বাঙালি নারীর পরনে চিরায়ত সুতি শাড়ি

সুতি শাড়ি
ছবি: আদনান রহমান

বাঙালি নারীর নিত্যদিনের গল্প প্রায় সময়ই বোনা থাকে সুতি শাড়ির সুতোয়। ছোট থেকেই মা-খালাদের আদরে জড়ানো সুতি শাড়ি দেখতে দেখতে কোথাও যেন এই শাড়ির প্রতি মমতা জন্মায়, যে মমতা আজীবন ধরে রাখেন অনেকেই। ছয় গজের একটা ছোট্ট গল্পে কীভাবে ফুটে ওঠে নারীর ব্যক্তিত্ব আর সাবলীলতা, তা বোধহয় একটুখানি মিইয়ে যাওয়া সুতি শাড়ি গায়ে জড়ানো বাঙালি নারীকে দেখলেই বোঝা যায়। নারী এদিক-সেদিন বহু দিক সামলায়, তাই তাকে যেন আলাদা করে শাড়িও সামলাতে না হয়, তারই সমাধান একটি সুতি শাড়ি। আর এভাবেই আধুনিক বিশ্বে সদর্পে এগিয়ে চলা নারীর সঙ্গে ঐতিহ্যের শেকড়ও গাঁথা থাকে একেকটি সুতি শাড়ির লতায় পাতায়।

দেশীয় কারিগরদের মায়ার বুনটে তৈরি সুতি শাড়িগুলো যেন আমাদের আটপৌরে জীবনযাত্রার নিত্যসঙ্গী। তাইতো আলমিরায় তুলে রাখা শখের শাড়ির জন্যও মায়া কম পড়ে না কখনো।

সুতি শাড়ি
ছবি: আদনান রহমান

নিজস্ব সুতায় তৈরি, এ দেশেরই উপহার আমাদের চেনাজানা, খুব কাছে 'সুতির শাড়ি'। যেকোনো আবহাওয়ায় খুব অনায়াসে সামলে নেওয়া যায় এ শাড়ি। সারাদিন দৌড়ঝাঁপ হোক বা ভ্রমণের আনন্দ, কিছুই মাটি হয় না, আর সেইসঙ্গে ফ্যাশন তো আছেই।

জাতীয়তাবাদ কিংবা দেশজ ঐতিহ্যকে উদযাপনের এই ক্রান্তিকালে সুতি শাড়িও নতুন করে নিজের জায়গা খুঁজে পাচ্ছে।

সুতি শাড়ি
ছবি: আদনান রহমান

খুবই হালকা ধাঁচের, কিন্তু বহুমাত্রিক সাজের কারণে সুতির শাড়ি অনেকেরই প্রথম পছন্দ। গায়ে একরাশ প্রশান্তি মেখে নিয়ে এ শাড়ি অনেক গরম আবহাওয়ায়ও আরাম দেয়। কেননা এতে খুব সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে, ঘাম শুকিয়ে যায়। বাংলাদেশের ভীষণ ঘেমো, আর্দ্র বাতাসে তাই সুতি শাড়ির তুলনা হয় না কোনো। এই প্রজন্মের নারীরা শাড়ি নামের পোশাকটিকে খুব ভালোভাবে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিতে শিখছেন আবারও নতুন করে।

অনেকেই কর্মক্ষেত্রে, ঘোরাঘুরির জন্য সুতি শাড়ি বেছে নেন। নেবেন নাইবা কেন? সুতি শাড়ির আভিজাত্য আর ধ্রুপদী চরিত্র তো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় একেবারেই। তাই আধুনিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও বিশ্বনাগরিক ঘরানার মুক্তমনা নারীরা বাংলাদেশি হিসেবে নিজের পরিচয় ধরে তুলতেও বেছে নেন এই শাড়ি। ফ্যাশন জগতে নিজের পোশাক-পরিচ্ছদে দেশজ সংস্কৃতিকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নেওয়ার মতো গর্বের আর কিছু কি হয়?

সুতি শাড়ি
ছবি: আদনান রহমান

তবে সুতি শাড়ি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। একেবারেই অর্গানিক, তাঁতের শাড়ি খুঁজতে হবে। কেননা কারিগরদের মায়াজড়ানো হাতের বুননে যে শাড়ি তৈরি হবে, তা এমনিতেই বিশেষ। অনেক দোকানিই এখন বিভিন্ন ইভেন্টে বিভিন্ন গ্রামের কারিগরদের বোনা শাড়ি প্রদর্শনীতে রাখেন, মেলে ধরেন সুতি শাড়ির দুনিয়া। এসব ইভেন্ট যে শুধু শাড়ি কেনার জন্যই ভালো, তা কিন্তু নয়। বরং এখানে গেলে পরিচিত হওয়া যায় বহু প্রতিভাবান শাড়ি কারিগরদের সঙ্গে, যারা নিরলস শ্রমের মধ্য দিয়ে রচে যাচ্ছেন একেকটি প্রিয় শাড়ির প্রিয়তম গল্প। কেউ চাইলে কারিগর ও শিল্পীদের এই গোষ্ঠীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতাও করতে পারেন।

সুতি শাড়ি কেনার সময় বাঙালি নারী একেবারে মন খুলে খরচ করতে ভালোবাসে। নরম, মিহি বুনন, হালকা রঙ আর ছিমছাম পাড়ের প্যাস্টেল-সুতি শাড়িগুলো প্রতিদিন পরার জন্য দারুণ মানানসই। মেটে, বাদামি রংগুলোও খুব সুন্দর। কিছু শাড়িতে হাতের কাজ এতই নিখুঁত যে দেখে চোখ ফেরানো যায় না।

সুতি শাড়ি
ছবি: আদনান রহমান

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাড়িপল্লী কিংবা শহরের বহু বিপণিবিতানে রয়েছে সুতি শাড়ির বিচিত্র সব ভাণ্ডার, যাতে ঢুঁ মেরে এলে শাড়ির আলমিরায় জায়গা কমবে বৈ বাড়বে না। তাই কবোষ্ণ এই আবহাওয়ায় নিজেকে দেশজ রঙে মেতে উঠতে দেখুন বাঙালিয়ানার বিশেষ ছাঁচে। মনের রঙ ছড়িয়ে দিন সুতি শাড়ির আঁচলে! দেশ ও দশের কারিগরদের হাতেবোনা পোশাকে সমৃদ্ধ করুন নিজের ফ্যাশন।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

Israel welcomes 'all help' in striking Iran

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

1d ago