সকালের নাশতা কেন জরুরি

সকালের নাস্তা করার মাধ্যমে আমরা সারাদিনের কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করি। ছবি: সংগৃহীত

কিছুদিন আগেও সকাল সকাল ভরপেট খেয়ে কাজে বের হওয়া ছিল এদেশের সংস্কৃতির অংশ। ভোরবেলা গ্রামের কৃষকরা ঘরের দাওয়ায় পান্তাভাত আর মরিচ দিয়ে পেট ভরে খেয়ে লাঙল কাঁধে রওনা দিতেন মাঠে। কিন্তু এখন দিন বদলেছে, পাল্টে গেছে সকালের চিত্র।

এখন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা না করে দিনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেন অনেকে। কেউ আবার ব্যস্ততার অজুহাতে সকালের নাশতা না করেই কাজে বের হয়ে পড়েন। সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে রাত জাগার পর ঘুম ভাঙে দেরিতে। তাই অনেকে সকাল আর দুপুরের খাবার একবারে খান। কেউ কেউ আবার ওজন কমাতে সকালের নাশতা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। যদিও নাশতা এড়ালে ওজন কমে- এটি একেবারেই একটি ভ্রান্ত ধারণা। কারণ সকালের দিকে শরীরের বিপাকক্রিয়ার হার বেশি থাকার ফলে যা খাওয়া হয় তা সহজে হজম হয়ে যায়।

সকালবেলা শরীরের ক্যালরিও তাড়াতাড়ি পোড়ে। তাই যারা সকালের নাশতা করেন না, স্বাভাবিকভাবেই তারা দুপুরে অতিরিক্ত খেয়ে নিজের অজান্তে শরীরের ক্ষতি করে ফেলেন। তাছাড়া রাতে খাওয়ার পর অনেকক্ষণ পেট খালি থাকে, তাই সকালে না খেলে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। চলুন জেনে নিই সকালের নাশতা শরীরের জন্য কেন জরুরি-

কর্মশক্তি সঞ্চয়

সকালের নাশতা করার মাধ্যমে আমরা সারাদিনের কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৩ বেলা খাবারের মধ্যে সকালের নাশতা অপেক্ষাকৃত ভারি হওয়া শরীরের পক্ষে ভালো। সকালে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলে কাজ করতে সুবিধা হয়, দুর্বল লাগে না। তাছাড়া সকালের নাশতা তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং ক্যালরি পুড়িয়ে ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।

ওজন হ্রাস পাওয়া

এটি নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। অনেক গবেষণা বলছে, সকালের নাশতা করলে ওজন বৃদ্ধি পায়, না করলে ওজন কমতে থাকে। মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে বলছেন, সকালে নাশতা করা বন্ধ করলে দৈনিক ক্যালরির পরিমাণ হ্রাস পায়। তাই যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য নাশতা খুবই কার্যকর উপায়।

তবে আরেকটি গবেষণা বলছে, সকালের নাশতা ওজন হ্রাস করে। কারণ একবারে দুপুরের খাবার খেলে অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যায়। সকালের নাশতা না করে অনেকে আবার মাঝখানে ফাস্টফুড, বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন, যা ওজন বাড়ায় ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

সকালের নাশতা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নাশতা না করলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শরীরের কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শরীরে অনেক বেশি জীবাণু ও ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া সকালের নাশতা অনেক ধরনের রোগ থেকেও রক্ষা করে আমাদের দেহকে।

মন ভালো রাখে

সকালের নাশতা না খেলে পেটে ক্ষুধা থাকে আর পেটের ক্ষুধা আমাদের মস্তিষ্ককেও উত্তেজিত করে ফেলে। ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কাজে মন বসে না। তাছাড়া সকালের নাশতা মস্তিষ্কের সুখি হরমোন সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। এটি ঘুম ও ক্ষুধার ভারসাম্য ঠিক রাখে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়

সাধারণত সকালের নাশতায় দুধ, রুটি, সবজি,ডিম ইত্যাদি খাওয়া হয়। এ সব খাবারই মস্তিষ্কে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

চলুন এবার জেনে নিই সকালের নাশতা না করলে কী কী শারীরিক ক্ষতি হতে পারে-

হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি: দিনের পর দিন সকালের নাশতা না করলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে পুরুষরা সকালে নাশতা করেন না তাদের ২৭ শতাংশের বেশির হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ পাবলিক হেলথের গবেষণা বলছে, খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে রয়েছে স্বাস্থ্যের নিবিড় যোগাযোগ। প্রায় ৬ বছর ধরে ৪৬ হাজার ২৮৯ জন নারীর ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা যায়, যে নারীদের সকালের নাশতা না করার অভ্যাস আছে তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।

স্মৃতিভ্রষ্টতা ও শক্তির ঘাটতি: সকালের নাশতা না করলে স্মৃতিশক্তি ও শারীরিক শক্তির ঘাটতি দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালের নাশতা করেন না তারা অবসাদে ভোগেন এবং সহজে ভুলে যান। সকালের খাবার এড়ালে শারীরিক শক্তি কমে যেতে পারে, যা স্মৃতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

চুলের ক্ষতি: যারা চুলের যত্ন নেন বা মাথার চুল ধরে রাখতে চান, তারা সকালের নাশতা বাদ দেবেন না। নাশতা এড়ালে শরীরে প্রোটিনের মাত্রা কমে যায়, যা চুলের অন্যতম উপাদান কেরাটিনের মাত্রায় প্রভাব ফেলে। কেরাটিন কমে গেলে চুলের বৃদ্ধি কমে যায়, চুল পড়া শুরু হয়।

হজমশক্তি কমায়: রাতের খাবার খাওয়ার পর থেকে ৮-১০ ঘণ্টা, একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট খালি থাকে। সকালে নাশতা করলে তাই তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়। যারা সকালে নাশতা করেন না বা দেরিতে করেন তাদের পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা খাবার দেরিতে হজম করা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তথ্যসূত্র: বোল্ড স্কাই, বিবিসি   

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

8h ago