ঢাকায় জামদানি মেলা: ঈদ-নববর্ষের বিশেষ আয়োজন
রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের আয়োজনে চলছে জামদানি মেলা। পাঁচদিনব্যাপী এই মেলা শেষ হবে আগামীকাল বুধবার।
ঈদুল ফিতর ও নববর্ষকে সামনে রেখে এবারের পসরায় রয়েছে বাহারি নকশার জামদানি শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ নানাকিছু৷
জাদুঘরের নলিণীকান্ত ভট্টশালী আর্ট গ্যালারিতে আয়োজিত মেলায় প্রবেশ করা যাবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
দেশের তাঁতশিল্পের পরম্পরা টিকিয়ে রাখতে নারায়ণগঞ্জের তাঁরাবোতে বিসিকের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় ৪২৭টি বরাদ্দকৃত প্লটের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে জামদানি শিল্পনগরী। যেখানে তাঁতিরা সুনিপুণ হাতে জামদানি বুনে যাচ্ছে বছরের পর বছর। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁতিদের একত্রিত করাই ছিল জামদানি মেলার মূখ্য উদ্দেশ্য।
জামদানি বুননকৌশল অনেকটা পারিবারিক আভিজাত্যের পরিচায়ক।
জামদানি শাড়িপল্লী বা হাট কর্ণার নামে পরিচিত জামদানি হাটে প্রতি সপ্তাহে নানা রঙ ও নকশার শাড়ি, পাঞ্জাবির পসরা নিয়ে হাজির হন তাঁতিরা। সুলভ মূল্যে পণ্য কেনার জন্য অনেক জামদানিপ্রেমী সেখানে উপস্থিত হলেও বেশিরভাগই সময় ও সুযোগের অভাবে যেতে পারেন না।
তাদের জন্যই ২০১৪ সাল থেকে বিসিক প্রতি বছর দুবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে জামদানি মেলার আয়োজন করে।
এবারের জামদানি মেলায় পাওয়া যাচ্ছে শাড়ি থেকে শুরু করে ওয়ান পিস, টু পিস, থ্রি পিস ও পাঞ্জাবি। ফুলপাড়, গাছপাড়, আড়ংপাড়, তীর পাড়, প্রজাপতি পাড়, ঢেউপাড়সহ নানা নকশার শাড়ি পাওয়া যাবে এখানে।
সুতা ও ডিজাইনের ধরন অনুসারে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ লাখ টাকার শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। অন্যদিকে ওয়ান পিস, টু পিস, থ্রি পিস ও পাঞ্জাবির পিস পাওয়া যাবে ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।
বিসিক কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জামদানি মেলার চেয়ে বিসিকের মেলা একটু ভিন্ন। এখানকার প্রত্যেক স্টলের তাঁতিরা বিসিকের আওতাভুক্ত। শুধু জামদানি শিল্পের প্রচারণা নয়, জামদানি কারিগরদের সব ধরনের সাহায্য করতে বিসিক বদ্ধ পরিকর।'
তিনি বলেন, 'প্লট বরাদ্দ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ দেওয়া, শো-রুম তৈরি করা, প্রণোদনা দেওয়ার মতো নানা সুবিধা পায় তাঁতিরা। এই শিল্পকে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করতেই এই জামদানি মেলা।'
মেলার মাধ্যমে তাঁতিরা ক্রেতাদের পছন্দ সম্পর্কে ধারণা পান। সেই অনুযায়ী পরবর্তীতে নতুন নকশা তৈরি করেন।
ক্রেতারাও একই ছাদের নিচে জামদানির বিশাল সম্ভার থেকে নিজের পছন্দমতো পণ্য বাছাইয়ের সুযোগ পান। সেইসঙ্গে সরাসরি তাঁতির কাছ থেকে পণ্য কেনায় দামও তুলনামূলকভাবে কম হয়।
জাতীয় জাদুঘরের যৌথ সহযোগিতায় এবারের মেলায় স্থান বরাদ্দ পেতে কোনো খরচ হয়নি বলে জানিয়েছেন বিসিক কর্মকর্তা। তবে পরিসর খুব একটা বড় না হওয়ায় সব তাঁতিকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩০ জন তাঁতি মেলায় স্টল পেয়েছেন। স্টল পেতে বিসিক নিবন্ধন থাকা ও না থাকা সাপেক্ষে পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা ফি দিতে হয়েছে।
প্রচারণার অভাবে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্টল মালিকরা।
তাঁতি আব্দুল মতিন বলেন, 'মেলা জমে ওঠে ছুটির দিনে। অথচ জাদুঘর শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকায় আমরা এই সুবিধা পেলাম না। মাত্র পাঁচদিন মেলা হওয়ায় ক্রেতার সমাগমও আশানুরূপ না।'
'স্টল বরাদ্দ ফি পাঁচ হাজার টাকাসহ মোট ২০ হাজার টাকা খরচ করে এখানে এসেছি। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেয়ে এখন খরচ উঠবে কি না, সেটা নিয়েই ভয় পাচ্ছি।'
মেলায় ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার শাড়ির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি দেখা গেছে। কারণ হিসেবে ক্রেতা বলছেন, এ ধরনের শাড়ি অফিস, বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানে পড়া যায়। স্টলগুলোতেও এই বাজেটের শাড়িই বেশি দেখা গেল।
Comments