেখার পর অনেক শিশুই বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। ২-৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এটি নিয়ে তেমন চিন্তার কিছু নেই। কারণ শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকে। আমরা বিভিন্ন সময়ই তাদের রূপকথার গল্প বলি। এ কারণে তাদের মনে বাস্তবতার বাইরে একটি আলাদা জগত তৈরি হতে পারে। এগুলো তাদের কল্পনাশক্তি বিকাশের অংশ।

কিন্তু যদি তাদের মধ্যে সত্য লুকিয়ে মিথ্যা বলার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়, সেদিকে বাবা-মায়ের খেয়াল রাখা জরুরি। বিশেষ করে, আপনার শিশু কেন অনবরত মিথ্যা বলছে তার কারণ সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে।

শিশুদের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় বোধ থাকে না, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তারা বুঝতে পারে না। তাই তারা মিথ্যে বললে তার পেছনে কোনো না উদ্দেশ্য থাকবেই, এমন কোনো কথা নেই।

মনোবিদ ড. মো. আজহারুল ইসলাম আরও বলেন, শিশুরা নানা কারণে মিথ্যা বলতে পারে। কিন্তু সত্য লুকাতে যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় তাহলে দেখতে হবে কেন তারা বিষয়টা লুকাতে চাচ্ছে। অনেক সময় অভিভাবক বা শিশু যার কাছে বড় হচ্ছে তার প্রতি ভয় থেকে তারা মিথ্যা বলে। শিশুরা মনে করে, সত্যিটা বললে বাবা-মা বকতে পারে। তাই এটি লুকিয়ে রাখতে চায়।

তাছাড়া শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা সবসময় খেয়াল করে আশপাশে কী ঘটছে। অনেক সময় অন্য কারো থেকে দেখেও এই অভ্যাস রপ্ত হয়ে যায়। এজন্য মা–বাবাকে সতর্ক থাকতে হবে। ভুলেও শিশুর সামনে মিথ্যা বলা যাবে না।

কারো মনোযোগ আকর্ষণের ইচ্ছা থেকেও শিশু মিথ্যা বলতে পারে। যদি অভিভাবক বুঝতে পারেন তার মনোযোগ পেতে শিশু বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছে, তাহলে তাকে সময় দেওয়া বাড়িয়ে দিন।

শিশুর মিথ্যা বলার বিষয়টি যদি সমস্যায় পরিণত হয়, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিদ ড. মো. আজহারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, 'শিশু মিথ্যা বললেও তার প্রতি কঠোর হওয়া উচিত নয়। এতে সে ভয় পেয়ে আরও মিথ্যা বলবে। শৈশবকালে এমনকিছুই করা ঠিক না যাতে তার আত্মবিশ্বাস কমে যায়।

তাই এমন সমস্যায় পড়লে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। হয়তো একবার বললেই সে অভ্যাস বদলে ফেলবে না। কিন্তু মেজাজ হারানো যাবে না। তাকে আশ্বস্ত করুন, সত্য কথা যা-ই হোক না কেন আপনি রেগে যাবেন না। যদি আপনার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শিশু মিথ্যা বলছে বুঝতে পারেন তবে তাকে বাড়তি যত্ন ও সময় দিন।

এডিএইচডি শিশুদের একটি মানসিক সমস্যা। এতে আক্রান্ত শিশুরা কথায় কথায় মিথ্যা বলে, অল্পতেই অনেক বেশি রেগে যায়। শিশুর মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এটি জটিল কোনো রোগ নয়। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে ধীরে ধীরে শিশুর এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব।

 

Comments

The Daily Star  | English
Unused Foreign Loans in Pipeline

Govt tightens foreign loan rules amid poor project fund use

The government has tightened its control over new foreign loans by introducing multiple preconditions for ministries and divisions, following their poor performance in using funds already in the pipeline.

11h ago