ছোটদের ঈদ ফ্যাশন যেমন এবার

এ বছর গ্রীষ্মের মাঝদুপুরে হঈদ-উল-ফিতরের আগমন। তাই বাচ্চাদের ফ্যাশন নিয়ে চিন্তা-ভাবনাটা রয়েই যায়। সুকোমল মন আর শিশুকালের দুরন্তপনাকে সঙ্গে নিয়ে ট্র্যাডিশনাল ও ওয়েস্টার্ন ধাঁচের মিশেলে তাদের ফ্যাশনটা বরাবরই বেশ চটকদার হয়ে থাকে। বাবা-মায়েরাও তাই সন্তানদের জন্য এমন পোশাক খুঁজে বেড়াচ্ছেন, যাতে শুধু উৎসবের আমেজই থাকবে না, শিশুদের নিজস্বতা তুলে ধরারও সুযোগ থাকবে। একইসঙ্গে গরমের মধ্যে তারা যেন সেই পোশাক পরে স্বস্তি পায়, সেটিও খেয়াল রাখতে হচ্ছে।
ট্রেন্ডি ওয়েস্টার্ন ওয়্যার
স্কার্ট/প্যান্টের সঙ্গে ক্রপ টপ
স্কার্ট বা সেলাই করা প্যান্টের সঙ্গে ক্রপ টপ পরলে নবীন এই ফ্যাশনিস্তাদের ঈদ ফ্যাশনে আসবে ভীষণ আভিজাত্যের ছোঁয়া। এই ইন্দো-পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাকে রয়েছে দারুণ সব উজ্জ্বল ও নরমসরম প্যাস্টেল রং। কাপড়ে থাকছে সূক্ষ্ম সুতার কাজ ও সিকোয়েন্সের নকশা।
উৎসব অনুষ্ঠানে পরার জন্য মানানসই পোশাক হতে পারে কয়েক স্তরের ঢেউতোলা ম্যাক্সি স্কার্ট। অন্যদিকে ছিমছাম বটমের সঙ্গে এমব্রয়ডারি করা জ্যাকেটও খুব ভালোভাবেই মানিয়ে যাবে। আরামের সঙ্গে কোনো সমঝোতা ছাড়াই ভীষণ অভিজাত দেখাবে। অনলাইন পেজে এ ধরনের স্কার্ট পাওয়া যাবে। তবে বসুন্ধরা সিটি বা যমুনা ফিউচার পার্কে গেলে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে আরো ভালো অপশন পাওয়া যাবে।
জাম্পস্যুট
বাচ্চাদের ঈদ ফ্যাশনের জৌলুস বাড়িয়ে দেয় জাম্পস্যুট। এই ওয়ান-পিস পোশাকটি পরতেও আরাম, দেখতেও খুব ফ্যাশনেবল। তাই আবহাওয়ার অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বাজারে আনা হয়েছে উচ্চমানের কাপড়ে তৈরি, উৎসবের আমেজে নকশা করা মোটিফ ও স্টাইলে স্লিভলেস থেকে শুরু করে লং-স্লিভ জাম্পস্যুট। বাচ্চাদের জন্য ভালো জাম্পস্যুট পাওয়া যাবে আর্টিসান, টেক্সমার্ট জুনিয়র এবং কিডস প্যারাডাইসে। এগুলোর দাম থাকবে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে।
কেইপ ড্রেস ও গাউন
শিশুদের ফ্যাশনে দিন দিন নাম বাড়ছে কেপ ড্রেস আর গাউনের। রূপকথার রাজকুমারীদের মতো ঢেউ খেলানো কেইপ যেন উৎসব আনন্দে এনে দেয় এক নাটকীয় ছোঁয়া। বিভিন্ন উচ্চতা ও স্টাইলে পাওয়া যাবে এই পোশাকগুলো। বেশিরভাগ পোশাকেই থাকছে পুঁতির কাজ ও এমব্রয়ডারি। ইয়োলো কিডসের মতো অন্য বেশকিছু বাচ্চাদের দোকানে পাওয়া যাবে দারুণ সব কেইপ ড্রেস ও গাউন, তবে এই পোশাকগুলোর দামটা অপেক্ষাকৃত বেশি।
ফিউশন স্টাইলের আঙিনায়
ধুতি প্যান্টের সঙ্গে ক্রপ টপ
আধুনিকতায় একটুখানি ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় ধুতি প্যান্টের সঙ্গে ক্রপ টপ এবারের ঈদের জনপ্রিয় ট্রেন্ড। দেশীয় শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্কটা জোরদার রেখেই বাচ্চারা আরামসে লাফঝাঁপ দিতে পারবে। জমকালো ক্রপ টপের সঙ্গে ধুতি প্যান্টের মিশেলটা দেখে মনে হবে যেন কিছু বেলি ফুলের স্নিগ্ধতা গায়ে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডেড দোকানে বেশ সাশ্রয়ী দামের মধ্যেই বিভিন্ন সাইজ ও কারুকাজের এই পোশাকগুলো পাওয়া যাবে।
সালওয়ার-কামিজ ও আনারকলি
ঈদের ফ্যাশনের কথা মাথায় এলেই মনে পড়ে যায় সালোয়ার-কামিজ আর আনারকলির মতো চিরচেনা পোশাকগুলোর কথা। বিভিন্ন আধুনিক কাট, ক্যাজুয়াল ঘরানার প্যাটার্ন আর রংবেরঙের কারুকাজে এই স্টাইলগুলো এখনো জনপ্রিয়তা হারায়নি। নতুন চমক আনবে দুদিকে দু ধরনের পাড়, যা মানিয়ে যাবে নতুনদের পছন্দের সঙ্গে। যেকোনো শপিংমলের যেকোনো দোকানেই সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাবে, কিন্তু একেবারে নিজের পছন্দের সঙ্গে মানানসই কাপড় ও স্টাইল খুঁজে পেতে চাইলে অতি পরিচিত গাউসিয়া কিংবা নিউ মার্কেটের চেয়ে ভালো কিছু হয় না। ঠিকঠাক কাপড় কিনে তা আবার দর্জির কাছে দেওয়াটা বেশ ঝামেলার বিষয় হলেও নিজের পছন্দমতো পোশাকটি পেতে গেলে তো এইটুকু ঝক্কি পোহাতেই হয়।
সারারা ও গারারা স্টাইল
উৎসব আনন্দে সারারা ও গারারা স্টাইল এখনও আগের মতোই জনপ্রিয়। এই ঈদে এ ধরনের স্টাইলে থাকবে একটু হালকা কাপড় আর সুন্দর সব ডিজাইন, যা বাচ্চাদের জন্য আরো আরামদায়ক— আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। অনলাইনে ভালো মানের গারারা ও সারারা প্রতি পিস ১ হাজার টাকার মধ্যে এবং প্রতিটি সেট ২৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে।
ছেলেদের ফ্যাশন ট্রেন্ড
ঈদ ফ্যাশনে ছেলেদের জন্য ধুতি-কুর্তা যেন পোশাকে স্বস্তি আর সংস্কৃতির এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। হরেকরকম ডিজাইন, প্যাটার্ন আর সুন্দর সব কাটিংয়ে পাওয়া যাবে এই পোশাকগুলো। কনট্রাস্ট রঙের কুর্তা বা সঙ্গে প্রিন্টেড ডিজাইনের কোটি পরলে যেন তাতে আরেক পরত ফ্যাশন জমে। আড়ঙের মতো চেনা-পরিচিত জায়গাগুলোতে বেশ সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যেই ধুতি কিনতে পাওয়া যাবে। একই ধরনের অন্য দোকানগুলোতে এই একই রকম পোশাকের দামটা আরেকটু চড়া হবে।
কটি-পাঞ্জাবি
আদতে পাঞ্জাবি আর ঈদ তো একে অন্যের পরিপূরক শব্দ, তাই ট্র্যাডিশনাল লুকে পাঞ্জাবি থাকছেই। হোক পাঠানি কো-অর্ড সেটের সঙ্গে কলার আর শোল্ডার লুপ, কিংবা আরো আকর্ষণীয় সব ডিজাইন— পাঞ্জাবি সবসময়ই উৎসব আনন্দের জনপ্রিয় পোশাক। কচিকাচাদেরকে তাই এক রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে একটু স্টাইলিশ কটি পরিয়ে দিলে পারিবারিক ছবিগুলোতে তারাই নজর কাড়বে সবার আগে। সূক্ষ্ম কারুকাজ ও হালকা নকশার কোটির জন্য আড়ঙে যাওয়া যায়। দাম থাকবে ৭০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে— কিন্তু মান আর আরামের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করা লাগবে না।
জুতা এবং অন্যান্য অনুষঙ্গ
কোনো ঈদের পোশাকই পরিপূর্ণ হয় না, যদি না ছোটদের সাজুগুজু আর জুতার কেনাকাটা ভালোভাবে না করা হয়। তাই একদিন ইফতারের পর চলে যান বনানীর ছোটখাটো অলিতে গলিতে থাকা বাচ্চাদের বুটিকগুলোতে, সবখানেই দারুণ সব আকর্ষণীয় গয়নাগাটি, পার্স ইত্যাদি রয়েছে। এসব পণ্যের আকার-আকৃতি, বানানো ধরন আর মানের ওপর নির্ভর করে দাম ওঠানামা করে।
ঈদের বিশেষ জুতোর জন্য আমাদেরকে সেই এলিফ্যান্ট রোডের ক্লাসিক চৌরঙ্গী মার্কেটেই ফিরে যেতে হবে। ট্র্যাডিশনাল আর মডার্ন জুতার বিশাল সব সংগ্রহ রয়েছে সেখানে। আমদানিকৃত বা দেশীয় বাজারে তৈরি জুতা হোক, কিংবা ডিজাইনওয়ালা লোফার থেকে ট্রাডিশনাল জুতি, সেইসঙ্গে রঙিন-স্টাইলিশ সব স্যান্ডেল। সবই রয়েছে এখানে। দামও হাতের নাগালে, তবে দামাদামি করতে জানতে হবে। তবে একটু ভালো করে দেখে কিনলে মানের সঙ্গে আপস করতে হবে না, এইটুকু নিশ্চিত।
অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments