অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর

অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর
ছবি: সংগৃহীত

আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই সেগুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ খাবারে অ্যান্টি-নিউট্রিয়েনস্টস প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যায়। অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস হলো এমন কিছু পুষ্টি উপাদান যা শরীরে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের শোষণে বাধা দেয়।

যেমন অক্সালেটকে অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট বলা হয়। কারণ এটি ক্যালসিয়াম এবং কিছু অন্যান্য খনিজ পদার্থের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। তাই সেগুলো শোষিত হতে পারে না।

তাহলে কি আমাদের অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবার বেছে বেছে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে? অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস নিয়ে পুষ্টিবিদ নাঈমা রুমীর দেওয়া কিছু তথ্য তাহলে জেনে নেই।

গ্লুকোসিনোলেটস ও গয়ট্রোজেন

ক্রুসিফেরাস সবজি, যেমন-বাঁধাকপি, ব্রোকলির গ্লুকোসিনোলেটস ও গয়ট্রোজেন শরীরে আয়োডিনের শোষণ রোধ করতে পারে। যা থাইরয়েডের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং এতে ব্যাঘাত তৈরি করে।

যাদের ইতোমধ্যেই আয়োডিনের ঘাটতি বা হাইপোথাইরয়েডিজমের জটিলতা আছে তাদের এসব খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।

কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, গ্লুকোসিনোলেট বেশি গ্রহণের সঙ্গে রোগের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়। গ্লুকোসিনোলেট সাধারণত ক্রুসিফেরাস সবজির মধ্যে পাওয়া যায়।

বেশ কয়েক বছর ধরে পরিচালিত ২টি গবেষণায় দেখা গেছে, গ্লুকোসিনোলেট বেশি গ্রহণ করা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে হৃদরোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি গ্লুকোসিনোলেট কম গ্রহণকারীদের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেড়ে যায়।

লেকটিন

মটরশুঁটি, চিনাবাদাম, সয়াবিনে লেকটিন নামক এক ধরনের অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট থাকে। এটি শরীরে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস ও জিংকের শোষণকে বাধাপ্রাপ্ত করতে পারে।

লেকটিন বেশি পরিমাণে খেলে, অন্ত্রের প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে অন্ত্রে জ্বালাপোড়া, ডায়রিয়া বা বমির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এটি পুষ্টি শোষণ করা থেকে অন্ত্রকে বাধা দিতে পারে।

অক্সালেট

সবুজ শাক-সবজি, চা, মটরশুঁটি, বাদাম, বিটের অক্সালেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এর শোষণ বাধাগ্রস্ত করতে পারে। হেলথ প্রফেশনালস ফলোআপ স্টাডি এবং নার্সেস হেলথ স্টাডি (এনএইচএস) ১ ও ২ এ দেখা যায়, অধিক অক্সালেট গ্রহণের ফলে নারী ও পুরুষ উভয়েরই কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি গড়ে ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।

এতে আরও দেখা যায়, যেসব পুরুষ দৈনিক ৭৫৫ মিলিগ্রামের কম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেছে এবং বেশি অক্সালেট গ্রহণ করেছে, তাদের পাথর হওয়ার ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ বেড়ে গেছে।

ফাইটেটস (ফাইটিক এসিড)

শস্য, বীজ, শিম, কিছু বাদামে থাকা ফাইটেটস (ফাইটিক এসিড) আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দিতে পারে।

খাবার তৈরির সময় ফাইটেটসের পরিমাণ কমানো যেতে পারে। সঠিক উপায়ে রান্না করা, পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখা, অঙ্কুরোদগম, গাঁজন এবং আচার ফাইটিক এসিডকে ভেঙে দিতে পারে।

কোলনের কিছু প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়াও ফাইটেটস ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে।

স্যাপোনিন

গোটা শস্যের স্যাপোনিন পুষ্টি উপাদান শোষণে বাধা তৈরি করতে পারে। বেশি মাত্রার স্যাপোনিন গ্রহণ করলে পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, বমি ও বমিভাব হতে পারে।

ট্যানিন

চা বা কফিতে থাকা ট্যানিন আয়রন শোষণ কমাতে পারে। সুপারি, বাদাম, ভেষজ চায়ের মতো ট্যানিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সঙ্গে খাদ্যনালীর ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে বলে জানা গেছে।

অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস বিভিন্ন খাবারের পুষ্টির শোষণকে প্রভাবিত করে। তাই এই ঝুঁকি কমাতে খাদ্য তালিকায় বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এছাড়া সারাদিন বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে সুষম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন- সকালের নাস্তায় দুধের সঙ্গে ২ কাপ সিরিয়াল খাওয়ার পরিবর্তে, এক কাপ সিরিয়াল ও এক কাপ ফল বেছে নিতে পারেন।

তবে মনে রাখবেন, অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস গ্রহণে কিছু উপকারিতাও আছে। যেমন-ফাইটেট কোলেস্টেরল কমাতে, হজম প্রক্রিয়া ধীর করতে সাহায্য করে। তাই এগুলোকে সম্পূর্ণভাবে এড়ানো বাঞ্ছনীয় নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

5h ago