নির্ঘুম রাত মানুষকে অসামাজিক ও স্বার্থপর করে: গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

নির্ঘুম রাত মানুষকে আরও বেশি স্বার্থপর ও অসামাজিক করে তোলে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র এক ঘণ্টার বিশ্রামের অভাবে স্বজন বা কাছের বন্ধুদের সাহায্য করার আগ্রহ কমে যায়।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষক দল লক্ষ করেছেন যে, একটা বাজে রাত সামাজিক আচরণের সহায়ক মগজের সেই অংশটির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

গবেষণার সহ-লেখক ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথু ওয়াকার বলেছেন, 'আমরা আবিষ্কার করলাম যে, ঘুম হারানো অসামাজিক আচরণের মাত্রা বাড়ায়। মানুষের ভেতর পারস্পারিক সাহায্যের মনোভাবকে কমিয়ে আনে। একভাবে বলতে গেলে, আপনি যত কম ঘুমাবেন, তত কম সামাজিক এবং তত বেশি স্বার্থপর হয়ে উঠবেন।'

পিএলওএস জার্নালের এক লেখায় দলটির মন্তব্য, দীর্ঘমেয়াদি ঘুমহীনতা সামাজিক বাঁধনের ও অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রবণতা যা সামাজিকভাবে গড়ে উঠে সেটির ক্ষতিসাধন করতে পারে।

গবেষক দলটি 'সেলফ রিপোর্টেড অলট্রুইজম কোয়েশ্চেনিয়ার' মাধ্যমে ১৬০ জনের অংশগ্রহণকারীর মধ্যে অন্যদের সহযোগিতা করার মানসিকতা পরীক্ষা করেন। এক রাত ঘুমানোর পর অংশগ্রহণকারীরা প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্নগুলো ছিল এমন যে, 'আমি সাহায্য করা বাদ দেবো', 'আমি তাদের এড়িয়ে যাবো'।

গবেষক দল ২৪ জন অংশগ্রহণকারীর উত্তরে খেয়াল করেন যে, ক্লান্ত অবস্থায় নিজ থেকে অন্যকে সাহায্য করার উৎসাহ শতকরা ৭৮ ভাগ কমে আসে।

দলটি সেই অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখেন নির্ঘুম রাত 'সোশাল কগনিটিভ ব্রেন নেটওয়ার্ক' এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এই অংশটি সামাজিক আচরণের সঙ্গে যুক্ত। অংশগ্রহণকারীরা বন্ধু ও পরিবারকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে এমন উদাসীন ছিলেন, যেন তারা একেবারে অচেনা।

ওয়াকার বলেন, 'ঘুমের অভাব অন্যকে সাহায্য করার উৎসাহে ভাটা ফেলে, হোক সে কোনো অচেনা আগন্তুক অথবা কোনো নিকটাত্মীয়। এতেই বোঝা যায়, নির্ঘুম সময় অসামাজিক এবং অসহযোগিতা পরায়ণ আচরণ উস্কে দেয়। যা বৃহত্তর ও সার্বজনীন প্রভাব রাখে।'

পরার্থপরতা বলে বাস্তব জগতে আসলেও কিছু আছে কিনা, তা নির্ধারণ করার জন্য দলটি আমেরিকায় ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়ার আগের ও পরের সময়কালে ৩ মিলিয়ন দাতব্য সহায়তার পার্থক্য দেখতে পান। ঘড়ির কাঁটা সৌরসময়ে এক ঘণ্টা এগিয়ে আনার অর্থ একঘণ্টা কম ঘুমানো। তারা এই পরিবর্তনের পর দাতব্য সহায়তায় ১০ শতাংশ কম দেখতে পান।

গবেষক দলের সহ-লেখক ওয়াকারের ভাষ্য, 'আমাদের গবেষণায় প্রচুর প্রমাণ সংযুক্ত আছে। যাতে দেখা যায় অপর্যাপ্ত ঘুম শুধু একজন ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক ক্ষতিই করে না বরং ব্যক্তিক বন্ধনকে এবং জাতির সামগ্রিক পরার্থপর অনুভূতিকেও দুর্বল করে।'

'আমাদের সব গবেষণা থেকে পাওয়া ইতিবাচক ব্যাপারটি হলো, ঘুম যখন চাহিদামাফিক ও পর্যাপ্ত হয়, অন্যকে সাহায্য করার স্পৃহা তখন আবার ফিরে আসে। তবে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, সহযোগিতার ক্ষেত্রে শুধু ঘুমের সময়ব্যপ্তিটি একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়। আমরা সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক যে ফ্যাক্টরটি পেয়েছি তা হলো ঘুমের গুণগত মান ঘুমানোর সময়ের দৈর্ঘ্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'

এ বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের 'স্লিপ অ্যান্ড সারকেডিয়ান নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক রাসেল ফস্টার বলেন, 'এটিই প্রথম গবেষণা যেটি দ্ব্যর্থহীনভাবে দেখালো যে, ঘুমের অভাব ব্যক্তি পারস্পারিক সহযোগিতার মনোভাব কমিয়ে দিতে পারে।'

তিনি বলেন, 'সমাজের সব পর্যায়ে মানুষের জন্য এ তথ্যগুলো প্রযোজ্য, তবে সুনির্দিষ্টভাবে প্রযোজ্য আমাদের রাতের শিফট, ফ্রন্টলাইন কর্মীদের জন্য। ডাক্তার, নার্স ও পুলিশ অধিকাংশ সময়ই বেশি ক্লান্ত থাকেন। এই গবেষণার তথ্য অনুসারে প্রতিকূল ও প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে তাদের সহযোগিতাসূচক সামর্থ্য হয়ত কমে যেতে পারে।'

অনুবাদ করেছেন মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

15h ago