নিয়মিত যত্ন ছাড়াও বেঁচে থাকা ইনডোর প্ল্যান্ট
নির্জীব চার দেয়ালের ঘরে সতেজতা ছড়াতে ইনডোর প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার। এটি একদিকে যেমন বিশুদ্ধ বাতাসের যোগান দেয়, তেমনি ঘরের সৌন্দর্য্য ও বৃদ্ধি করে। মনকে শান্ত ও উদ্বেগমুক্ত রাখার পাশাপাশি কীটপতঙ্গ থেকেও দূরে রাখে।
তবে ইট-পাথরে ঘেরা শহরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর অভাবে অনেকের ইনডোর প্ল্যান্ট কেনার শখও আলোর মুখ দেখে না। তাই জেনে রাখা ভালো, কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট বরং স্বল্প আলো ও ছায়া বেশি পছন্দ করে।
কাস্ট আয়রন প্ল্যান্ট
কম যত্নআত্তি ও স্বল্প আলোতে দিব্যি ভালো থাকে কাস্ট আয়রন প্ল্যান্ট। এটি সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, তাই অফিস বা বাড়ির ছায়াযুক্ত স্থানে বা বাথরুমে এটি রাখা যেতে পারে। যারা বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকেন তাদের জন্য এই প্ল্যান্ট বেশ সুবিধার বলা চলে, কেন না এটি বেশি যত্ন করলে বিপরীত ফল দেয়। এজন্য বেশি পানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। একটু জায়গা ও নিয়মিত পানি দেওয়া, মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকলে কাস্ট আয়রন প্ল্যান্ট বড় হতে থাকে।
তবে এটি বড় হতে একটু সময় নিলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটির পুরু ও প্রাণবন্ত পাতা ঘরের আবছা স্থানে যোগ করতে পারে বাড়তি সৌন্দর্যের ছোঁয়া।
স্পাইডার প্ল্যান্ট
অন্ধকার ও স্বল্প আলোর জন্য উপযোগী আরেকটি প্ল্যান্ট হলো স্পাইডার প্ল্যান্ট। এই প্রজাতির গাছ বেশ সহনশীল হওয়ায় ঘরের উজ্জ্বল আলোতে কিংবা অন্ধকার কোণে ২ জায়গাতেই বেশ মানিয়ে নিতে পারে। যত্নের কথা বলতে গেলে, সপ্তাহে একবার ভালো মানের ছাঁটাই কাঁচি ব্যবহার করে নিয়মিত ছাঁটাই করলে ও পানি দিলেই হয়ে যায়। এটি মোটামুটি শক্ত প্রজাতির উদ্ভিদ, তবে এটি কীভাবে যত্ন করতে হয় সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখতে হবে।
স্পাইডার প্ল্যান্ট ঝুড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় বা শেলফে সারিবদ্ধভাবে রাখলে বেশি ভালো লাগে। এ ছাড়া এটির পাতায় ২ টোনের রঙ থাকায় আরও আকর্ষণীয় দেখায়।
জেডজেড প্ল্যান্ট
যাদের গাছপালা বাঁচিয়ে রাখতে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়, তাদের জন্য জেডজেড প্ল্যান্ট বেশ উপকারী। স্বল্প মাত্রার আলো পেলেই এটি বাঁচতে পারে, কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম আলোও এটির জন্য যথেষ্ট। তাই বাড়ির অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা এটির জন্য আদর্শ স্থান। জেডজেড প্ল্যান্ট বেশিরভাগ বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, শুধুমাত্র উজ্জ্বল ও সরাসরি সূর্যালোক এটির মোমযুক্ত পাতার কিছুটা ক্ষতি করতে পারে।
এ ছাড়া পানি দিতে ভুলে যাওয়ার অভ্যাস থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না। জেডজেড প্ল্যান্টকে এক প্রকার অবিনশ্বর উদ্ভিদ বটে। তবে উদ্ভিদটির পাতা বিষাক্ত হওয়ায় পোষা প্রাণী এবং মানুষ ভুলক্রমে খেয়ে ফেললে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ইংলিশ আইভি
ইংলিশ আইভি সৌন্দর্যবর্ধক ও শক্ত প্রজাতির উদ্ভিদ। এটি সুযোগ পেলেই লতাপাতা মেলে এদিক সেদিক বেয়ে যায়। দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ছোট কাটিং দিলেই এটি বাড়তে থাকে। তবে এটি এমন পাত্রে রাখতে হবে যেখান থেকে সহজে ছাঁটাই করা যাবে। ইংলিশ আইভি উজ্জ্বল ও পরোক্ষ সূর্যালোক পছন্দ করে, তবে এটি কম আলোতেও বড় হতে পারে। মাটি শুকিয়ে গেলে সপ্তাহে একবার করে পানি দিতে হবে। তাক থেকে এটি বেশ ক্যাসকেডিং সৌন্দর্য ছড়ায়। তবে পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে এটি বিষাক্ত উদ্ভিদও বটে।
লাকি ব্যাম্বো
বিশেষত লাকি ব্যাম্বো সৌন্দর্যবর্ধনকারী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অন্যতম। এটি দেখতে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের ছোট সংস্করণের মতো হওয়ায় নাম দেওয়া হয়েছে লাকি ব্যাম্বো। তবে এটি আসলে এক ধরনের ওয়াটার লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ যা ড্রাকেনা স্যান্ডেরিয়ানা নামে পরিচিত। এটি অনেক শক্ত ধরনের। এটি কম আলোতে বড় হয় এবং মাটিতে বা সরাসরি পানিতেও লাগানো যায়। এটি তার মালিকের জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ হওয়ায় এটি ছাঁটাই করতে হতে পারে। উষ্ণ জলবায়ু এবং সরাসরি পানিতেও থাকতে পারে। তবে এটি পোষা প্রাণীদের জন্যও বিষাক্ত।
পিস লিলি
কম রক্ষণাবেক্ষণ ও সূর্যালোকের অভাবেও সৌন্দর্য ছড়াতে পারে এটি। তবে ফুল পেতে চাইলে উজ্জ্বল, পরোক্ষ আলোর প্রয়োজন পড়বে পিস লিলির। যত্নের ক্ষেত্রে নিয়মিত পানি, আর্দ্র মাটি রাখা বাঞ্ছ্যনীয়। শিকড় পচা রোধ করার জন্য মাটির অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে হবে। এ জন্য পাত্রে নিষ্কাশনের গর্ত রাখতে হবে। পাতা মুছে রাখতে পারলে ভালো হবে, এটি শুধুমাত্র উদ্ভিদ সুন্দরই রাখে না, আলো শোষণ করতেও সহায়তা করে।
ড্রাকেনা
ছায়াপ্রবণ স্থানের জন্য বৃহত্তর জাতের উদ্ভিদ হিসেবে ড্রাকেনা রাখা যেতে পারে। এই গাছের যত্ন নেওয়া বেশ সহজ। এটি ছোট আকার থেকে বড় গাছের মতো হয়ে থাকে। উজ্জ্বল, পরোক্ষ আলো পছন্দ করলেও বড় হওয়ার জন্য কম থেকে মাঝারি আলোর প্রয়োজন হয়। ড্রাকেনা আর্দ্র অবস্থা পছন্দ করায় বাথরুম বা রান্নাঘরেও রাখা যায়। অন্যান্য গাছের তুলনায় কম পানির প্রয়োজন হয়। আর এটির উপরের কয়েক ইঞ্চি মাটি সম্পূর্ণরূপে শুকনো রাখতে পারলে ভালো।
Comments