মাইগ্রেনের লক্ষণ ও কারণ, চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন

ছবি: সংগৃহীত

জীবনে কোনোদিন মাথাব্যথা হয়নি এমন লোক বোধহয় খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। অনেকেই প্রায়ই মাথা ব্যাথার যন্ত্রণায় ভুগে থাকেন। মাঝেমাঝেই মাথার বাম পাশে কিংবা মাথার পিছন দিকটায় ব্যাথা করতে পারে। মাথা ব্যাথার একটা বড় কারণ হলো মাইগ্রেন। তবে এটি কোনো সাধারণ মাথা ব্যাথা নয়।

মাইগ্রেন নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন ল্যাবএইড হাসপাতালের স্নায়ুরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনসুর আলী।

মাইগ্রেন কী

মাইগ্রেন হলো মাথার একপাশে কম্পন দিয়ে মাঝারি বা তীব্র ধরনের ব্যথা। কখনো কখনো এই ব্যথা মাথার একপাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ওই পাশের পুরো স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আবার মাইগ্রেনের সমস্যায় কখনো কখনো ব্যাথার সঙ্গে দৃষ্টি বিভ্রম বা বমি বমি ভাবও থাকতে পারে।

মাইগ্রেন হওয়ার আগে শরীর আমাদের কিছু সতর্কবার্তা দেয়, তার মধ্যে একটি হলো চোখে হঠাৎ করে আলোর ঝলকানির মতো দেখা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাইগ্রেনের কোনো পূর্ব লক্ষণ থাকে না। এ ধরনের মাইগ্রেনই বেশি দেখা যায়।

আবার আরেক ধরনের মাইগ্রেন আছে, যাকে বলা হয় সাইলেন্ট মাইগ্রেন। এ ধরনের মাইগ্রেনের আবার পূর্ব লক্ষণ থাকলেও কোনো মাথা ব্যথা থাকে না।

মাইগ্রেনের লক্ষণ

মাইগ্রেনের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাথার যেকোনো একপাশে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের ব্যথা। অনেক সময় ব্যথার তীব্রতা এত বেশি হয় যে বমি বমি ভাবও হতে পারে।

অনেকের আবার এসব লক্ষণ-উপসর্গ ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ থাকে। যেমন- ঘাম, মনোযোগহীনতা, অনেক বেশি গরম বা অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভব হওয়া, পেট ব্যাথা বা ডায়রিয়া। এসব লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দেখতে পান বা যদি মনে হয় এই লক্ষণগুলোর কোনোটি আপনার মধ্যে আছে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মাইগ্রেন কেন হয়

মাইগ্রেন কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে কিছু  বিষয়কে মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন-

মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রম

যখন স্নায়ু ব্যবস্থা, শরীরের রাসায়নিক উপাদান এবং রক্তনালিকে আক্রান্ত করে ফেলে, তখনই এই ধরনের তীব্র ব্যথা মাথার একপাশে অনুভূত হয়। মনে করা হয়, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রম মাইগ্রেন হওয়ার বড় কারণ।

হরমোনজনিত পরিবর্তন

চিকিৎসকদের মতে ঋতুচক্রের সময় নারীরা বেশি মাইগ্রেনে ভোগেন। আবেগ বা অন্যান্য কারণ ও মাইগ্রেনের পেছনে ভূমিকা রাখে। যেমন: মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হঠাৎ পাওয়া আঘাত ইত্যাদি।

শারীরিক কারণ

শারীরিক বিভিন্ন কারণেও অনেক সময় মাইগ্রেন হতে পারে। যেমন: ঘুম কম হওয়া বা রাতে ঘুম না হওয়া, হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা ইত্যাদি।

পরিবেশগত কারণ

পরিবেশগত কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে। আপনি যদি হঠাৎ করে গরম থেকে ঠান্ডা বা ঠান্ডা থেকে গরম পরিবেশে যান তাহলে আপনার হঠাৎ করে মাইগ্রেনের সমস্যা শুরু হতে পারে৷

খাবার

আমাদের খাদ্যাভ্যাসও অনেক সময় মাইগ্রেন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। খাবারে অনিয়ম করা, পানিশূন্যতায় ভোগা, মদ্যপান করা, অতিরিক্ত চা বা কফি পান করা এসব নানা ধরনের অনিয়ম মাইগ্রেন হওয়ার পেছনে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। 

মাইগ্রেনের চিকিৎসা

এক কথায় বলতে গেলে মাইগ্রেনের আসলে সে ধরনের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে থেকে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন মাইগ্রেনকে এড়িয়ে চলতে অনেকাংশে সাহায্য করে।

  • প্রতিদিন একই সময় ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে
  • প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পরিমিত ঘুম হতে হবে
  • অতিরিক্ত বেশি আলো বা অতিরিক্ত কম আলোতে কাজ করা যাবে না
  • তীব্র ঠান্ডায় অথবা অতিরিক্ত রোদে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
  • স্বাভাবিক শব্দের চেয়ে বেশি শব্দ অথবা অতিরিক্ত ফলাফল পূর্ণ এলাকা পরিহার করতে হবে
  • মোবাইলের সামনে থাকা যাবে না
  • এরপরেও মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং মাথায় ঠান্ডা কাপড় জড়িয়ে রাখুন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

  • যদি ঘন ঘন বা তীব্রভাবে মাথাব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
  • তীব্র মাথাব্যথার সঙ্গে যদি বমি বমি ভাব হয়
  • ১ মাসে যদি ৫ বারের বেশি মাইগ্রেনের ব্যথায় ভোগেন
  • মুখ বা হাতের যেকোনো এক অংশ যদি প্যারালাইসিস হয়ে যায় বা যদি শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • কথা বলার সময় যদি কথা অস্পষ্ট হয় বা যদি কথা ভেঙে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
  • এ ছাড়াও মাথাব্যথার সঙ্গে যদি তীব্র জ্বর থাকে, এর আগে হয়নি এরকম তীব্র মাথা ব্যথা হঠাৎ করে দেখা দেয় সেক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আপনার যদি মাইগ্রেন থাকে তাহলে উচ্চ মাত্রার ব্যথা নাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। এটি সাময়িক সময়ের জন্য আরাম দিলেও ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে মাইগ্রেনের চিকিৎসাকে অনেক বেশি কঠিন করে তোলে। তাই মাইগ্রেন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

Comments

The Daily Star  | English

Technical education hit by teacher shortage, falling enrolment

Bangladesh’s technical education sector is facing a slow-burning crisis, shaped by a severe shortage of teachers, poor infrastructure, and steadily declining student interest.

11h ago