উৎসবে পার্বণে রঙিন টাঙ্গাইল শাড়ি

টাঙ্গাইল শাড়ি
ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

প্রতি বছর ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও পূজার মতো বড় বড় উৎসবের আগে টাঙ্গাইলের তাঁতিরা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের উৎপাদিত শাড়ির রং ও ডিজাইনে নানা বৈচিত্র্য নিয়ে আসেন। অন্যান্য স্থানের তাঁতিরা তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু নিপুণ দক্ষতায় তৈরি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাড়ির গুণমান ও বৈচিত্র্য অতুলনীয়।

কাজেকর্মে সুবিধার্থে এখন প্রাত্যহিক জীবনে শাড়ি পরার প্রবণতা কমে এলেও, যে কোনো উৎসব পার্বণে বাঙালি নারীদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে টাঙ্গাইল শাড়ি। আবহমান কাল ধরে তাদের মন যেন বেশিই বোঝেন টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পীরা। 

টাঙ্গাইল শাড়ি
ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে নতুন নতুন ডিজাইনের বাহারি রঙের শাড়ি তৈরি করেছেন টাঙ্গাইলের তাঁতিরা। উৎসবের চাহিদা পূরণে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তারা। ইতোমধ্যে তাদের উৎপাদিত লাখ লাখ শাড়ি চলে গেছে দেশ-বিদেশের শপিং মল ও শাড়ির দোকানগুলোতে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ, অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে গত চার বছর ঈদ, পূজা আর পহেলা বৈশাখে শাড়ির ব্যবসা ভালো হয়নি। এবার বেশি শাড়ি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শাড়ি উৎপাদনও বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় তাঁতিরা জানান, হস্তচালিত তাঁতে ৪০০ টাকার সাধারণ তাঁত শাড়ি থেকে শুরু করে ২০ হাজার বা তারও বেশি দামের শাড়িও তৈরি করেন তারা, যা সব বয়সী, শ্রেণি ও পেশার নারীদের চাহিদা পূরণে সক্ষম।   

তারা সুতি, বালুচুরি, সুতি জামদানি, সিল্ক জামদানি, সিল্ক, হাফ সিল্ক, সফট সিল্ক, গ্যাস সিল্ক, দোতারি সিল্ক, জুট সিল্ক, খদ্দর, বেনারসি, কাতান, তসর, আনারকলি, ধানসিঁড়ি, ডেঙ্গু, রেশম, ফোর ফ্লাই, মনপুরার মতো বিভিন্ন মান ও ধরনের শাড়ি উৎপাদন করেন।

সারাদেশের ক্রেতাদের কাছে এসব শাড়ির কদর রয়েছে। ঈদ বা পূজার মতো বড় উৎসব পার্বণের আগে স্থানীয় বাজারে টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রি বৃদ্ধি পায়।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত শাড়ি প্রধানত সাপ্তাহিক হাটে সদর উপজেলার করটিয়া ও বাজিতপুর এবং কালিহাতী উপজেলার সল্লায় পাইকারি বিক্রি হয়। সারাদেশের পাইকারি বিক্রেতারা সরাসরি স্থানীয় তাঁতিদের কাছ থেকে শাড়ি কিনতে এসব হাটে আসেন। ঈদ মৌসুমে এসব হাটে কয়েকশ কোটি টাকার শাড়ি বেচাকেনা হয় বলে হাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়।

সাধারণত টাঙ্গাইল জেলার সব উপজেলায় শাড়ি উৎপাদিত হলেও যেসব এলাকায় বেশি হয় তারমধ্যে সদর উপজেলার বাজিতপুর, ধুলুটিয়া, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, গোসাইজোয়াইর, তারাটিয়া, এনায়েতপুর, বেলতা, সন্তোষ, কাগমারী, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলশোধা, বরোটিয়া, চিনাখোলা, মঙ্গলহোড়, নলুয়া, বিষ্ণুপুর, দেওজান এবং কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর, ছাতিহাটি, আইসড়া, রতনপুর, কোকডোরা, পাইকড়া, কদিম খশিলা, নাগবাড়ি, বীরপাকুটিয়া, ভরবাড়ি, বাসাইল উপজেলার গড়াসিন ও বাথুলী উল্লেখযোগ্য।

এর মধ্যে দেলদুয়ার উপজেলা টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত।

দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এলাকার শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অন্যান্য শাড়ির পাশাপাশি তিন-চার হাজার টাকা মূল্যের আকর্ষণীয় সব টাঙ্গাইল সুতি জামদানি, পিওর সিল্ক ও বালুচরি শাড়ি বুনেছেন স্থানীয় তাঁতীরা।

তারা জানান, ঈদ উপলক্ষে সাধারণত ১৫ রোজার মধ্যে এখানকার উৎপাদিত শাড়ির পাইকারি বিক্রি শেষ হয়ে যায়। ঈদের আগের দিনগুলোতে চলে খুচরা বিক্রি।

পাথরাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তাঁতি রঘুনাথ বসাক বলেন, 'অন্য দেশের শাড়ি দামে কম হলেও মান নিম্ন। অপরদিকে দাম কিছুটা বেশি হলেও ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ির গুণগত মান অতুলনীয়।'

তিনি আরও বলেন, 'এটা ঠিক যে শিল্পটি নিয়ে আমাদের অনেক কিছুই করার ছিল, এ বিষয়ে প্রচার প্রচারণারও অভাব রয়েছে। তাই বলে আমাদের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব ভারতের নেওয়াটা ঠিক হয়নি।'

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম জানান, ভারতীয় আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে রেকটিফিকেশন আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।

 

   

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

6h ago