গর্ভাবস্থার শেষ ৩ মাসের সতর্কতা ও খাদ্য তালিকা

গর্ভাবস্থার শেষ ৩ মাসকে বলা হয় থার্ড ট্রাইমেস্টার বা তৃতীয় ত্রৈমাসিক কাল। এ সময় একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হবে চলুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইশরাত জেরিনের কাছ থেকে তা জেনে নিই।
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

গর্ভাবস্থার শেষ ৩ মাসকে বলা হয় থার্ড ট্রাইমেস্টার বা তৃতীয় ত্রৈমাসিক কাল। এ সময় একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হবে চলুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইশরাত জেরিনের কাছ থেকে তা জেনে নিই।

ডাক্তার ইশরাত জেরিন জানান, রক্ত জমাট বাঁধার জন্য ভিটামিন কে অপরিহার্য, যা প্রসবের পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই থার্ড ট্রাইমেস্টারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যাতে সন্তান জন্মদানের সময় এই ভিটামিনের ঘাটতি না হয়।

ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারের মতো রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করার জন্য আপনার থার্ড ট্রাইমেস্টারেও আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। আপনি যদি রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হন এবং এই অবস্থার চিকিৎসা না করা হয় তাহলে সময়ের আগেই প্রসব হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় শেষ ৩ মাসে শিশুর ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। এজন্য এই সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারের তুলনায় এ সময় ক্যালরি চাহিদাও কিছুটা বেড়ে যায়। তাই এ সময় অন্তত ৪০০ ক্যালরি অতিরিক্ত গ্রহণ করতে হবে।

চর্বি ও অন্যান্য যেসব খাবার দ্রুত ওজন বাড়ায় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এই সময় ডাক্তার মা ও শিশুর ওজনের ওপর ভিত্তি করে ডায়েট গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদি শিশুর ওজন প্রয়োজনের চেয়ে কম হয় তাহলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

শেষ ৩ মাসের খাদ্য তালিকা

এই সময়টাতে শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পুষ্টির চাহিদা বেড়ে যায়। আর এজন্য গর্ভবতী মাকে এ সময় অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

● থার্ড ট্রাইমেস্টারে রক্তস্বল্পতা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বেশি বেশি আয়রনযুক্ত খাবার খেতে হবে। বাদাম, কলা, ডাবের পানি, পালং শাক, মটরশুঁটি, মসুর ডাল, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। সর্বাধিক পরিমাণে আয়রন শোষণে প্রয়োজন ভিটামিন সি। সাইট্রাস ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।

● এ সময় ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডির চাহিদা বেড়ে যায়। ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার যেমন- ডিমের কুসুম, গরু ও খাসির কলিজা, মাশরুম, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। সেইসঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট গায়ে রোদ লাগাতে হবে৷

● শিশুর হাড়কে মজবুত করার জন্য প্রয়োজন ক্যালসিয়াম। ডেইরি মিল্ক, ব্রকলি, বাদাম,দই ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামের যোগান দিতে পারে।

●  এ সময়ে প্রয়োজন বাড়তি ক্যালরি। কিসমিস, খেজুর ইত্যাদি শুকনো ফল যোগান দেবে বাড়তি ক্যালরির।

●  মাছ, ডিম, ডাল ও অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাবার কতটুকু পরিমাণে খেতে হবে সেটা নির্ভর করবে শিশুর ওজনের ওপর। ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর ওজন জানার পর প্রোটিন জাতীয় খাবার কতটুকু পরিমাণে খেতে হবে সেটা নির্ধারণ করে দেবেন।

●  এ সময় খেতে হবে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে। বাদামি চাল, শাকসবজি, মটরশুটি, নারিকেল, কাজু বাদাম, চিনাবাদাম ইত্যাদি খাবারে ফাইবার আছে।

●  এ সময়ে বাড়তি পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়

গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন-

● কাঁচা বা আধাসেদ্ধ শাকসবজি গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়। খাবারের কারণে বদহজম যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই শাকসবজি খেতে হবে কিন্তু সেটা তাজা ও ভালোভাবে রান্না করা হতে হবে।

● যেহেতু গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে থার্ড ট্রাইমেস্টারে উচ্চ রক্তচাপের একটা ঝুঁকি থাকে তাই খুব বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। তাছাড়া লবণ ও অন্যান্য লবণযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার ফলে পায়ে পানি আসতে পারে।

●  এ সময় ঝাল, ঝাঁঝালো, তৈলাক্ত ও ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়।

●   গর্ভাবস্থায় উচ্চ শর্করা জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে। তাই মিষ্টি, মিষ্টি জাতীয় খাবার অথবা উচ্চ শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়।

তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা ধরনের। তাই গর্ভধারণের পর খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।

 

Comments