তপুর পাট পাতার চা

তপুর পাট পাতার চা
পাট পাতা। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে টাঙ্গাইলের আগ এলাসিন গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন তপু যুক্তরাষ্ট্রে যান। চাকরির পাশাপাশি সেখানে তিনি বিকল্প ওষুধ নিয়ে পড়াশোনা করেন। দেশে ফেরার পর তিনি নিজ গ্রামে কালিজিরা, ত্রিফলা (আমলকি, হরিতকি ও বহেরা) এবং সজিনাসহনানা ভেষজ সামগ্রী নিয়ে কাজ শুরু করেন।

এই সময়ে বাংলাদেশে পাটের বহুমুখী ব্যবহার দিন দিন বাড়তে থাকে। এর এক সংযোজন পাট-পাতার চা।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) বিজ্ঞানীদের মতে, এই ভেষজ পানীয়তে পালং শাকের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি ক্যালরি আছে। এতে আরও আছে আয়রন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

২০১৪ সালে তপু পাট পাতা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের পূর্বপুরুষরা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যেসব ভেষজ ব্যবহার করতেন আমি সেগুলো নিয়ে আগ্রহী ছিলাম। তবে আমি "সবুজ চা"র উপকারিতা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারি, যা পাট পাতা থেকে হতে পারে।'

তপুর পাট পাতার চা
টাঙ্গাইলে জাকির হোসেন তপুর পাট পাতার চায়ের কারখানা। ছবি: স্টার

তপু এরপর খাদ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠান 'মহিমা প্রোডাক্টস' প্রতিষ্ঠা করেন। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পাট পাতার চা প্রক্রিয়া ও বাজারজাত করে আসছে।

তপু জানান, তিনি দেশীয় পাটের পাতা থেকে সম্পূর্ণ অর্গানিকভাবে ভেষজ পানীয় তৈরি করছেন। গুঁড়ো পাতা পুরোপুরি স্বাস্থ্যকর। সেগুলো আধুনিক টি ব্যাগ আকারে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে।

তিনি ঢাকার জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) এ পণ্য বিক্রি করেন। স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা জেডিপিসি বাংলাদেশে পাটের ব্যবহারের প্রচার ও বহুমুখীকরণের কাজ করে। জেডিপিসির মেলায় তপুর ভেষজ চা নিয়মিত প্রদর্শিত হয়।

ঢাকা ও টাঙ্গাইলসহ দেশের অন্যান্যস্থানে পাট পাতার এই পানীয় পাওয়া যায়।

জেডিপিসির পরিচালক (বাজার গবেষণা ও উন্নয়ন) সীমা বোস অধরা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে অতিথিদের উপহার হিসেবে তপুর পাটের চা পাঠানো হয়েছিল।'

'উপকারিতার কথা বিবেচনা করলে পাট-পাতার পানীয়টির সম্ভাবনা অনেক' উল্লেখ করে তিনি জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরাও আমাদের কাছ থেকে পাট-পাতার চা কিনছেন।

তিনি মনে করেন, পণ্যটির প্রসারের জন্য আরও প্রচার প্রয়োজন। এর রপ্তানির সম্ভাবনাও অনেক।

তপুর পাট পাতার চা
তপুর কারখানায় পাট পাতার চা প্যাকেটিংয়ের কাজ। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইলে তপুর কারখানা ঘুরে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক শিফটভিত্তিক কাজ করছেন। কারখানার কাছে জমিতে পাট চাষ করা হয়। পরিপক্ব পাটের পাতা সংগ্রহ করে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার পর নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শেডের নিচে শুকানো হয়।

সবশেষে চা বানানোর জন্য শুকনো পাতা মেশিনের ভেতরে রাখা হয়। এরপর সেগুলোকে টি ব্যাগে ভরে প্যাকেটজাত করা হয়। প্রতি প্যাকেটের দাম ২০০ টাকা। একটি প্যাকেটে ৩০টি টি-ব্যাগ থাকে।

টাঙ্গাইলের উদ্যোক্তা ফোরামের সদস্য মির্জা মাসুদ রুবেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের উদ্যোগকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উৎসাহিত করা উচিত। পাট-পাতার চা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করে।'

টাঙ্গাইলের বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্রের সেন্টার ইনচার্জ মোহাম্মদ মেহের হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাকির হোসেন তপু এখন দেশের একমাত্র পাট চা উৎপাদনকারী। পণ্যটির আরও প্রচার প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'এর আগে, পণ্যটির প্রচারের জন্য সরকারি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাটের চা দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়নের অনুরোধ করা হয়েছিল।'

Comments

The Daily Star  | English

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

3h ago