ফ্যাশন-স্টাইল নিয়ে গৌতম সাহার যত পরামর্শ

বেশিরভাগ সময়ই মানুষ স্টাইল আর ফ্যাশনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। অনেকেই আছেন, আলমারি ভর্তি পোশাকের সামনে দাঁড়িয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না যে, কোনটি বেছে নেবেন।
বুঝতে পারেন না যে, হালফ্যাশন অনুযায়ী পোশাক তার আছে কি না। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার গৌতম সাহার মতে, স্টাইল হলো সেই বিষয়টা সেটা দিয়ে আপনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন এবং নিজেকে অন্যদের সামনে তুলে ধরেন।

ডেইলি স্টারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় তিনি কথা বলেছেন ব্যক্তিগত স্টাইল সম্পর্কে তার ধারণা নিয়ে, এটিকে কীভাবে পরিমার্জন করা যায় এবং কীভাবে স্টাইলকে নিজের প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে।
স্টাইল বাড়ুক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে
গৌতম সাহা বলেন, স্টাইল তো শপিং ব্যাগে করে কিনতে পাওয়া যায় না। এটি একটি ব্যক্তিগত অভিযাত্রা যা ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রস্ফুটিত হয়। স্টাইলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ফুটে ওঠে। শপিং সেন্টারে গেলেই পাগলের মতো যে কেনাকাটা করা হয় সেটা কিন্তু স্টাইল নয়। স্টাইলের জন্য যথাযথ সময় দিতে হয়। তিনি কাউকে মুগ্ধ করার জন্য পোশাক পরিধানের বিষয়ে বিশ্বাসী নন, তার মতে পোশাক পরার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকা উচিত।
গৌতম সাহা বেশ দৃঢ়ভাবেই বলেন, 'আমার চেয়ে আমার পরনের পোশাক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত নয়।'
তার মতে, সাধারণ পোশাকই সবচেয়ে শক্তিশালী। অ্যাশ বা বেইজের মতো নিউট্রাল রংগুলো যেকোনো প্রিন্ট বা উজ্জ্বল রঙের চেয়ে শক্তিশালী ভাব প্রকাশে সক্ষম।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রায়ই পোশাকে এত কিছুর সন্নিবেশ ঘটাই যে সবকিছু মিলে কেমন দেখাতে পারে সেটা ভাবতে ভুলে যাই।'
গৌতম সাহার মতে, আপনাকে সব মিলিয়ে দেখতে কেমন লাগছে তার ৯০ শতাংশ নির্ভর করে মৌলিক পরিচ্ছন্নতার ওপর। একটা ইস্ত্রি করা মসৃণ শার্ট থেকে শুরু করে হালকা সুগন্ধি, যথযাথ জুতা; এ সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ।
স্টাইলিশ হতে হলে আপনার এক আলমারি ভরা সাজগোজের জিনিস থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এটা নির্ভর করে, আপনি প্রতিদিন নিজেকে কতটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছেন তার ওপর।
যা কাজ করে, যা করে না
নারী-পুরুষের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট ও স্টাইলিং নিয়ে বছরের পর বছর কাজ করতে গিয়ে গৌতম সাহা দেখেছেন ফ্যাশন নিয়ে কিছু ভুল ধারণা। সবচেয়ে বড় ভুল কী জানেন? সবচেয়ে বড় ভুল হলো, নিজের জন্য কোনটা উপযুক্ত তা না বুঝেই ট্রেন্ড অনুসরণ করতে চেষ্টা করা।
গৌতম সাহার পরামর্শ হলো, প্যাটার্নযুক্ত শার্টের সঙ্গে প্রিন্টেড ট্রাউজার না পরা। আবার যদি নিজের ত্বকের আন্ডারটোন জানা না থাকে তাহলে ইলেকট্রিক ব্লু, কমলা বা এ ধরনের উজ্জ্বল রঙের পোশাক না পরা। তার মতে, পুরুষদের উচিত চটকদার ব্র্যান্ডিংয়ে প্রতি বেশি মনোযোগ না দেখিয়ে পোশাকের ছাঁট এবং মানকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

একইসঙ্গে নারীদেরও উচিত পোশাকে অনেকগুলো স্টেটমেন্ট না মিলিয়ে ফেলা। সবসময় সব পোশাকের সঙ্গে কানের দুল পরাও জরুরি নয় বলে মনে করেন গৌতম সাহা।
বর্তমান বিশ্বে চলা ফাস্ট ফ্যাশনের ধারাকে অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় বলতেও দ্বিধা করলেন না গৌতম। তিনি খুব সচেতনভাবে পোশাক কেনার বা পছন্দের পরামর্শ দেন। অনেক বেশি কাপড় না কিনে এমন পোশাক বেছে নিতে হবে যা হবে মানসম্মত এবং টেকসই। তার মতে, টেকসই ফ্যাশন মানে কেবল এমন নয় যে আপনি নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডকেই কেবল সমর্থন দিয়ে যাচ্ছন। এর অর্থ এমন পোশাক কেনা, যা আপনি দীর্ঘদিন মনের আনন্দ নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
টেকসই ব্র্যান্ডগুলোকে সমর্থন দেওয়া বা পছন্দ করলে আপনি স্টাইলিশ থাকার পাশাপাশি পৃথিবীর জন্যও ভালো কিছু করতে পারবেন।
ছোট থেকে শুরু করুন, চিন্তাশীল হোন
যারা বুঝতে পারছেন না যে কোথা থেকে শুরু করবেন, তাদের জন্য গৌতম সাহা বেশ সহজ নিয়মের কথা বলেছেন। আর সেটা হলো, পর্যবেক্ষণ করা।
এজন্য সিনেমা দেখার পরামর্শ তার। সিনেমার চরিত্রগুলো কোন কালার প্যালেটের পোশাক পরছে, কিংবা আশপাশের যাদের পোশাক আমরা সুন্দর বলছি তারা কেমন ধরনের পোশাক পরছেন সেগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখতে বলেন তিনি। সরাসরি কাউকে অনুসরণ করতে হবে এমন নয়, কিন্তু তাদের রুচিবোধ যদি আপনাকে নিজস্ব রুচি উন্নত করতে সাহায্য করে, তাহলে তাদের মনোযোগ দিয়ে দেখার পরমর্শ দিলেন এই স্টাইলিস্ট।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনুষ্ঠান বুঝে পোশাক পরা এবং নিজের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকা। কোন আবহাওয়ায় বা দিনের কোন অংশে পোশাকটি পরছেন বা আপনি সমাজের কোন স্তরে আছেন, সবকিছুর ওপরই পোশাক নির্বাচন নির্ভর করে।
গৌতম সাহা আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, স্টাইল কেবল রূপান্তরের বিষয় নয়। এটি হলো আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, মার্জিত ও নিজের সেরা সংস্করণ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া।
গৌতম সাহা আইস মিডিয়ার ফ্যাশন এডিটর হিসেবে কর্মরত।
ছবি: সৌজন্য পাওয়া
অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ
Comments